বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ১৪ দশমিক ৭৬৯ বিলিয়ন ডলার করতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুদক এক কোটি ৬৩ লাখ বাংলাদেশির ৪৮ বছরে বিদেশে কর্মসংস্থান বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াল বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ তথ্য অধিকার আইনের আওতায় গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে ফল প্রকাশ করা হবে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংঘাত পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে তারিখ থেকেই গণনা করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে


আলোকিত বার্তা:আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের(আইএমএফ)ব্যাংক খাতে দেওয়া একটি কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে জুনের মধ্যে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ঝুঁকি মোকাবিলার রীতি ব্যাসেল-৩ এর মানদণ্ড অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ওই মানদণ্ডে এ সম্পদের তথ্য প্রকাশ করলে তা অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতাও বেরিয়ে পড়বে। এতে ব্যাংক খাত দেশের ভেতরে যেমন ইমেজ সংকটে পড়বে। তেমনি বিদেশেও প্রশ্নবিদ্ধ হবে ভাবমূর্তি। ফলে বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যে বা আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাড়তি ফি বা কমিশন নিতে হবে। এতে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাবে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ থেকে সরকার ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ নিয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছু শর্ত আছে। এর মধ্যে জুনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এটি সাধারণ হিসাবে করলে হবে না। ব্যাসেল-৩ এর নীতিমালার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রকাশ করতে হবে। এখনও ওই নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের হিসাব তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এতে ওই নীতিমালা পুরোপুরি মানা হয় না। একই সঙ্গে সরাসরি ওই সম্পদের হিসাব প্রকাশও হয় না। ওই নীতিমালা মেনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করলে তা অনেক বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন পর্যাপ্ততার তথ্য প্রকাশ করা হয় গড় ভিত্তিতে। একই সঙ্গে ব্যাংকের আয় ও ব্যয়ের তথ্যও প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ বাড়লে একদিকে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাবে। ফলে মূলধন ঘাটতিও বাড়বে। এ দুটো বাড়লে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা আরও বেশি করে প্রকাশ হয়ে যাবে। এতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। তখন অনেক ব্যাংক বিশেষ করে বৈদেশিক এলসি খোলার তৃতীয় পক্ষীয় গ্যারান্টি আরোপ করতে পারে। ফলে গ্যারান্টিদাতা ব্যাংককে বাড়তি কমিশন দিতে হবে। এতে আমদানির খরচ বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। এতে একদিকে ব্যবসায়ীরা যেমন আক্রান্ত হবেন, তেমনি পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে ভোক্তারাও বিপাকে পড়তে পারেন।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাসেল-৩ এর মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের তথ্য তৈরি করছে। এর আলোকে প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতির তথ্যও তৈরি করছে। তাদের মতে, ওই মানদণ্ডে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ খুব বেশি বাড়বে না। দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের বড় অংশই হচ্ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ এখন কমতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোতে তদারকিও বাড়ানো হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণও কমে যাবে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুনের মধ্যেই হয়তো ওই তথ্য প্রকাশ করবে না। আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করে আরও একটু সময় নেওয়া হবে। এ বছরের শেষ দিকে এ তথ্য প্রকাশ করা হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংক খাতের সঠিক চিত্র প্রকাশ করা উচিত। এতে বিভ্রান্তি যেমন দূর হবে, তেমনি ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। আইএমএফের শর্তের কারণে এখন কিছু তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজ থেকেই করা উচিত।দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঋণ বিতরণে জালিয়াতি, নিয়ম মেনে বিতরণ না করার কারণে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ কারণে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে এগুলো হতো না। এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলেই বিভ্রান্তি দূর হবে।ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা এর মধ্যে যেটি বেশি, তা ন্যূনতম মূলধন হিসাবে রাখতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশে প্রতিটি ব্যাংককে আপৎকালীন সুরক্ষা দিতে অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ হারে মূলধন রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এখন ১৪টি ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী মূলধন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন রেখেছে।

এর আগে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী গত বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্র্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে তাদের শর্তে ঋণ পুনঃতফশিলের তথ্য প্রকাশ করা হয়। যা আগে হতো না। এতে ব্যাংক খাতের ভয়ংকর কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ছিল ২০২২ সালে ৬৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বিশেষ ছাড় দিয়ে নবায়ন করা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২১ সালে নবায়ন করা হয়েছিল প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ নবায়ন বেড়েছিল প্রায় পৌনে তিনগুণ। এতেও খেলাপি ঋণের তথ্যে লাগাম টানা সম্ভব হয়নি।আইএমএফের পরামর্শে এখন তিন মাস পরপর জিডিপির হিসাব প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। এর আগে জিডিপির হিসাব নিয়ে আইএমএফ প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের পরামর্শে এখন মূল্যস্ফীতির হিসাবও করা হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার কমছে না, বরং বাড়ছে। এর আগে পণ্যমূল্য বাড়ার পরও মূল্যস্ফীতির হার কমার নজির ছিল। এ নিয়ে আইএমএফও প্রশ্ন তুলেছিল।

তাদের শর্তে ডলারের দাম কিছুটা বাজারভিত্তিক করায় এর দাম বেড়েছে। তারা একে আরও বাজারভিত্তিক করে দাম আরও বাড়াতে বলেছে। ঋণের সুদ হারের করিডর ঘোষণা করায় এর হার বেড়ে যাচ্ছে।এসব অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের ব্যাপারে এখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক হতে হবে।আইএমএফ বলেছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে বা খেলাপি ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রভিশন বা মূলধন রাখতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।ব্যাংকিং খাতের জন্য আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড দ্বারা প্রণীত আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) সিস্টেমস প্রণয়ন করে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর হিসাব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফিরে আসবে এবং আন্তর্জাতিক মানের হবে।ব্যাংকগুলোর হিসাব ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই প্রশ্ন তুলেছে। কারণ তাদের হিসাবে স্বচ্ছতা নেই। এটি বাস্তবায়ন করাও চ্যালেঞ্জিং।

Top
%d bloggers like this: