গৃহঋণ মিলবে আমমোক্তারনামা ছাড়াই
আলোকিত বার্তা:সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণের আওতায় আনাসহ কয়েকটি শর্ত শিথিল করে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সম্প্রতি এমন প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এক্ষেত্রে আরও ছাড় দেয়া হচ্ছে।অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য আমমোক্তারনামার প্রয়োজন হলেও সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহঋণের ক্ষেত্রে এটি লাগবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, কোনো ব্যক্তি যৌক্তিক কারণে অন্যকে আইনগতভাবে যে ক্ষমতা অর্পণ করেন তাকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বা ‘আমমোক্তারনামা’ বলে। এ-সংক্রান্ত দলিলই আমমোক্তারনামা। সাধারণত সম্পত্তির ভোগদখল, রক্ষণাবেক্ষণ, কেনা-বেচার জন্য কাউকে এ ক্ষমতা অর্থাৎ আমমোক্তারনামা দেয়া হয়। গৃহঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমমোক্তারনামা দিতে হলে ঋণগ্রহিতা কখনও যদি খেলাপিতে পরিণত হন, তাহলে ওই ঋণের বিপরীতে মডগেজ তথা যে গৃহটি বানানোর জন্য ঋণ নেয়া হয়েছিল আইনগতভাবে ওই গৃহের মালিকানা ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আলোকিত বার্তাকে বলেন, সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ দেয়ার জন্য মনোনীত প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহিতাদের মধ্যে আমমোক্তারনামা জমা দেয়া নিয়ে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এক্ষেত্রে ঋণগৃহিতাদের দাবি হলো, অন্য কোনো জায়গা থেকে গৃহ তৈরির জন্য ঋণ নিলে শুধুমাত্র ওই গৃহ মডগেজ হিসেবে রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে মডগেজ হিসেবে রাখা হচ্ছে চাকরি, বেতন, পেনশন, গ্রাচুইটি। তাহলে আমরা আমমোক্তারনামা দেব কেন?
তিনি বলেন, এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ বাস্তবায়নকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সুরাহা করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো আমমোক্তারনামা ছাড়াই গৃহঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। একটি ঋণের ক্ষেত্রে আমমোক্তারনামা প্রস্তুত করতে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হতো, সেটা আর হবে না।তিনি আরও বলেন, এজন্য নতুন করে আর প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন পড়বে না। এটি কার্যকর হয়ে গেছে।
এদিকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণের বিষয়ে ৩০ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের কয়েকটি শর্ত শিথিল করে গত ৬ মার্চ অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনটি জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসকে গত বছরের ৩০ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে এ ঋণের আওতায় না রাখলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আগের প্রজ্ঞাপনে ঋণ নেয়ার যোগ্যতা হিসেবে কর্মচারীদের বয়সসীমা চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর সর্বনিম্ন পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৬ বছর করা হলেও পরিবর্তিত প্রজ্ঞাপনে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৮ বছর করা হয়েছে।সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে গত ৩০ জুলাই জারিকৃত পরিপত্রটি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে উক্ত পরিপত্রের আওতায় ইতোমধ্যে গৃহীত কার্যব্যবস্থা বহাল থাকবে। এ নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে তা সরকার, তথা অর্থ বিভাগ এবং বাস্তবায়নকরী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা যাবে।
তবে ৩০ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের অন্যান্য নিয়ম-কানুন প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ সুদহারে গৃহঋণ পাবেন। প্রজ্ঞাপনের আওতায় জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া যাবে। এ ঋণের মোট সদুহার ১০ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ৫ শতাংশ দেবে সরকার এবং বাকি ৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ (ঋণ পরিশোধ শুরুর সময়) ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে।
এর আওতায় উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা, জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্তরা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। সর্বনিম্ন ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে তারা এ ঋণ নিতে পারবেন। সর্বোচ্চ ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ ঋণ নেয়া যাবে।সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃণনির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব তফসিলি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সরকার অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতনকাঠামোর পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।বেতনকাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা।