নেপথ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছে যে রাষ্ট্র ,সরকারকে বেকায়দায় ফেলার - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বিপুর বিপুল লুটপাট,পাহারায় উপদেষ্টার স্বামী ! ২৩ লাখ মৃত ভোটার,নতুন ভোটার ৬৩ লাখ সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছাত্র-জনতার গণহত্যায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পুরস্কৃত হচ্ছেন বিতর্কিতরা, বিবেচনায় নেই স্বৈরাচারবিরোধী অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীরা চুরি, ডাকাতি, অপহরণ,অবৈধ দখলদারির সহ বিভিন্ন মামলা থাকা সত্ত্বেও দেশকে অস্থিতিশীল করার মাষ্টার মাইন... কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি দেশে শক্তিশালী উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সবাই কার্যকর অবদান রাখবেন বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ ১০-এ নেই রাজধানী ঢাকা নির্বাচন ঘিরে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

নেপথ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছে যে রাষ্ট্র ,সরকারকে বেকায়দায় ফেলার


নুর নবী জনী: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা।সেখানে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানিসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের ইস্যুকে সামনে রেখে বাম রাজনৈতিক দল এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামানো হচ্ছে। এজন্য বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, এর নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছে আমাদের বন্ধুপ্রতিম একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র।সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত মুখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে বেশির ভাগ বাম দল একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। এজন্য বাম দলগুলোকে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের জোটবদ্ধ আন্দোলন করার বহু নজির রয়েছে। এছাড়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের কাছে প্রথম পছন্দের দল আওয়ামী লীগ হলেও বিকল্প পুঁজি হচ্ছে বাম দল। আওয়ামী লীগ এবং বাম দলগুলোকে দিয়ে তারা নানা কৌশলে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। আওয়ামী লীগ এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ায় বাম সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে নামানো হচ্ছে।এদিকে হঠাৎ করে বামপাড়ার দলগুলো এবং গণজাগরণ মঞ্চের কুশীলবদের এভাবে রাজপথে সক্রিয় হওয়া নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশেষ করে গত বছরের জুন-জুলাই-আগস্টজুড়ে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে যাদের মাঠেই দেখা যায়নি, সেই বামরাই হুট করে এখন কেন রাজপথে সরব ও সক্রিয়। কিন্তু কেন-গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা দেশের বেশির ভাগ মানুষ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত।

গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এ প্রসঙ্গে রোববার বলেন, বাম দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি বেশ পুরোনো। তাদের বিরুদ্ধে সুবিধাবাদী রাজনীতি করার অভিযোগও প্রতিষ্ঠিত। কিছু বাম দল যেমন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, এখনো আছে। তেমনই কিছু বাম দল আবার বিএনপির সঙ্গেও আওয়ামী লীগবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, এখনো আছে। আবার কিছু বামপন্থি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় মেরূকরণের বাইরে নিজস্ব শক্তির বিকাশে কাজ করছে। তাই ঢালাওভাবে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না। তবে এটা ঠিক, বামপন্থি অনেক দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পুরোনো এবং ঐতিহাসিক সখ্য রয়েছে। সুবিধাবাদী রাজনীতির অংশ হিসাবে তারা আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করেছে, আওয়ামী লীগের বদান্যতায় মন্ত্রী-এমপি হয়েছে। নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খণ্ডন করে দলটির সাধারণ সম্পাদক সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স রোববার বলেন, ঢালাওভাবে এসব অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত এবং পরিকল্পিত অপপ্রচার। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই আমাদের কাছে এ অভিযোগ একেবারেই গুরুত্বহীন। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের যে চেতনা, এর মূলে রয়েছে বৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরও মূল চেতনা ছিল। আমরা মনে করি, বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার যে লড়াই, সেই লড়াই অব্যাহত রাখতে বাম বিকল্প শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উত্তরণ এবং জনজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তায় চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ চরম অস্তিত্ব সংকটে। দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতের দিল্লিতে। তাকে অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ অধিকাংশ শীর্ষ নেতাও এখন ভারতের মাটিতে ঠাঁই নিয়েছেন। রাজনীতির ঘোর অমানিশায় থাকা এ দলটির সাবেক মন্ত্রী ও নেতারা এখন সেখানে বসেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ছক কষছেন। তাদের মূল চাওয়া, কারণে-অকারণে দেশকে অস্থিতিশীল রাখা। সাধারণ মানুষের স্বাভাভিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করা। আর এ চাওয়া পূরণে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা তাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সুহৃৎ বলে বিবেচিত দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর ঘাড়ে সওয়ার হয়েছেন। নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাদের কাজে লাগাতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে ধর্ষণবিরোধীসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের রাজপথের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে নামতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। এজন্য বিদেশের মাটিতে থেকেই প্রয়োজনীয় অর্থেরও জোগান দিচ্ছেন তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, গণ-আন্দোলনের মুখে পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ মদদেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের নামে বামপন্থিদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ, জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন মোড়। সামনে বামপন্থিদের দেখা গেলেও পেছনে রয়েছে মূলত আওয়ামী লীগ। আর এ তৎপরতায় পার্শ্ববর্তী একটি দেশের সায়ও রয়েছে। তারাই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের দুই প্রধান দলের একটি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, আরেকটি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এ দুই দলের দুই শীর্ষ নেতা হলেন রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতিক নৌকা নিয়ে কখনো রাতের ভোটে, আবার কখনো দিনের বিনা ভোটে সংসদ-সদস্য হন। এমনকি টানা পাঁচ বছর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন তারা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচারের দোসর হিসাবে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বামদের সামনে রেখে জনসমর্থিত দাবি নিয়ে ওই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াই আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য ছিল, এতে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিত, তা আগেই টের পেয়েছেন তারা। এ কারণে আগে থেকেই শহিদ মিনার এলাকায় নজরদারিতে রাখা হয়। পুলিশের একাধিক সূত্রও বলছে, এ কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের’। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইনকিলাব মঞ্চসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-যুব সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও নিয়মিত রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

Top