ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার’ মতো দারুণ স্বস্তি প্রকাশ করছে সচেতন জনগণ - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার’ মতো দারুণ স্বস্তি প্রকাশ করছে সচেতন জনগণ


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : শহর-নগরবন্দর গ্রাম-গঞ্জ-জনপদের সবখানে কোটি কোটি কৌতুহলী চোখ ছিল ড. ইউনূস-তারেক লন্ডন বৈঠকের দিকে। স্মরণকালের আলোচিত এ বৈঠককে ঘিরে পাঁচ হাজার মাইল দূরের লন্ডন ছিল যেন ‘পাশের বাড়ি’। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মধ্যকার এ বৈঠকে অবশেষে বরফ-শিলা গলেছে। ‘ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার’ মতো দারুণ স্বস্তি প্রকাশ করছে সচেতন জনগণ। বহু জল্পনা-কল্পনা শেষে লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণা মতে, আগামী রোজার আগেই ফেব্রুয়ারি’২৬ইং মাসের প্রথমদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান উভয়েই একমত হয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপরসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রোজার আগে নির্বাচন আয়োজনের যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন বৈঠকে ড. ইউনূসকে তাও জানান তারেক রহমান। এ বৈঠকে আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে ‘ভোটের তারিখ ফেব্রুয়ারিতে’ নিয়ে আসার ব্যাপারে সমঝোতাকে সচেতন নাগরিকগণ স্বাগত জানান। সর্বত্র আলাপে-আড্ডায় বিষয়টি উঠে আসছে। আধুনিক যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও মিডিয়ার কলাণে লন্ডন থেকে এই প্রত্যাশিত খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে কৌতুহলী মানুষের মাঝে। সেই সাথে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথারিয়া সবখানে শহর-গ্রাম-জনপদে মানুষের মাঝে বেশ কিছুদিন ধরে চলা অস্বস্তি কেটে আপাতত স্বস্তি ও সন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তৃণমূল রাজনীতিতে ভোটের তারিখ নিয়ে কেটেছে টেনশন। অনেকেই তাদের স্বতঃস্ফূর্ত মন্তব্য ও বক্তব্যে বলেছেন যে, এপ্রিল থেকে সরে ফেব্রুয়ারিতে ভোট এগিয়ে আনার মধ্য দিয়ে জয়ী হলো জনগণের আকাক্সক্ষা, আমজনতার দাবি, বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপির দূরদর্শী নেতৃত্বের সদিচ্ছা এবং সময়ের বাস্তবতা। তবে পরাজিত হয়নি কেউই। কেননা এপ্রিল মাসটি বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোনো বিচার-বিবেচনায় আদৌ উপযুক্ত ছিলনা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সপ্তাহ পূর্বে ঈদুল আযহার আগের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ‘আগামী বছর ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে যে কোনো সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। গতকালের লন্ডন বৈঠকে ড. ইউনূস ‘এপ্রিল’ থেকে সরে এসে ভোটের তারিখ এগিয়ে আনতে সম্মত হলেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি নেতা তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) শিগগিরই ভোটের সিডিউল ঘোষণা করবে।

বৈঠকের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে গতকাল বিবিসি বাংলা’র খবরে জানা যায়,নির্বাচন সময়ের প্রশ্নে লন্ডন বৈঠকে আলোচনা হতে পারে, সেই প্রশ্ন থেকে শেষ পর্যন্ত দলটি (বিএনপি) এই বৈঠকে সম্মতি দিয়েছে। এর আগে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সাথে যুক্তরাজ্য সফরকালে অধ্যাপক ড. ইউনূসের বৈঠকের বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগও করা হয়’।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার লন্ডন বৈঠকের ফলাফল প্রসঙ্গে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সমঝোতা হয়েছে। এ বিষয়টি সবারই স্বাগত জানানো উচিৎ। এপ্রিল মাস তীব্র গরমের মাস। তবে সংস্কার এই অল্প সময়ের মধ্যে খুব বেশি এগুবে না।

অপর প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, ডিসেম্বরেও নয়; এপ্রিলেও নয়Ñ আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই আয়োজনে সমঝোতায় আসার ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। সংঘাতেরসমূহ আশঙ্কা থেকে বেঁচে গেলো জাতি। এরই সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার সঙ্গীদের বিচারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হওয়া দরকার।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ‘সুজন’ চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সম্পাদক অ্যাড. আখতার কবির চৌধুরী বলেন, রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সমঝোতায় আসাটা খুবই স্বস্তিদায়ক খবর। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিরোধ, সংঘাত, হাঙ্গামা জনগণের কাম্য নয়। নির্বাচন তো হবে স্টেকহোল্ডারদের নিয়েই। বিশেষ করে নির্বাচনের প্রধান যে স্টেকহোল্ডার বিএনপি, তাদের নেতা তারেক রহমানের সাথে ভোটের তারিখ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়াটা ভালো হয়েছে। এখন দেশ ও ভোটাররা নির্বাচনমুখী হবে। এর মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে।

Top