অর্থ শোধ বেড়েছে দ্বিগুণ সুদ সাড়ে ৪ গুণ,সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণ - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
প্রাথমিকে পোষ্য কোটা বাদ, মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ কোনো অবৈধ বিদেশির জায়গা হবে না বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি পরিবর্তন হলেও আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা হেড অফিসে রয়েছে বহাল তবিয়তে এিপুরা , কাশ্মীরসহ ভারতের বিরোধীপূর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি এিপুরা , কাশ্মীরসহ ভারতের বিরোধীপূর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি এিপুরা ,কাশ্মীরসহ ভারতের বিরোধীপূর্ণ বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি এবার বিআরটি লেইনে গুলিস্থান হয়ে গাজীপুর চলাচল করবে বিআরটিসির এসি বাস ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত অবসরপ্রাপ্ত সেনারা,ভারতের সঙ্গে আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয় অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের প্রেতাত্মারা এখনো অবস্থান করছে থেমে আছে গ্রেফতারের উদ্যোগ

অর্থ শোধ বেড়েছে দ্বিগুণ সুদ সাড়ে ৪ গুণ,সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণ


ডা.মুন্সী মুবিনুল হক:বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বাংলাদেশে গত ৬ বছরে সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ। একই সময়ে বৈদেশিক ঋণের মূল অর্থ পরিশোধও বেড়েছে দ্বিগুণ।আলোচ্য সময়ে বেপরোয়াভাবে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ ও বৈশ্বিক মন্দায় আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ওই খাতে ব্যয় বেড়েছে। টাকার হিসাবে খরচ বেড়েছে আরও বেশি। এ সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৫৫ শতাংশ। ফলে প্রতি ডলারে ওই হারে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।এতে ডলারের পাশাপাশি টাকার ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। গত সরকারের আমলে অর্থনীতিতে এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও এখনো চলমান। যা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছরের নতুন ঋণ গ্রহণ কমিয়ে দেওয়ায় মূল অর্থ ও সুদ পরিশোধও কমে আসছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে স্বল্পমেয়াদি ঋণের মূল অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬০ কোটি ১৩ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছিল ৫২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সহজ শর্তেও ঋণ কমে আসছে। ফলে এ খাতে পরিশোধও কমে আসছে।

সূত্র জানায়, সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণের বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে সেবা খাতে। এসব ঋণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে এমন কোনো খাতে ব্যবহার করা হয়নি। বৈদেশিক ঋণের বেশ কিছু অর্থ দেশে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। উৎপাদন খাতে যেসব অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবই গেছে দেশীয় খাতে। রপ্তানি খাতে ব্যবহার হয়নি বললেই চলে। ফলে ওইসব ঋণ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়নি। এতে ঋণ পরিশোধে এখন চড়া দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ২০২২ সালের আগে ডলার বাজার স্থিতিশীল ছিল।প্রতিবছর গড়ে টাকার মান সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হতো। এর মধ্যে ২০২১ সালে টাকার মান বেড়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ওই বছরের শুরুতে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। এপ্রিলে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৩২ টাকায় ওঠে। এখন তা কমে ১২০ টাকায় নেমেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এতদিন প্রতি ডলারে বেশি দিতে হচ্ছে ৪৭ টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থ। তবে এখন দাম কিছুটা কমায় প্রতি ডলারে ৩৫ টাকা বা ৪১ শতাংশ বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদের হার বেড়েছে। আগে সব বৈদেশিক ঋণই নেওয়া হতো লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটে (লাইবর)। এখন লাইবরের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃব্যাংক রেট সোফরে (সিকিউরড ওভার নাইট ফিন্যান্সিং রেট) ঋণ নেওয়া হচ্ছে। লাইবর রেটে সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে সোফার রেট স্থিতিশীল রয়েছে। যে কারণে এখন সোফার রেটে বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। করোনার আগে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটে (লাইবর) ডলারে ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হার ছিল দেড় থেকে ২ শতাংশ। এর সঙ্গে আড়াই থেকে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদ নির্ধারিত হতো।

এ হিসাবে সুদের হার পড়ত ৪ থেকে ৫ শতাংশ। বর্তমানে লাইবর রেট বেড়ে ডলারে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ইউরোতে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছে। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করলে সুদের হার দাঁড়ায় ডলারে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ইউরোতে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৩ শতাংশ যোগ করলে সুদের হার আরও বেশি পড়ে। ফলে ঋণের সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে ঋণের স্থিতি বাড়ছে। এছাড়া ঋণ পরিশোধ মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানোর ফলে বাড়তি সুদের পাশাপাশি দণ্ড সুদও দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে এর বিপরীতে দণ্ড সুদসহ চড়া সুদ দিতে হয়। এ কারণে বাড়তি ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ১১১ কোটি ডলার এবং সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল ২৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে মূল অর্থ পরিশোধ দাঁড়ায় ১১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও সুদ পরিশোধ করা হয় ৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মূল ঋণ ১২৭ কোটি ডলার ও সুদ ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল ঋণ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং সুদ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।

২০২১-২২ অর্থবছরে মূল ঋণ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫২ কোটি ডলার ও সুদ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ওই অর্থবছর পর্যন্ত সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধ বেড়েছে স্থিতিশীল বা সহনীয়ভাবে। কারণ ওই সময়ে ঋণ যেমন একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে বেড়েছে। তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হারও স্থিতিশীল ছিল। ফলে সুদ পরিশোধও স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা।

এতে ডলারের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি সুদের হারও বেড়েছে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ ও সুদ পরিশোধ বেড়ে যায় বেশি মাত্রায়। ওই বছরে মূল ঋণ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে এবং সুদ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৬ থেকে ১৪ কোটি ডলার। এবার বেড়েছে ২১ কোটি ডলার। আগে সুদ পরিশোধ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১ কোটি ডলার। এবার বেড়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলার।

গত অর্থবছরে মূল ঋণ পরিশোধ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২০১ কোটি ডলার ও সুদ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আগের বছরের তুলনায় ঋণ ও সুদ দুইই পরিশোধ আরও বেড়েছে। তবে চলতি অর্থবছর থেকে তা কমে আসবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে। কারণ এখন ঋণ কম নেওয়া হচ্ছে।আগের মতো যেনতেন প্রকল্পে ঋণ নেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া আগে ঋণের অর্থ যেমন পাচার হয়েছে, তেমনি লুটপাট হয়েছে। যার দায় এখন পড়েছে দেশের ওপর। এখন সেসব প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। এতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ খাতে চাপ কমে আসছে। এখন নতুন করে কোনো ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা হচ্ছে না।

Top