নতুন আইন হবে প্রয়োজনে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নির্ধারণ করে
আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে, যাতে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।তিনি বলেন, প্রয়োজনে ধর্ষণের জন্য ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ নির্ধারণ করে নতুন আইন হবে।তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে যা যা করণীয় আমরা তা করবো। আর যৌন নিপীড়ন যারা করবে তাদের ক্ষমা নেই। অনেক সংসদ সদস্য বলেছেন এরজন্য একটা কঠোর আইন করা দরকার। আমরা ইতোমধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজনে এজন্য যদি কঠোর আইন করতে হয় ইনশাল্লাহ করবো।নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হামলা এবং নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে সংসদে সোমবার সরকারি দলের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪১ (১) বিধি অনুসারে উত্থাপিত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একথা বলেন।এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নুসরাতের ঘটনাটি তার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সাথে সাথে পুলিশকে নির্দেশ দেই কে কোন দল করে সেটা আমরা দেখতে চাইনা। অপরাধী অপরাধীই। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। কারণ এই ধরনের ঘটনা কখনই মেনে নেয়া যায় না।তিনি বলেন, শিক্ষক পূজনীয়। তিনি মা-বাবার মতো। তার কাছে শিখবে। সেই শিক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। আর সেটা যদি হয় মাদ্রাসায়।যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমার সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়টি দেখেছি। ওই সময় যদি একটি রাজনৈতিক দল অগ্নিসন্ত্রাস না করত, পুড়িয়েমানুষ হত্যা না করত, তাহলে হয়তো ওই (ফেনীর মাদ্রাসার) অধ্যক্ষের মাথায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চিন্তা আসত না। তার মাথায় এটা আসত কিনা সন্দেহ।
তিনি এ সময় আশংকা ব্যক্ত করেন, যখনই এ ধরনেরা কোনো ঘটনা ঘটে এবং এটার প্রচার হতে থাকে তখন দেখা যায় কোনো ঘটনা একটার পর একটা সিরিয়ালি ঘটে যায়। তবে আমি এটুক বলবো যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। সেক্ষেত্রে কোনো দল, মত আমি দেখবো না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।জঙ্গিবাদ আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটি সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই এটা এখন মোকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশে এবং দেশের বাইরে সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটা জনমত সৃষ্টি করতে হবে।তিনি বলেন, শ্রীলংকার সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জায়ান চৌধুরীসহ ২৫৩ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে জায়ানের বাবাও রয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এবং শ্রীলংকার গীর্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। আর এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমি বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশেও চেষ্টা করা হয়েছিল হলি আর্টিজানের ঘটনায়। সেখানে আমরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাদের দমন করতে সক্ষম হই। কিন্তু এর পর শোলাকিয়াতে ঈদের জামাতে হামলা করার চেষ্টা হয়। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র্যাব তদন্ত করে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের কোনো সামান্য আলমতও পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।প্রধানমন্ত্রী এজন্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন, গোয়েন্দারা সঠিক সময়ে তথ্যটা দিতে পারছে বলেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারছে এবং অনেক জান-মাল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, কারো কাছে কোনো কিছু যদি অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় তাহলে সাথে সাথে তারা যেন এটা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে জানায়। যাতে এ ধরনের ঘটনার আমরা মোকাবেলা এবং মানুষের জান-মাল রক্ষা করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের কথা স্মরণ করে বলেন, জাতির পিতার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। তখন বুকে পাথর বেঁধে সেই শোক-শক্তি নিয়ে আমরা ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছি এবং যখন সরকারে এসেছি জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। কখনো প্রতিশোধ নেয়ার কথা চিন্তা করিনি।সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পরেই কেবল সে বিচারের রায় কার্যকর করতে পেরেছি।অন্যদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শাহাজান খান, মেহের আফরোজ চুমকি, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল, শিরিন আখতার, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা, ফখরুল ইমাম ও বিএনপির হারুনুর রশীদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।