আশাবাদ সওজের,বরিশাল অঞ্চলে ঈদযাত্রা হবে নির্বিঘ্ন



আলোকিত বার্তা:দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ মহাসড়কগুলোরই ভালো অবস্থায় থাকলেও তিনচাকার নিষিদ্ধ গাড়ি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে। কারণ তিনচাকার গাড়ির গতি কম হওয়ায় মহাসড়কে দূরপাল্লার বেশিগতির গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবি, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে তিনচাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হলেও বরিশালের ৬ জেলায় এসব গাড়ি চলাচল করছে অহরহ।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মহাসড়কে তিনচাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি উচ্চ আদালত এসব গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।সড়ক ও জনপদ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় মোট মহাসড়ক রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ১৩৬ কিলোমিটারের একটু বেশি। আর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার ও জেলা মহাসড়ক রয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার।সড়ক ও জনপদ বিভাগের বরিশাল জোনের আওতাধীন ৬ জেলায় এখন ৭৪টির মতো প্রকল্পের কাজ চলছে, যাতে সড়ক, কালভার্ট, ব্রিজ রয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংস্কারে ৬ জেলায় ১৩ প্রকল্প এবং জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান উন্নয়ন ও প্রশস্ততার উন্নীতকরণে ১৬ প্রকল্পের কাজ চলছে। আর এর বাইরে ফরিদপুর-কুয়াকাটা ফোরলেন উন্নীতকরণে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে ।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের অংশ পুরোপুরি ভালো অবস্থায় রয়েছে। ভোলা-পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কগুলোতে কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। যদিও প্রকল্পের বাইরে এসব জেলায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন অধিকাংশ রাস্তাঘাটই ভালো অবস্থায় রয়েছে। আর যেখানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে তারও সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া বিভাগের ১৮ ফেরি সচল।সওজের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা আলোকিত বার্তাকে বলেন, বিভাগের কোথাও মহাসড়কের অবস্থা তেমন খারাপ নেই। কিছু জায়গায় কাজ চলছে। আশা করি, এ অঞ্চলবাসীদের ঈদযাত্রা দুর্ভোগহীন, নিরাপদ ও আনন্দময় হবে। তবে গোটা বরিশালে সড়ক ও জনপদ বিভাগের যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে, তা পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে এক থেকে দেড়বছর সময় লাগবে। রাস্তাঘাট ভালো অবস্থা থাকার কথা জানিয়ে পরিবহন চালকদের অভিযোগ, মহাসড়কে অবৈধ গাড়ির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে। কারণ তারা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও অদক্ষ চালকদের খেয়াল-খুশি মতো চালনাকেই দায়ী করছেন।
বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৬ জেলার মহাসড়কে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত তিনচাকার, নসিমন, গ্যাসচালিত সিএনজিসহ বিভিন্ন নামে ছোট যানবাহন চলাচল করছে। অপরদিকে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী, বরিশাল-বরগুনা, বরিশাল- ঝালকাঠি-পিরোজপুর, ঢাকা-ভোলা মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশেই রয়েছে হাট-বাজার। ফলে প্রায়ই ওইসব হাটবাজার-কেন্দ্রিক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সব থেকে বড় হতাহতের ঘটনাগুলোর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল কাশিপুরের বাঁশতলা এলাকায় থ্রি-হইলারকে (মাহিন্দ্রা) চাপা দেয় একটি ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠি এলাকায় ট্রাক-তিনচাকার যানের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হন। ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর গৌরনদী এলাকায় বাসের সঙ্গে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের সংঘর্ষ হলে ভ্যানচালকসহ দু’জন নিহত হয়। একই বছরের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের রায়েরহাট এলাকায় বাস-মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’নারী নিহত ও শিশুসহ তিনজন আহত হয়। ২০১৮ সালে ১৭ মার্চে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের কাশিপুর এলাকায় বাসচাপায় নিহত হন মোটরসাইকেলের দুই আরোহী। সবশেষ চলতি বছরের ২২ মার্চ বরিশালের গরিয়ারপাড়ে বাস-মাহিন্দার সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়। এছাড়াও প্রায়ই বাসের সঙ্গে তিনচাকার যানের সংঘর্ষে হতাহত হচ্ছে অনেকে।
তিনচাকার চালকদের দাবি, উপজেলা পর্যায়ে অনেকক্ষেত্রে বিকল্প সড়ক না থাকায় মহাসড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। মাহিন্দাচালক মো. হাসান আলোকিত বার্তাকে বলেন, তিনচাকার যান মূলত কম দূরত্বের যাত্রী উঠায়। অনেক জায়গার মহাসড়কে যান না চললে এই যাত্রী ও চালক-শ্রমিকরা কী করবেন?ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বাসচালক মজিবুর রহমান আলোকিত বার্তাকে বলেন, মহাসড়কে তিনচাকার যানের দৌরাত্ম্য এতোটাই যে গতি নিয়ে গাড়ি চালাতে আমাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।ঝালকাঠি বাস শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, অসংখ্য ছোট গাড়িগুলো প্রতিনিয়ত যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে। এসব চালকদের যেমন প্রশিক্ষণ নেই, তেমনি তারা ট্রাফিক আইন-কানুন সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নয়। অল্প দূরত্বে বারবার থেমে যাত্রী ওঠাচ্ছে, ফলে অধিক গতিসম্পন্ন গাড়িগুলো দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান প্রামাণিক বলেন, অটোরিকশা-ভটভটি এ ধরনের নিষিদ্ধ যানবাহন শুধু ঈদের সময় নয় সারাবছরই চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে বিভাগের সব জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) চিঠি দিয়েছি। এছাড়া গত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এসপি হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন বন্ধে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে চেকপোস্ট বসিয়ে এসব গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।