প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের প্রতি ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেছেন - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের প্রতি ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেছেন


আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের প্রতি ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তহবিলকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।শুক্রবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ২০২৪-এ ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন।প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, আমাদের সঠিক পথে রাখতে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোকে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই বছরের শেষ নাগাদ, আমাদের সবাইকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে বিশেষ করে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে ২০২৫-পরবর্তী একটি নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একমত হতে হবে।দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পালটা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সংঘাতের অনুভূতির বোধ থেকেও অনেক দূরে অনুভূত হয়।তৃতীয় পরামর্শে তিনি বলেন, জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের তীব্র ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান পর্যায় অন্তত দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাত্রেঁদ্ধাকে ধন্যবাদ জানান।চতুর্থ পরামর্শে তিনি বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থ প্রাপ্তি সুগম করার জন্য দীর্ঘকালের অমীমাংসিত সমস্যাটি তাদের সক্ষমতায় বিনিয়োগ করার সুযোগসহ সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের শুধু দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তার পঞ্চম পরামর্শে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণ লাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফলাফল দেখাতে হবে।সর্বশেষ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু কর্মসূচি জন্য বেসরকারি পুঁজি প্রবাহের জন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকল্পগুলোর জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্ভাবনী, মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।তিনি বলেন, এটি সুস্পষ্ট যে, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না।শেখ হাসিনা বলেন, সবাই জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের বর্তমান মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয়, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন এখনও গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত। ‘জলবায়ু অর্থায়ন’-এবং এর অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংজ্ঞার অনুপস্থিতির কারণে এটি আরও জটিল।

শেখ হাসিনার সঙ্গে কাতার ও ডেনিশ প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক : এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখের হোটেল বেয়েরিশার হফের কনফারেন্স হলে শুক্রবার বিকালে কনফারেন্স চেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সম্মেলনে তিনি স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা পারস্পরিক ও বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিত্তে ফ্রেডেরিকসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এছাড়া মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী স্যার নিক ক্লেগ সম্মেলনের সাইড লাইনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।এছাড়া সম্মেলনস্থলে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড পার্টনারশিপ) অ্যাক্সেল ভেন ট্রসেনবার্গ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাসও সম্মেলনস্থলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে উইমেন পলিটিক্যাল লিডারস (ডব্লিউপিএল) সভাপতি সিলভানা কোচ-মেহরিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আবাসভবনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে সাক্ষাৎ করেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

Top
%d bloggers like this: