ভেষজ চিকিৎসার প্রতি জোর দেয়ার প্রচলিতের পাশাপাশি আহবান
আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিরায়ত স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতিকে মূলধারার ফিরিয়ে আনার আহবান জানিয়েছেন।তিনি বলেন,আমরা ভেষজ,আয়ুর্বেদিক,ইউনানী ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উপেক্ষা করতে পারি না এবং মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এগুলোর উন্নয়নের জন্য আরো গুরুত্ব দিতে হবে।তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশ বর্তমানে মান সম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সফল্য অর্জন করেছে এবং বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি চিরায়ত ওষুধেরও ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ ও জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংগৃহীত সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহন বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,সরকার দেশের সব বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষার মান রক্ষায় যতত্রতত্র মেডিকেল কলেজ করার অনুমতি দেয়া হবে না। কারণ শিক্ষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তিনি বলেন,দীর্ঘ ১০ বছরে আমরা স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নতি করেছি। প্রথমবার সরকারে আসার পর আমরা ঢাকায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলাম। এরপর দ্বিতীয়বার থেকে শুরু করে আমরা চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী- তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রত্যেকটা বিভাগে একটা করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি।জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নার্সিংটা এক সময় আমাদের চাকরির ক্ষেত্রে খুব নিম্ন পর্যায়ে ছিল। আমি তাকে উচ্চ পর্যায়ে তুলে দিই। এক সময় ডিপ্লোমা নার্সিং ছিল। কেবলমাত্র ডিপ্লোমা নার্সিং ট্রেনিং করা হতো।
যেকোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে নার্সিংয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,আমাদের একটা সমস্যা রয়েছে, কেউ যদি নার্সিংয়ে আসতে চায় তাকে সায়েন্সের স্টুডেন্ট হতে হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে আমি নির্দেশ দিয়েছি,এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত না।প্রধানমন্ত্রী বলেন,সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে শুধু সরকার একা নয়,সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা মানুষের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারব।তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার জন্য এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুযোগ দিচ্ছি। শিশুদের ইনকিউবেটর মেশিন আনার বিষয়ে ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার সুফল জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ও গ্যাভি অ্যাওয়ার্ডের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।ভেষজ চিকিৎসার বিষয়ে জোর দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আরেকটা বিষয় যেটা আমরা অবহেলা করতে পারি না। ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ এখন উন্নত মানের ওষুধ করে, সেটা রফতানিও করে। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের দেশে যেমন কিছু দেশজ ওষুধ আছে সেদিকেও কিন্তু যত্নবান হতে হবে।
তিনি আরো বলেন,সারাবিশ্বে এখন ভেষজ জিনিসের ভীষণ চাহিদা আছে। সেইক্ষেত্রে আমাদের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, ইউনানী চিকিৎসা, ভেষজ চিকিৎসা বা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা- এর ওপরও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এর ওপর গবেষণা প্রয়োজন। এই চিকিৎসা যেন মানুষ নিতে পারে আমরা সেদিকে দৃষ্টি দেব।প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬ বছর। আর এখন তা ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। আমরা মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমিয়েছি।তিনি বলেন,গ্রামপর্যায়ে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গ্রামের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। সেখানে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছে। প্রত্যেকটি উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক পরিমাণ কম রয়েছে। আমরা সেগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ পর্যন্ত নির্মিত প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার প্রশিক্ষিত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্প বাস্তবায়নে মোবাইল ফোন এবং টেলিমেডিসিন পদ্ধতির মাধ্যমেও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে।সকলের সুস্থতা নিশ্চিতকল্পে ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিকার-শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার থেকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে।এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.মুরাদ হাসান।অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় জিপ গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।