আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত ইতিহাস থেকে
আলোকিত বার্তা:আমাদের এ অঞ্চলে যারাই ক্ষমতায় আসে, প্রতিপক্ষের ওপর জুলুম করে। ক্ষমতার পালাবদল হয়, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয় না। আজকে যে মজলুম, কালকেই সে জালেম। কেউ বেশি জুলুম করে, কেউ কম জুলুম করে। কিন্তু জুলুম আছেই। বলি, এভাবে আর কতোকাল? এবার অন্তত জুলুমের ধারা বন্ধ হোক। সমাজে শান্তি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হোক। এভাবে যদি পালাক্রমে আমাদের একপক্ষ আরেকপক্ষের ওপর জুলুম-নির্যাতন করতেই থাকে এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এই ধারা চলতেই থাকে, তাহলে বহিঃশত্রুদের কাছে আমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি শেষ হয়ে যাবে। তখন আমাদের আর কোনো শক্তি থাকবে না।
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই উম্মতের জন্য দুআ করতে গিয়ে বলেছেন : অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যেন তাদের ওপর বাইরের এমন কোনো শত্রু চাপিয়ে না দেন, যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করে দেবে।উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : যে পর্যন্ত না তারা (অর্থাৎ মুসলিমরা) একে অপরকে ধ্বংস করবে ও বন্দি করবে, আমি তাদের ওপর বাইরের এমন কোনো শত্রু চাপিয়ে দেব না, যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে, যদিও বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়ে চেষ্টা করে না কেন। (সহীহ মুসলিম : ২৮৮৯)।ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী (রাহ.) তাঁর ভাষ্যগ্রন্থে এ হাদিসের ব্যাখ্যা করে লিখেছেন : সারকথা এইÑ মুসলমানরা যখন এমনটা করবে তখন তাদের ঐক্য ভেঙে যাবে এবং তারা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই ছেড়ে একে অপরের পেছনে লেগে থাকবে। ফলে শত্রুদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে এবং তারা মুসলমানদের পরাভূত করে ফেলবে। যেমনটা আমরা আমাদের এ যুগে প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে দেখতে পেলাম।প্রাচ্যের (মুসলিম) বাদশারা যখন পরস্পর বিবাদ ও কলহে লিপ্ত হলো তখন তাতারীরা সমগ্র পারস্য (ইরাক) দখল করে ফেলল। আর পাশ্চাত্যের (মুসলিম) বাদশারা যখন পরস্পর দ্বন্দ্ব ও কলহে জড়াল তখন ইংরেজরা সমগ্র আন্দালুস ও পাশর্^বর্তী দ্বীপগুলো দখল করে নিল। আর এখন তো তারা গোটা মুসলিম বিশ্বই গ্রাস করে নেয়ার ইচ্ছা করেছে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ক্ষমা করুন, তাদের প্রতি দয়া করুন এবং তাদের সাহায্য করুন। (আল মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম, আবুল আব্বাস কুরতুবী-৭/২১৮)।
সেজন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন:তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং পরস্পরে বিবাদ করো না। অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব নিঃশেষ হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা আনফাল : ৪৬)। আমাদের এই ভুল কবে ভাঙবে? আর কতোকাল পরে আমরা আল্লাহর দিকে ফিরব?সোশ্যালিজম ও কমিউনিজমের অসারতা বুঝতে ইউরোপীয়দের প্রায় সত্তর বছর লাগল। আর কতো হানাহানি, রক্তপাত ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পর আমরা বুঝতে পারব, আমরা আসলে ভুল পথে চলেছি? এখনো কি সময় হয়নি আল্লাহর দিকে ফিরে আসার? এখনো কি সময় হয়নি আল্লাহর আইনের দিকে প্রত্যাবর্তন করার?ঈমানদারদের কি এখনো সেই সময় আসেনি যে, তাদের অন্তর বিগলিত হবে- আল্লাহর স্মরণের প্রতি এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি? এবং তারা ওদের মতো হবে না, যাদের ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। অতঃপর যখন তাদের ওপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলো, তখন তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল। এবং তাদের অনেকেই (চরম) অবাধ্য। (সূরা হাদীদ : ১৬)।
তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিধান চায়? আর বিশ্বাসী মানুষদের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে আছে? (সূরা মায়িদা : ৫০)। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তওবা করি। আল্লাহর আইনের ছায়ায় একত্রিত হই। সবধরনের জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করি এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পাঠ গ্রহণ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন- আমীন।