শাবান ও শাওয়াল মাস এবং এ দুই মাসে রোযা রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
গাছ কাটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োজন ঋণের স্থিতি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদ বেড়েছে দেশে তাপপ্রবাহ বেশি অনুভূত হচ্ছে সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা থেকে পিছু হটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি'র বেনাপোল শাখা কমিটির অনুমোদন বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এমন উদ্যোগ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে

শাবান ও শাওয়াল মাস এবং এ দুই মাসে রোযা রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত


মো.মুরাদ হোসেন : রমজানের পরের মাস শাওয়াল। আর রমজানের আগের মাস হল শাবান। শাওয়াল ও শাবান হল রমজান সংশ্লিষ্ট ও রমজানের আগে-পরের মাস। তাই রমজানের সম্মানার্থে শাবান ও শাওয়াল মাস এবং এ দুই মাসে রোযা রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। বিশেষত শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া চাই। কেননা হাদীস শরীফে এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আবু আইয়ূব আনছারী রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : যে মাহে রমজানের রোযা রাখল এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোযা রাখল এটি তার জন্য সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য হবে। (সহীহ মুসলিম : ১১৬৪)।রমজান মাস ও শাওয়ালের ছয় দিন রোযা রাখলে কীভাবে পুরো বছর রোযা রাখার সওয়াব হবে- এর বিবরণ এসেছে আরেক হাদীসে। ছাওবান রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : রমজান মাসে রোযা রাখা দশ মাস রোযা রাখার সমান এবং শাওয়ালে ছয় দিন রোযা রাখা দুই মাস রোযা রাখার সমান। সুতরাং রমজান ও ছয় রোযা মিলে এক বছরের রোযার সমান। (সুনানে কুবরা, নাসাঈ : ২৮৭৩)।আল্লাহ এক নেকীতে দশ নেকীর সওয়াব দান করেন। এক দিনের রোযা দশ দিনের সমান, তিন দিনের রোজা এক মাসের সমান। ছয় দিনের রোজা দুই মাসের সমান। আর এক মাসের রোজা দশ মাসের সমান। সুতরাং যে রমজানের এক মাস ও শাওয়ালের ছয় দিন রোজা রাখবে সে এক বছরের সমান সওয়াব পাবে। শাওয়ালের রোজার একটি ফযীলত হল, এই রোজা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি আলামত। রমজান মাসের রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে কিছু রোজা রাখা একথার আলামত যে, আল্লাহ তাআলার দরবারে রমজানের রোজা কবুল হয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলা যখন বান্দার কোনো আমল কবুল করেন তখন অন্য একটি নেক আমলের তাওফীক দান করেন।

সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহ. ও আরো কোনো কোনো সালাফের বক্তব্য হল, নেক আমলের প্রতিদান হচ্ছে, এর পর আরো নেক আমলের তাওফীক পাওয়া। আর গোনাহের শাস্তি হল, এর পর আরো গোনাহে লিপ্ত হওয়া। (মাজমূউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ১০/১১)। সালাফের এই কথার সমর্থন কুরআন মাজীদেই বিদ্যমান। আল্লাহ তাআলা বলেন : যারা হেদায়েতের পথ অবলম্বন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েতে উৎকর্ষ দিয়েছেন এবং তাদেরকে দান করেছেন তাদের (প্রয়োজনীয়) তাকওয়া। (সূরা মুহাম্মাদ : ১৭)।আয়াতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, হেদায়েত ও নেক আমলের পথে চললে আল্লাহ তাআলা তাকে আরো বেশি তাকওয়া ও হেদায়েতের তাওফীক দান করেন। হাদীস শরীফেও অনুরূপ এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন : তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্য আনুগত্যের দিকে নিয়ে যায়। আর আনুগত্য জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মানুষ সত্য বলতে থাকে এবং সত্যের জন্য চেষ্টা করতে। এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট তার নাম লেখা হয় ‘ছিদ্দীক’। তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কেননা, মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। একসময় আল্লাহর নিকট তার নাম লেখা হয় ‘কায্যাব’। (সহীহ মুসলিম : ২৬০৭)।হাদীসের মধ্যে এসেছে, সত্য বলার আমল আরো অনেক নেক আমলের মাধ্যম হয়। যেমনভাবে মিথ্যা আরো গোনাহের দিকে নিয়ে চলে। উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস থেকে জানা যায়, মানুষ যখন কোনো ভালো আমল করে তার জন্য আরো অনেক ভালো আমল করা সহজ হয়ে যায়। সুতরাং একটি ভালো আমলের পর আরেকটি ভালো আমলের তাওফীক হওয়া একথার অলামত যে, পূর্বের ভালো আমলটি আল্লাহ কবুল করেছেন। তাই তাকে আরো কিছু আমলের তাওফীক দান করেছেন। অতএব রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে রোজা রাখা এ কথার একটি দলীল যে, তার রমজানের রোজা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন।আল্লাহ তাআলা যখন কোনো নিআমত দান করেন, এর দাবি হল আল্লাহর জন্য কিছু ইবাদত করা। বিশেষ করে গোনাহমাফের শোকরস্বরূপ ইবাদত-বন্দেগি বাড়িয়ে দেওয়া নবী (সা.) আমল দ্বারা প্রমাণিত। তিনি রাতের বেলা নামাযের মধ্যে এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। আয়েশা রা. জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেন এত কষ্ট করেন, আপনার তো আগে-পরের সব গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি উত্তর দিয়েছেন : আমার কি মন চায় না, আমি শোকরগুযার বান্দা হব? (সহীহ বুখারী : ৪৮৩৭)।রমজানের রোজা, রমজানের তারাবী ও অন্যান্য আমল মুমিন বান্দার গোনাহ মিটিয়ে দিয়েছে সুতরাং গোনাহমাফ ও অন্যান্য নিআমতের দাবি হল রমজানের রোজার পর আরো কিছু রোজা রাখা। এটাই হল, এসব নিআমতের শুকরিয়া। সুতরাং আসুন, রমজানের রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের শোকরস্বরূপ শাওয়াল মাসে কিছু রোজা রাখি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

Top
%d bloggers like this: