কে বলেছে তুমি নেই,তুমি আছো অন্তরে-মাহমুদ হোসেন রিপন - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কে বলেছে তুমি নেই,তুমি আছো অন্তরে-মাহমুদ হোসেন রিপন


“দিকে দিকে অশ্রুগঙ্গা, রক্তগঙ্গা বহমান,“নাহি নাহি ভয় তবু হবে জয়, জয় শেখ মুজিবুর রহমান।”আজ শোকাবহ ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময় এক বেদনার এ দিন। ১৯৭৫ সালের এ দিনে বাঙ্গালি হারায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এদিন কাকডাকা ভোরে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বাঙালি জাতির ললাটে এঁটে দেয় কলঙ্কের তিলক। তৈরি করে কালো এক অধ্যায়ের । বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন। জনগণের ভালোবাসাই ছিল তার একমাত্র সম্পদ। যে সম্পদ কেউ কোনোদিন কেড়েও নিতে পারে না পরবে ও না । আর পারেনি বলেই প্রতিবছর ১৫ই অগাস্ট এলেই তা গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন তা শুধু নয়; তাঁর ধ্যান-ধারণায়, অন্তরেও সবসময় বাঙালীর কথা স্মরণে রাখতেন। কত লোকের কত অমার্জনীয় অপরাধকেও বঙ্গবন্ধু অনায়াসে মাফ করে দিয়েছেন। তার অন্তর ছিল সাদা, দ্বিল ছিল নরম। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারতেন না, তিনি বিচলিত হতেন, কষ্ট পেতেন। বঙ্গবন্ধু মরেন নি। বঙ্গবন্ধু মরতে পাওে না। তিনি অমর। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন কোটি কোটি বাঙালী, কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগীর হৃদয়ে। পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম হয় অমরত্ব লাভের জন্য। তারা তাদের কর্ম ও কৃত্তির জন্য অমরত্ব লাভ করেন। তাদের সংখ্যা খুবই কম কিন্তু তাদের কর্ম বিশাল। তাদেরই একজন কীর্তিমান, ক্ষনজন্মা, অগ্নীপুরুষ বাংলার অগ্রগণ্য শ্রেষ্ঠ সন্তান, শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর বিশালত্বের মাজে তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এটা সম্ভব। হিমালয়সম বিশালত্ব যার তাকে খুনি খন্দকার মোস্তাকের দল স্ব-পরিবারে হত্যা করলেও এটা সম্ভব যে বঙ্গবন্ধু আজীবন বাঙালীর হৃদয় কুঠিরে বেঁচে থাকবেন। খন্দকার মোস্তাকের দুষ্ট চিন্তার ধারক-বাহক আরো অনেকেই আছেন যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর দোসর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে মোস্তাক ও তার আলবদর আলসামস্ বাহিনীর কুট কৌশলের সহযাত্রী কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য আক্রামন করতে যায় তখন বঙ্গবন্ধু তার আর্মীর চিফ অব স্টাফ সফিউল্লাকে ফোনে যোগাযোগ করলে সফীউল্লাহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তার সেনাবাহিনী দিয়ে প্রতিরোধ না করে উল্টো বঙ্গবন্ধুকে বাড়ীর ওয়াল টপকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাছাড়াও আরো অনেকেই আছেন আমরা টেলিভিশনের চ্যানেলে প্রায়ই দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুর জন্য মায়াকান্না করেন। তারা কি তখন ঘটনা আচ করতে পারেন নি? তারা ঘটনাকে বুঝতে পেরেও কোন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন নি বরং নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ দেখিয়ে খুনিদের সাহস যুগিয়েছেন। আরও আছেন বঙ্গবন্ধুর দোসর যারা বঙ্গবন্ধুর লাশের উপর দিয়ে খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছিলেন। জাতি এসব কখনও ভুলবে না। এগুলো ইতিহাস। কিন্তু কথা হল ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। বঙ্গবন্ধু বুঝতেন তার আশে পাশে মুখোশপরা কত চোর বদমাশ কত বেঈমান আছে তাই তিনি বলতেন, আমি কাকে দোষ দেব- আমার সামনে চোর, পিছনে চোর, ডানে চোর, বামে চোর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষসহ তার সাথে সবসময় যারা উঠা-বসা করে তাদের তিনি এতোটাই বিশ্বাস করতেন যে তার সামনে পিছে ডানে বামে চোর ডাকাতের লেবাস পরাদের সাথে যে বেঈমানরাও ওৎ পেতে বসে আছে সেটা তিনি বুঝতে পারেন নি। এই বাংলায় যে মিরজাফররা আছে তা তিনি বুঝতে পারেন নাই। তিনি খুব বেশী আবেগপ্রবণ ছিলেন, দয়ালু ছিলেন, বিশ্বাসী ছিলেন- এটাই তাঁর এক সময় কাল হয়ে উঠলো। আর এতেই তার মৃত্যু হয়েছিলো সে দিন। ভালোবাসার আর বিশ্বাসের চরম মুল্য দিতে হয়েছে তাকে এবং তার গোটা পরিবারকে। স্বাধীনতাবিরোধী ওই ঘাতকচক্র হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে, যা ছিল পৃথিবীতে বিরল নেক্কারজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা। মহাত্মা গান্ধী, লুথার কিং, লিংকন,ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন, কিন্তু কাউকেই বঙ্গবন্ধুর মতো সপরিবারে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়নি এতটা নির্মম ভাবে। এদিন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, জামালসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও এই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। যে কাজটি বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীও করাতে সাহস করেনি, সেটিই করল এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গঠন করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন তখনই ঘটানো হয় এ কলঙ্কীত ঘটনা। সে থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার আকাশ-বাতাস ও মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা, যা কোনোদিন হয়নি, হবেও না এই বাংলায়। পৃথিবীতে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম, তার কর্ম। বঙ্গবন্ধু কে হত্যাকারীরা ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধু কে হত্যা করে স্বাধীনতার ইতিহাস বদলে দেবে, তাদের সে আশায় গুড়েবালি। বঙ্গবন্ধুর মত নেতারা মরে না তারা জীবিত আছে থাকবে কোটি বাঙ্গালীর অন্তরে বিরাজমান। আমরা তার আদর্শকে অনুসরণ করে তারই সুযোগ্য কন্যা বঙ্গকন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। পরিশেষে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের প্রানের স্পন্দন এই মহান নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। (আমিন)
লেখক:
মাহমুদ হোসেন রিপন
চেয়ারম্যান,৫নং শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ,কাঠালিয়া।
সভাপতি,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৫ নং শৌলজালিয়া ইউনিয়ন।

Top
%d bloggers like this: