মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও থেমে নেই মাদকের বিস্তার,অভিনব কৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মাদক - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও থেমে নেই মাদকের বিস্তার,অভিনব কৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মাদক


আবুবকর সিদ্দীক:এটা খুবই উদ্বেগজনক যে, মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও থেমে নেই মাদকের বিস্তার।অভিনব কৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মাদক। কেউ কেউ ধরা পড়ছে। কেউ থেকে যাচ্ছে অন্তরালেই। কিন্তু যেকোনো মূল্যে এদের রুখতে হবে। সমাজ থেকে দূর করেতে হবে মাদক।এবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিনব কায়দায় ট্রাকে লুকিয়ে ৩০ কেজি গাঁজা পাচারকালে তিন মাদক কারবারিকে আটক করেছে পুলিশের র্যাব। গতকাল শুক্রবার (১৯ জুন) ভোর সাড়ে ৫টায় র্যাব-২ এর একটি বিশেষ দল অভিযান পরিচালনা করে গাঁজাসহ তাদের আটক করে।আটকরা হলেন মো. আলাউদ্দিন (৩৭), জালাল উদ্দিন (৩৭) এবং শারাফাত হোসেন মেহেদী (১৫)। এ সময় মাদক পাচারে ব্যবহৃত ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি মো. জাহিদ আহসান জানান, র্যাব-২ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, একটি ট্রাকযোগে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ গাঁজার চালান নিয়ে সাত মসজিদ রোড হয়ে ধানমন্ডি এলাকায় বিক্রির উদ্দেশে আসছে।

মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এটি অনুধাবন করেই মাদকনির্মূলে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন মাদককারবারের সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন কলাকৌশলের আশ্রয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। সত্যি বলতে কি দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট।

আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ। মাদকের রয়েছে বিভিন্ন রুট। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়ে। বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। রাজধানীতেও মাদকব্যবসা রমরমা। মাদকের জগতে এক সময় ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি। বেকারত্বও মাদকের বিস্তারে সহায়ক- এমন কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদককারবারি ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। মাদকের সর্বনাশা দিক নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেকবারই লিখেছি। কিন্তু অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি।মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে।আলোকিত বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক।

Top
%d bloggers like this: