গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ ‘গণহত্যার শামিল’
আলোকিত বার্তা:গাজায় ইসরাইলের নীতি ও আচরণ ‘গণহত্যার বৈশিষ্টের অনুরূপ’ বলে মন্তব্য করেছে জাতিসঙ্ঘের একট কমিটি। গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব সংস্থাটি এই মন্তব্য করল।বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইসরাইলের আচরণ তদন্তের জন্য জাতিসঙ্ঘ বিশেষ কমিটি ‘ক্ষুধার্ত রাখাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ জন্য এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ‘বর্ণবৈষম্যবাদ ব্যবস্থা’ প্রচলনের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে।ইসরাইলি সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কোনো তাত্ক্ষণিক জবাব পাওয়া যায়নি। অতীতে তারা জাতিসঙ্ঘকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করা অভিযোগ এনেছে।ইসরাইলের দখলদারিত্বের উপর নজরদারি করতে জাতিসঙ্ঘের এ বিশেষ কমিটিটি ১৯৬৮ সালে গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো এই বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দাবি তদন্ত করে দেখছে যে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান গণহত্যামূলক। ইসরাইলি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।বৃহস্পতিবার হিউমান রাইটস ওয়াচও ইসরাইলকে গাজায় হামাস সদস্যদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। এই সিদ্ধান্ত ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করেছে।ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল বার বার অসামরিক লোকদের স্থানচ্যূত করিয়েছে এবং অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে, তারা ‘জোরপূর্বক অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধাপরাধ করছে’ এবং তাদের এই কর্মকাণ্ড ‘জাতিগোষ্ঠীগত বিশুদ্ধিকরণের সংজ্ঞার সমতূল্য’। কারণ এখানে ফিলিস্তিনিদের ফিরে আসতে দেয়া হবে না।
এর জবাবে ইসরাইল এই সংগঠনকে দোষারোপ করে বলেন এই বাগাড়ম্বর ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাস্তব বিবর্জিত।ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে যে ইসরাইলের প্রচেষ্টাগুলো ‘কেবলমাত্র হামাসের সন্ত্রাসী সক্ষমতাকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিহিত, গাজার জনগণের বিরুদ্ধে নয়, হামাসের মতো নয়, যারা অসামরিক লোকজনকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং আবাসিক এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর প্রবেশ ঘটায়।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল সব অসামরিক ক্ষতিকে শোকের বিষয় বলে মনে করেম অথচ হামাস সব অসামরিক ক্ষতিকে কৌশল হিসেবে দেখে। ইসরায়েল সশস্ত্র সংঘাতের নিয়ম অনুয়ায়ী অভিযান চালিয়ে যাবে।হামাস অভিযোগ অস্বীকার করেছে যে তারা অসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কিংবা যোদ্ধা ও অস্ত্রশস্ত্র হাসপাতাল কিংবা স্কুলের মতো স্থাপনায় লুকিয়ে রাখে।
যুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি
হামাস ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে গত বছর আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে গত বছর ইসরাইল গাজা ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মতে হামাসের ওই সন্ত্রাসী আক্রমণে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে তারা পণবন্দী করে। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন এখনো গাজায় আছেন। মনে করা হয় তাদের এক-তৃতীয়াংশই মারা গেছেন।তার পর থেকে ইসরাইলের পাল্টা আক্রমণে গাজা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে ৪৩,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া ১,০৩,০০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, নিহতদের মধ্যে হাজার হাজার হামাস সদস্যও রয়েছে। ইসরাইল ওই ছিটমহলের বেশিভাগ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, যার ফলে ২৩ লক্ষ লোকের অধিকাংশই বার বার বাধ্যতামূলকভাবে স্থানচ্যূত হয়েছেন।মধ্য সেপ্টেম্বরে এই যুদ্ধ লেবাননে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বেশ কিছু মাস ধরে হিজবুল্লাহ ইসরাইলে রকেট হামলা চালায় এবং ইসরাইলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে ড্রোন ও বিমান হামলা চালায়। ৩,২০০-এরও বেশি লেবাননবাসী নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন গত ছয় মাসে।