পুলিশের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলার হুমকি ছাত্র-জনতা সাবধান !



মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া : ইনু-শাজাহান খানের ঔদ্ধত্য, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা,জাসদের ঝাঁকের কৈ ঘরে-বাইরে ,পুলিশের হেফাজত থেকে পুলিশের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলার হুমকি ছাত্র-জনতা সাবধান !। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র নামে তাহের সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের যে ১৩ দফা দিয়েছিল; হাসানুল হক ইনু ও শাজাহান খান ছিলেন সেই সংস্থার লোক। প্রশাসনে একাধিক উপদেষ্টা ও বর্তমান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেও গণবাহিনীর লোক রয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসানুল হক ইনু গণবাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেন। কেউ লিখেছেন, একাধিক উপদেষ্টা ও পুলিশের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সে সময় ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ ‘গণবাহিনৗ’ ও জাসদের রাজনীতি করায় ইনু-শাজাহান খানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।তোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলব’ আদালতে নেয়ার সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হাসানুল হক ইনু-শাজাহান খানের এই হুমকি দু’-তিন দিন থেকে টক অব দ্য কান্ট্রি। নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দুই আসামির ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও শাজাহান খানের হেলমেট ছুড়ে ফেলার দৃশ্য। নেটিজেনরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ সাবেক এই দুই মন্ত্রীর আচরণ সিদ্দিকুর রহমান (বাংলা ভাই) ও শায়খ আবদুর রহমানের চেয়েও ভয়ঙ্কর হিসেবে অভিহিত করেছেন। কেউ বলছেন, এরা গণবাহিনীর লোকÑ তেমন আচরণ করছেন। নেটিজেনদের কেউ এদের ডা-াবেড়ি পরিয়ে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন; কেউ পুলিশের হেফাজত থেকে পুলিশের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলার হুমকি দেয়ায় অপরাধে মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ লিখেছেন, হাসানুল হক ইনু ও শাজাহান খান জাসদের কর্নেল (অব.) আবু তাহের বীরউত্তমের অনুসারী ছিলেন। হাসিনা রেজিমের ১৫ বছর জাসদের হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের শাজাহান খান ছিলেন বেপরোয়া। ইনু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, এমনকী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কারণে-অকারণে গালিগালাজ করতেন। মন্ত্রী করার পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনাকে খুশি করতে ইনুর নিত্যকাজ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়া।
দিল্লির সেবাদাস কিছু গণমাধ্যমে সে বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করত। আর পরিবহন সেক্টরের নেতা হওয়ায় শাজাহান খান অশ্রাব্য ভাষায় কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। হাসিনাকে খুশি করতে ২০১৪ সালের সংসদ পাতানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসার সামনে বালুর ট্রাক রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন শাজাহান খান। কয়েক শ’ পরিবহন শ্রমিককে দিয়ে তিনি ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঠেকিয়ে দেন। সে ঘটনায় মামলায় পুলিশের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও রহস্যজনকভাবে শাজাহান খানের নাম আসামির তালিকায় রাখা হয়নি।এই শাজাহান খান ও হাসানুল হক ইনুরা কার্যত জাসদের কর্নেল (অব.) তাহেরের অনুসারী। সেই তাহেরের আরো কয়েকজন অনুসারী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে (পশ্চিমাদের টাকায় এনজিওর মাধ্যমে তাদের কেউ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন কেউ মানবাধিকার রক্ষা) রয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদেও জাসদের তাহের অনুসারী রয়েছেন। ১৯৭৫ সারের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবে তাহেরের ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র সদস্য ছিলেন এই ইনু গংরা। ক্যান্টনমেন্টে খালেদ মোশাররফের বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের সময় জওয়ানদের সঙ্গে অস্ত্রসহ জাসদের অনেকে বেসামরিক পোশাকেও অংশ নেন। ‘বিপ্লব’ সফলতার পর কর্নেল তাহের দেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে জিয়াউর রহমানকে দিয়ে রেডিওতে গণবাহিনী প্রণীত ১৩ দফা ঘোষণা করাতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে দীক্ষিত গণবাহিনীর কর্নেল তাহেরের অনুরোধ রক্ষা করেননি। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধ্বংষের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে রেডিওতে ভাষণ দিতে যাননি। সে সময় এই ইনু-শাজাহান খান, মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত উপদেষ্টা এবং বর্তমানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাহেরের সঙ্গী ছিলেন। তারা ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ ও ‘গণবাহিনীর’ সক্রিয় নেতাকর্মী ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ স্বপ্নে বিভোর হয়ে সেদিন স্লেøাগান দিয়েছেনÑ ‘সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই’। বাস্তবতা হচ্ছেÑ বিশ্বের কোনো দেশে আধুনিক সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক সংশ্রব সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সেই জায়গায় সেই সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র সেনাবাহিনীতে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে বাহিনীকে ধ্বংসের চক্রান্ত করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সাহসী সিদ্ধান্তে সেদিন সেনাবাহিনী রক্ষা পায়। কর্নেল তাহেরের অনুরোধে জিয়া সেদিন রেডিওতে ১৩ দফা ঘোষণা করলে আজকের সেনাবাহিনী এই অবস্থায় থাকত না।
২০ জুলাই জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। হাতকড়া পরানোয় আসামি হাসানুল হক ইনু দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের হুমিক দেন ‘রাজাকারের বাচ্চা, তোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলব’। শাজাহান খান হুঙ্কার দেন, ‘তোদের নাম নোট করে রাখলাম। রাজাকারের বাচ্চারা। তোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী দেখে নেবো।’ আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে আদালতকে শাহজাহান খান বলেন, ‘গাড়ি থেকে নামানোর আগে হাতকড়া ও হেলমেট পরানো হয়েছে। আগে ট্রাইব্যুনালে আনার সময় হাতকড়া পরানো হয়নি। আজ এজলাসেও হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়। আমরা মর্যাদা পেতে চাই।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতকে জানান, ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যেভাবে আসামিদের আদালতে আনা হয়েছে সেভাবেই এবারো আসামিদের আনা হয়।’ পুলিশ, আসামি ও আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত ইনু-শাজাহান খানের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা মন্ত্রী ছিলেন। আপনারা ব্যবহার জানেন। পুলিশ জেলকোড অনুযায়ী কাজ করবে। আপনাদের ব্যবহার ঠিক করতে হবে। পুলিশকে বলব শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেবেন, বাড়াবাড়ি করবেন না। যদি কোনো আসামি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আর পুলিশও যাতে আসামিদের আদালতে আনা নেয়ার সময় বাড়াবাড়ি না করে সেদিকেও খেয়াল রাখবে আদালত।’ কয়েকজন আইনজীবী জানান, ইনু ও শাজাহান খান আদালতে আসার সময় পুলিশের সঙ্গে যে অভদ্র ও মস্তানি করেছেন এমন আচরণ অতীতে কেউ করেননি। এর আগে গুমের হোতা জিয়াউল আহসানও এমন সন্ত্রাসী আচরণ পুলিশের সঙ্গে করেছে।ইনু-শাজাহানা খানদের এমন আচরণে অবশ্য মানুষ অবাক হননি। এরা মন্ত্রী-এমপি পদে থেকে যেমন আচরণ করেছেন; কারাগারে বন্দি থেকেও তেমনি করছেন।
ইনু-শাজাহান খানদের রাজনৈতিক চরিত্র এমন অভদ্রজনিত। তারা এখন কারাগারে থেকেও তাদের সাবেক জাসদের রাজনৈতিক সঙ্গী বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ও প্রশাসনে কর্মরতদের ব্যবহার করে ‘সুবিধা’ নিতে তদবির করছেন। জাসদ, গণবাহিনী, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থাÑ এগুলো কার্যত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে দীক্ষিত। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার সঙ্গে যায় না। প্রবাদে রয়েছেÑ ‘প্রথম প্রেম মানুষ ভুলতে পারে না’। ছেলেবেলায় যারা জাসদ, গণবাহিনী, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছেন; এখন তারা যেখানেই থাকুক চেতনায় তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী রয়ে গেছেন। সুবিধাবাদের ¯্রােতে ভেসে নানা ধারায় ছড়িয়ে পড়লেও চেতনায় তারা গণবাহিনীর মতো হিং¯্রই রয়ে গেছেন। তারা যেখানে থাকুক, ‘প্রথম প্রেম’ গণবাহিনী ও জাসদের সঙ্গীদের তারা ভুলতে পারছেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে, বাইরে এবং কারাগারে পরিত্যক্ত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অনেক সৈনিক ছড়িয়ে রয়েছেন। সুযোগ পেলে এরা পুরনো রূপ ধারণ করতে পারে। অতএব সতর্ক থাকতে হবে; এদের থেকে সাবধান!