জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও উন্মুক্ত - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এমন উদ্যোগ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান না দেখালে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হবে

জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও উন্মুক্ত


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।এতে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় চার থেকে দশজন পর্যন্ত নেতা নেমেছেন ভোটের মাঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন স্থানীয় সংসদ-সদস্যের সমর্থন পেতে। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে ভোট করার ইস্যুও রয়েছে অনেক উপজেলায়।ফলে অনেক জায়গায় স্থানীয় এমপিরা প্রকাশ্যে বা অন্তরালে সমর্থন দিচ্ছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। অন্যদিকে এমপিবিরোধীরাও মাঠে নামছেন আরেকজন প্রার্থী নিয়ে। ফলে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপিদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দলীয় প্রতীক না দিলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সমর্থন দেবে কি না এমন প্রশ্নে-শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা কোনো প্রকার সমর্থন দেব না। জনগণ যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করবে, যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে।

দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীদের ওপর এমপিদের প্রভাব বাড়বে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো বড় কাজ করতে হলে, কিছু ছোট ছোট বিষয় আছে, এগুলো এর মধ্যে এসে পড়বে। কারও ইচ্ছায় নির্বাচন প্রভাবিত হবে এর কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী, এবার তারা প্রমাণ করেছে এবং তারা আরও শক্তিশালী হবে। তারা আরও বেশি করে তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাতে নির্বাচনি ব্যবস্থায় সামনের দিকে আমাদের জন্য শুভ দিন অপেক্ষা করছে।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপিদের প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, এটা তো সব সময় থাকবে। কারণ স্থানীয় সরকারে কারা নির্বাচিত হবেন, সেটার ব্যাপারে একজন এমপির মনোযোগ বা উৎসাহ তো থাকবেই। ফলে তিনি তো কাউকে না কাউকে তো সাপোর্ট করবেন। এটা প্রতীক দিলেও হতো। হয়তো বিদ্রোহী বা ডামি প্রার্থীকে সমর্থন দিতেন। এটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতি।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতেও লিডারশিপের একটা ক্রাইসিস আছে। যেহেতু তাদের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র খুবই দুর্বল, সে কারণে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় না। আর যখন উন্মুক্ত করে দেবেন তখন তো একজন কর্মীও প্রার্থী হয়ে যেতে পারেন। ফলে বিভেদ থাকবে। আর এই বিভেদের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংঘাত হতে পারে।তিনি আরও বলেন, এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাষ্ট্র এবং নির্বাচন কমিশনের। রাষ্ট্র এবং নির্বাচন কমিশন যদি ঠিকঠাক মতো নির্বাচন পরিচালনার চেষ্টা করে তাহলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব। তাছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন তো সারা দেশে একদিনে হবে না। ধাপে ধাপে হবে। ফলে তাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব।প্রসঙ্গত, সারা দেশে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার উপযুক্ত। এবার চার ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী এপ্রিলের শেষের দিকে প্রথম ধাপের নির্বাচন শুরু হতে পারে।

রোববার খুলনার ফুলতলায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান খান বলেন, সামনে রোজা, এসএসসি পরীক্ষা। এর মধ্যে নির্বাচন করলে অসুবিধা হবে। ঈদের পরপরই প্রচারের সুযোগ পাবে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপে নির্বাচন হবে। আমরা চাই সুন্দরভাবে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন। সেইভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যে জনপ্রিয় সে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে নৌকা এবং নৌকার বিপক্ষ এই প্রতিযোগিতা যেন না হয় সেজন্যই এমন সিদ্ধান্ত (উন্মুক্ত রাখা) নেওয়া হয়েছে। এতে দলের বিভেদ এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে অনৈক্য কম হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে এমপি বা ব্যক্তির প্রভাব যেন না থাকে সেজন্য জেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা করে সমন্বয় ও সমঝোতা করতে পারে। কারণ যেখানে কাউকে এককভাবে দায়িত্ব তো দেওয়া হয়নি। আর যেহেতু দায়িত্ব দেওয়া হয়নি ফলে এককভাবে প্রভাব বিস্তার করাটা হয়তো কারও পক্ষে সম্ভব হবে না।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইসমাইল হোসেন সুমন বলেন,এমপি একটা সংসদীয় আসনের অভিভাবক। আমার উপজেলার যিনি এমপি তিনি আবার একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এখানে আমিসহ আরও ৭-৮ জন প্রার্থী আছেন। এখন অনেকেই হয়তো সমর্থন পাননি কিন্তু বলছেন, এমপি আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।কেউ বলছেন, এমপি আমাদের পক্ষে কাজ করবেন, কিংবা যেভাবেই হোক আমি এমপিকে দিয়ে দলকে আমার পক্ষে মুভ করাব। সেক্ষেত্রে এমপিকে কেন্দ্র করে মাঠে একটা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হতে পারে। বিশেষ করে যারা ভোটের রাজনীতি থেকে বিমুখ তারা এটা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমি শৈশব থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আমি জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। প্রার্থী হয়েছি। সবার কাছে যাব। আমি যে মানুষের জন্য কাজ করি এবং করতে চাই সেটা তাদের বলব।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো. মহিউদ্দিন বলেন, মনোনয়নের অনেক ধাপ আছে। এইবার একটা ধাপ কমে গেছে। অর্থাৎ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে দৌড়ানোর বিষয়টি আর নেই; জনগণের কাছে পরীক্ষা দেওয়া এবং আস্থা অর্জন করাই মুখ্য। সেই জায়গা থেকে আমি জনগণের কাছে গিয়েছি, যাচ্ছি এবং আমৃত্যু যাব। জনগণও আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে বলেই মনে হয়। বাকিটা আগামী নির্বাচনে বোঝা যাবে। নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার এমপিদের প্রভাব নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় স্বতন্ত্রভাবে জনগণের রায় নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিনয়ী মানুষ। আমার বিশ্বাস, তিনি কারও পক্ষে-বিপক্ষে নয় বরং সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে থাকবেন।ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিলেও স্বতন্ত্রদের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন নির্বাচনের পরও এই দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনও উন্মুক্তভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এতে কোন্দল আরও বেড়ে যেতে পারে-এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে যত দিন যাচ্ছে নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা ততই বাড়ছে। কারণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় এমপিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। আবার এমপিবিরোধীরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জনসংযোগের জন্য মাঠে নামিয়েছেন। অনেক জায়গায় মুখোমুখি অবস্থানের এসব প্রার্থী। ফলে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে শুরু করেছে।

Top
%d bloggers like this: