সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা থেকে পিছু হটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি'র বেনাপোল শাখা কমিটির অনুমোদন বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এমন উদ্যোগ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে

সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : ঈদের দিনেই ঢল নেমেছে ভ্রমণপিপাসুর কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে পা ফেলা দায়। তবে দক্ষিণা হাওয়া ও সমুদ্রের নীলজলরাশি গরমের অস্বস্তি ভুলিয়ে দিয়েছে পর্যটকদের। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়ও ঈদ নেমেছে। সারাদিন তপ্ত রোদ।পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে পর্যটন নগরী। দীর্ঘ একমাস পর হাসি ফুটেছে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের মুখে।রমজানে দীর্ঘ এক মাসের খরা কেটে দর্শনার্থীর স্রোত নেমেছে সাগরকন্যা খ্যাত এই সৈকতেও। পর্যটকের ভিড় বেড়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পর থেকেই। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবের ছুটির সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে সাপ্তাহিক বিরতি ও পহেলা বৈশাখের ছুটি। সব মিলে এবার লম্বা অবকাশ পাওয়া গেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ছুটছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তাদের বড় অংশই কুয়াকাটায় আসছেন বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটার আশেপাশের জেলা-উপজেলা থেকে আগত দর্শনার্থী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা শুটকি পল্লী, গঙ্গামতির সৈকত, রাখাইন পল্লী, ইকোপার্ক, ইলিশ পার্ক, লেম্বুর বন ও সৈকতের ঝাউবাগানসহ অধিকাংশ পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। তাদের সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগসহ সমুদ্রের নোনাজলে গা ভাসিয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে। সৈকতে কেউ গোসল করছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছেন, আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুরো সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা সুমনা বিশ্বাস বলেন,আমি পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। বুধবার যখন আসি তখন বেশি পর্যটক ছিলেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সৈকত এলাকা মুখর হতে থাকে। অনেক লোক দেখেও ভালো লাগছে।রমজানে দীর্ঘ একমাস কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা কম ছিল। সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরাও অলস সময় পার করেছেন। সেই খরা কেটে যাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। এবার তারা ঈদের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করছেন।হোটেল ডি’মোর-এর ব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদীন জুয়েল বলেন,ঈদ উপলক্ষে আমাদের ৬০ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যে ভাড়া হয়েছে। শুক্র ও শনিবারকে কেন্দ্র করে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সামনের সপ্তাহজুড়ে পর্যটকদের স্রোত অব্যাহত থাকবে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সেক্রেটারি জেনারেল জহিরুল ইসলাম জানান,ঈদের ছুটি উপলক্ষে অনেকদিন পর কুয়াকাটা পর্যটকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। দর্শনার্থীর আনাঘোনায় মুখরিত পুরো সৈকত। পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে কুয়াকাটার ১৬টি পেশার মানুষ। তারা পর্যটকদের সেবা দিয়েই রোজগার করছেন।কুয়াকাটা জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক আবদুল খালেক বলেন,ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে ছয়টি টিম নিয়োজিত রেখেছি। যাতে সব ধরনের অপ্রতিকার ঘটনা ঠেকানো যায়। ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। তাই তাদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, পুরো রমজান মাস কক্সবাজার অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল। দর্শনার্থীর সেই খরা কেটেছে। ঈদের দিনেই ঢল নেমেছে ভ্রমণপিপাসুর।দেশের অধিকাংশ মানুষের বেড়ানোর জায়গা হিসেবে পছন্দের শীর্ষে থাকে কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। বিশেষ দিন ও টানা ছুটিতে এখানে পাহাড়-সমুদ্র, নদী ও ঝরনা দেখতে ভিড় করেন পর্যটকেরা। প্রতিবছরের মতো এবারও দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের দিনই কক্সবাজারমুখী হয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

এর আগে ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রমজান মাসজুড়ে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলো নান্দনিক সাজে সজ্জিত করা হয়। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের দিন থেকে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অধিকাংশ দোকানপাটও খুলেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণি পয়েন্টে পর্যটক নামতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল থেকে কলাতলী থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতে অন্তত ৪০ হাজার দর্শনার্থী নামেন বলে জানিয়েছেন সৈকতে দায়িত্বরত কর্মীরা।বিকেলে সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের মানুষ সাগরের নোনাজলে গোসলে নেমেছেন। কেউ সৈকতে ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন, কেউ আবার ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে সৈকত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) গা এলিয়ে দিগন্ত ছোঁয়া নীলজলরাশিতে মজে আছেন। কেউ কেউ বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনদের এসব আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে রাখছেন।

শহরের বাইরেও পর্যটকরা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এই সড়কে সৈকত ছাড়াও আছে পাহাড়-ঝরনা, প্রাকৃতিক গুহাসহ নানা দর্শনীয় স্থান। এ ছাড়া সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়া, রামু বৌদ্ধ বিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের প্রবল আগ্রহ থাকলেও নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে যেতে পারছেন না দর্শনার্থীরা।রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ তুহিন সাগরে নেমেছেন স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে। কোমড় সমান পানিতে ভাসছেন টিউবে। আধা ঘণ্টা পর বালুচরে উঠে বসেন চেয়ার-ছাতা কিটকটে। হারুন নামের আরেক পর্যটক বলেন, নোনাজলে শরীর ভেজাতে কক্সবাজারে ছুটে আসা।সৈকতে দায়িত্বরত বিচকর্মী বেলাল উদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। শুধু ঈদের দিনেই অন্তত ৪০ হাজার পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। শুক্রবার থেকে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লব বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে কক্সবাজারকে। হোটেল-মোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা এবার ভিন্ন কক্সবাজারকে দেখতে পাবেন আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এবার পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসের ৯০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাবার টেবিলে মূল্যতালিকা রাখা থাকে। পর্যটকরা তালিকা দেখেই যেন খাবারের চাহিদা দেন।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঈদের প্রথম দিনে সৈকতে নেমেছেন অন্তত ৪০ হাজারের বেশি পর্যটক। সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও আছেন। শুক্রবার ঈদের দ্বিতীয় দিনে সৈকতে নামতে পারেন দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক। বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই শতাধিক ট্যুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপরও ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বলেন, হোটেলে কক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না হয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পৃথক কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। হোটেলে কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Top
%d bloggers like this: