রমজান সিয়ামের মাস, কুরআন নাযিলের মাস,খায়ের ও বরকতের মাস



আলোকিত বার্তা:রমজান সিয়ামের মাস। কুরআন নাযিলের মাস। খায়ের ও বরকতের মাস। তাকওয়া অর্জনের মাস। আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস। নেকী হাছিলের মাস। তারাবী, তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াতের মাস। ইতিকাফের মাস। শবে কদরের মাস। গুনাহ তরক করার মাস। ক্ষমা লাভের মাস। প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরার মাস। সংযম সাধনার মাস। ভ্রাতৃত্ব চর্চার মাস। ক্ষমা, উদারতা ও সহানুভূতির মাস।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বনী আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে, ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ, এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তবে রোযার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোযা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকে। রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ। এক. ইফতারের মুহূর্তে, দুই. রবের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তে। আর রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম। (সহিহ মুসলিম-১১৫১)
হযরত সাহল ইবনে সা‘দ (রা.) থেকে বর্ণিত, জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে শুধু রোযাদাররা প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে, রোযাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। যখন তাঁরা প্রবেশ করবে তখন ওই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং সেই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। (সহিহ বুখারী- ১৮৯৬)
রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় নাÑ ১. রোযাদারের দুআ ইফতার করা পর্যন্ত। ২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দুআ। ৩. মাজলুমের দুআ। আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেন। এর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। (জামে তিরমিযী-৩৫৯৮)
রোযা রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি; সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ-৬৬২৬)
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রতিদিন ইফতারের সময় অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দেয়া হয় এবং এটা প্রতি রাতে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৪৩) রমজানুল মুবারকের শুরুতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়।
রমজানুল মুবারকের আরেকটি ফযীলতের কথা এসেছে একটি হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং (পুরো রমজান) এর একটি দরজাও আর খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং (রমযানে) এর একটি দরজাও আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ অন্বেষী! নিবৃত্ত হও, নিয়ন্ত্রিত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে। (জামে তিরমিযী-৬৮২)