বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ার উন্নয়নের অংশীদার
আলোকিত বার্তা:প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমীকরণে প্রবাসীরা। দেশটির ১৩টি প্রদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন হাজারো রেমিট্যান্সযোদ্ধা। মালয়েশিয়াকে গঠনেই এসব প্রদেশে নিরলসভাবে কাজ করছেন বাংলাদেশের এ সারথিরা। জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় বসবাস করলেও তাদের ঘাম-পরিশ্রমের সুফল বেশ ভালোভাবেই নিচ্ছে দেশটি।কুয়ালালামপুরের টুইন টাওয়ার, এম আরটি, তুনরাজ্জাক এক্সচেঞ্জ, কেএল টাওয়ার, সানওয়ে পিরামিড, সাইবার জায়া, পোর্টক্লাং, পেনাংয়ের বাতুফিরিঙ্গি সৈকত, তেরেঙ্গানুর মসজিদ, মেলাকার মালয় রেস্তোরাঁ, পাহাঙ্গের চা বাগান, পেরাকের রাবার বাগান, লংকাউই দ্বীপ- সব জায়গায় আছেন বাংলাদেশিরা।
এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ায় এসে আবার কেউ ফেরত গেছে- এমন ঘটনা বিরল। বাংলাদেশিরাও খুব কম সময়েই মালয় ভাষা ও সংস্কৃতি আয়ত্ব করে এখানে দিনাতিপাত করছেন, গড়ছেন দেশের অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ।এতসব ভালো খবরের মধ্যেও মাঝেমধ্যে কিছু খবর পীড়া দেয় বাংলাদেশিদের। সেখানে অবস্থানের কাগজপত্রের ব্যাপারে অসতর্কতা অথবা খানিক ভুল কিছু লোককে হয়রানি এমনকি শাস্তির মুখেও ফেলে দেয়। আবার কতিপয় অসাধু চক্রের অসৎ কর্মের কারণে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিকেই অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়।সচেতন মহলের মতে, সচেতনতা না আসায় বাংলাদেশিদের এ অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে বারবার পড়তে হয়। মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি কর্মীদের রি-হিয়ারিং ও ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধতার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। শেষ হয় চলতি বছরের আগস্টে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাকের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতা দিতে অনুরোধ করলে সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে শুরু বৈধ প্রক্রিয়া আর এ প্রক্রিয়া চলে আড়াই বছর।
৩টি ভেন্ডরের মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রায় সাড়ে ৫ লাখ নিবন্ধিত হয়েছেন। এরমধ্যে ২ লাখের বেশি ভিসা পেয়েছেন। আরো দেড় লাখের বেশি ভিসা প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছেন এবং এর মাঝে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মী নাম ও বয়স জটিলতায় ভিসা পাননি। এ ছাড়া প্রায় ১ লাখেরও বেশি কর্মী দালালদের খপ্পরে পড়ে ভিসা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।যারা বৈধতার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি তাদেরকে নাম মাত্র কম্পাউন্ড (জরিমানা) দিয়ে দেশে ফেরতের ব্যবস্থাও করেছিল দেশটির সরকার। আর এ প্রক্রিয়াও চলে আড়াই বছর। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ট্রাভেল পাস না নিলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ স্পেশাল পাস ইস্যু করছে না।কারণ হিসেবে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আড়াই বছর সুযোগ দেয়া হয়েছিল সে সুযোগ অনেকে কাজে লাগাতে পারেনি বিধায় মালয়েশিয়া প্রশাসন করারোপ করেছে।’
হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে অবৈধদের দেশে ফেরত পাঠাতে। আর যারা রি-হিয়ারিং প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেও দালালদের খপ্পরে পড়ে বৈধ হতে পারেননি তাদের বৈধ করে নিতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে হাইকমিশন বললেন সংশ্লিষ্টরা।স্থানীয় মহলে প্রচলিত আছে, অসাধু চক্রের অসৎ কর্মের ফলশ্রুতিতে সামগ্রিকভাবে হয়রানির শিকার হওয়া অনেক বাংলাদেশিকে এটিএম বুথ হিসেবেও বিবেচনা করে অনেকে। তারা খুব সহজেই বাংলাদেশিদের ভুলে মাশুল হিসেবে জরিমানা স্বরূপ বিরাট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এমনও অভিযোগ আছে, বাংলাদেশিদের বন্দি রেখে তাদের স্বদেশ থেকে অর্থ এনে তারপর মুক্তি দেয়া হয়।কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। প্রভাবশালী মহল থেকে শুরু করে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর এই সিন্ডিকেটের বেড়াজালে পড়ে জীবন বাজি রেখে সর্বস্ব হারাচ্ছেন ভাগ্যাণ্বেষীরা। কখনোবা মারা পড়ছেন বেঘোরে। এজন্য দায়টা বেশি কাদের? বলা যায়, শ্রমিক আইন এবং সাধারণ নিয়ম-কানুনের অজ্ঞতার জন্যই এভাবে ভুগতে হচ্ছে বেশিরভাগ বাংলাদেশিদের। কারও কারও অসদুপায় অবলম্বনের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে হয় অনেককে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্তারা বলছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার চালু রয়েছে। এ কল সেন্টারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হয়।এ ছাড়া বিগত রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম শুরুর দিকে লিফলেটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে করে দূতাবাসের পরামর্শ ছাড়া কেই যেন কারো সঙ্গে টাকা পয়সা লেনদেন না করতে। অবশ্য, সচেতনতা বৃদ্ধিতে কোনো সংগঠন না থাকলেও মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের রয়েছে সর্বাধিক রাজনৈতিক সংগঠন!বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশিদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু তাদের সেই ভূমিকার গুরুত্বটা কথ্যই থেকে যাচ্ছে।