অডিট আপত্তি ১২৪ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিভাগে এক বছরেই
আলোকিত বার্তা:বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগে এক বছরে ১২৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ২৪৪ টাকার অডিট আপত্তি পেয়েছে সংসদীয় কমিটি। বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছরের এই বিভাগে এ অডিট আপত্তি পাওয়া গেছে। সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বলছেন, এ ভয়াবহ অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে গ্রাহকদের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে। এ জন্য অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।বৃহস্পতিবার (২ মে) সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত কমিটির তৃতীয় বৈঠকে এ অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুস শহীদ, মো. আফছারুল আমীন, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জহিরুল হক ভূঞা মোহন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু) এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন।বৈঠকে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ২০১২-১৩ এর অডিট আপত্তির অনুচ্ছেদ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নিয়ে আলোচনা হয়। আপত্তিগুলো অনধিক ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আদায় করে কমিটির কাছে প্রমাণ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন বিল পরিশোধ না করা সত্ত্বেও ৪২০ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় সংস্থার মোট ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৪ টাকার অডিট আপত্তি পাওয়া গেছে।ঠিকাদারের পরিশোধিত বিল থেকে নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে ভ্যাট কর্তন করায় সরকারের ২৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪১ হাজার ২৫২ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।এছাড়া যোগসাজশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় সরকারের এক কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৮ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
নিখোঁজ গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা বিদ্যুৎ বিল আদায় না করায় আর্থিক ক্ষতি চার কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৩ টাকা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি আপত্তিটিকে গুরুতর অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করে অনধিক ৬০ দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়, যেসব কর্মকর্তা এ অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তী বৈঠকে নিখোঁজ গ্রাহকের সংখ্যা বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে।এছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে এক প্রকল্পের অর্থ অন্য প্রকল্পে এবং ন্যাশনাল অ্যাইডস (এসটিডি) হিসাব থেকে সিডি ভ্যাট খাতে অর্থ স্থানান্তর করায় আট কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ভাউচারে প্রদর্শিত অতিরিক্ত অর্থ চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করায় ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৮ টাকা ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তি পেয়েছে সংসদীয় কমিটি।অনুমোদিত লোডের অতিরিক্ত লোড ব্যবহার করা সত্ত্বেও ট্যারিফ বিধি মোতাবেক বিল প্রস্তুত ও আদায় না করায় ভ্যাটসহ ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৯ ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তি পাওয়া গেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী বৈঠক শেষে আলোকিত বার্তাকে বলেন, এই ভয়াবহ অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে এর প্রভাব গ্রাহকদের মধ্যে পড়বে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। তাছাড়া আসল গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাবেন না। এ জন্য এসব অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করে সংসদীয় কমিটিতে প্রমাণ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে।বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অডিট অফিস ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।