এ দেশের জনগণ ও মাটির সাথে আওয়ামী লীগের শেকড় গাঁথা
আলোকিত বার্তা:এ দেশের জনগণ ও মাটির সাথে আওয়ামী লীগের শেকড় গাঁথা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাই বার বার চেষ্টা করেও কেউ এই দলটিকে ধ্বংস করতে পারেনি।আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সকল অধিকার আদায়ের এবং রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন আওয়ামী লীগকে শেষ করার জন্য আইয়ুব-ইয়াহিয়া চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ এবং খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলাদেশের জনগণের সাথে আর বাংলার মাটিতে এমনভাবেই গাঁথা যে, এটাকে কখনও শেষ করতে পারেনি কেউ’।প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায়সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘বরং আজ এটা প্রমাণিত হয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে যে দল জনগণের কথা বলে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গড়ে ওঠে, সেই দলই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যাদের সৃষ্টি, তাদের গোড়ায় কোন মাটি থাকে না। ঐ স্বর্ণলতার মত গাছের ডালে বসে ঐ গাছের রস খেয়ে বাঁচে,গাছ মরে গেলে তারাও থাকে না। কাজেই তাদের কোন অস্তিত্ব থাকে না, ক্ষমতা ছাড়া। সেটাই আজ বাংলাদেশে প্রমাণিত সত্য।তিনি বলেন,যে যতই গণতন্ত্র নাই বলে চিৎকার করুক ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারিদের হাতে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল কখনই গণতন্ত্র দিতে পারে না। দেশের মানুষের কল্যাণও করতে পারে না। তাই যদি করতে পারতো তাহলে এই ২১ বছর (’৭৫ এর পরে ২১ বছর) যারা যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে পারতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কিন্তু বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারে নাই, করেও নাই। বরং দেশের মানুষকে তারা ভিক্ষুক বানিয়ে রেখেছিল।প্রধানমন্ত্রী বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিলাম তখন তিনি বলেছিলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভাল না, তাহলে বিদেশ থেকে সাহায্য (ভিক্ষা) পাওয়া যাবে না। এই ছিল তাদের মানসিকতা, কারণ তারাতো দেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করেনি।অন্যদিকে জাতির পিতার বক্তব্য- ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকে না’ উদ্বৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে কারণে আজকে দেশকে আমরা এমন জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি যে কেউ আর আমাদের করুণার চোখে দেখে না, ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ মানেই দুর্যোগের দেশ মন্তব্য করে অবহেলার চোখে দেখে না।আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের আর্থসমাজিক উন্নযনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে যেমন আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপন করে মহাকাশ জয় করেছি, সমুদ্র সীমা সমস্যার সমাধান করেছি, আমাদের সীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন করেছি- যার সব কাজই জাতির পিতা শুরু করে গিয়েছিলেন।
তিনি তার সরকারের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন ক্রয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘অর্থাৎ মহাকাশ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত আমাদের বিচরণ যাতে আমরা করতে পারি সেই ব্যবস্থা আমরা করে গেছি। যারা এর আগে ক্ষমতায় ছিল তারা এর কিছুই করে নাই এবং করতেও চায়নি, বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক এটাও তারা চায়নি। ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়েছে আর ঐ হানাদার বাহিনী যাদের পরাজিত করেছিলাম (মুক্তিযুদ্ধে) সেই পরাজিত শক্তির পদলেহন করেছে।তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলণের ইতিহাস থেকে এর নেতৃত্ব দানকারি বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলতে চেয়েছিল।এবারে আমরা স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রম করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। সত্য একদিন না একদিন উদ্ভাসিত হয়। যেটা বাংলাদেশে হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে যে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়, ১৯টি ক্যু হয়েছিল সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার এবং সৈনিকদের হত্যা করা হয়, যারা কোন কিছু জানতো না, সে সময় ছুটিতে ছিল, তাদেরকেও হত্যা করা হয়।সে সময়ে দেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিরাতে কারফিউ, কারো স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কোন অধিকার ছিল না, স্বাধীনভাবে চলার পথ ছিল বন্ধ। ’৭৫ এর পরে প্রায় ১০টি বছর কেবল কারফিউ দিয়েই দেশ চালানো হয়েছে।সে সময় দুর্ণীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে ঋণ খেলাপি এবং কালো টাকার মালিক সৃষ্টি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে কতগুলি দল করার সুযোগ দেয়া হয়। যেখানে মানুষের কথা বলার বা ভোটের কোন অধিকার ছিল না।তিনি বলেন, ‘মার্শাল ল’ দিয়ে আমাদের সংবিধানকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত বিক্ষত করা হয়। এইভাবেই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়।প্রধানমন্ত্রী সে সময় স্বৈরশাসনের উচ্ছিষ্ট ভোগী তথাকথিত সুশীল সমাজের কতিপয় প্রতিনিধির সমালোচনা করে বলেন, স্বৈরশাসকদের ডান্ডার ভয়ে এবং নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা স্বৈরশাসকদের অনেক অনৈতিক কাজকে বৈধতা প্রদান করেন। অনেকে গণতন্ত্র রক্ষার নামে এদের সঙ্গে হাতও মিলান।
তিনি বলেন‘এই চাটুকারের দলই মিলিটারি শাসকদের পদলেহন করতো। আর তাদের শাসনামলটাকেই তারা খুব ভালভাবে দেখে কারণ স্বাধীনতাবিরোধীরাই তখন ক্ষমতায়, বিচার চলছিল এমন যুদ্ধাপরাধীদেরকেও মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়।প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমানের তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বললেও দেশের মানুষ কি পেয়েছিল, দেশের কি উন্নতি হয়েছিল বরং ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হতো। যে সেনাবাহিনীর কাঁধে বন্দুক রেখে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর জন্যই বা তারা কি করেছে?একটি এলিট গ্রুপ সৃষ্টি করে ক্ষমতা কেন্দ্রিক ভোগ বিলাস আর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করাতেই ঐ শ্রেনীর দৃষ্টি ছিল বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে এবং গণতন্ত্রের মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
সময় লাগলেও তিনি এবং তার দল বাংলাদেশের জনগণকে অবশেষে প্রকৃত ইতিহাস জানাতে পেরেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক প্রজন্ম ভাল ইতিহাস শিক্ষা লাভ করলেও এখন দেশবাসী প্রকৃত ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কন্ঠে বলেন,‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ এবং ইনশাল্লাহ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপন করবো তখন বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো- এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠনকে উন্নত করতে হবে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই হচ্ছে এক মাত্র সংগঠন যা জাতির সেবা করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই কথাটি মনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করবার আহবান জানাচ্ছি।আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, রমেশ চন্দ্র সেন, মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠসিক সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন সিরাজ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং আবুল হাসনাত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভাটি সঞ্চালনা করেন। সূত্র: বাসস