সারা দেশেই বইছে কনকনে ঠান্ডা বিপাকে দরিদ্ররা - Alokitobarta
আজ : সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা থেকে পিছু হটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি'র বেনাপোল শাখা কমিটির অনুমোদন বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এমন উদ্যোগ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে

সারা দেশেই বইছে কনকনে ঠান্ডা বিপাকে দরিদ্ররা


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : যতক্ষণ রিকশা চালাই, ততক্ষণ শরীরে শীত লাগে না। গরমের কাপড়ও গায়ে রাখা লাগে না। কিন্তু যাত্রী নামিয়ে যখন আবার যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে হয়, তখন হাড় কাঁপানো শীত লাগে। আবার রাতে ফুটপাতে পলিথিন বিছিয়ে গায়ে কাঁথা দিয়ে ঘুমাতে গেলে সারারাত শরীর গরম হয় না। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন কষ্টে দিন কাটছে।শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আলাপকালে এসব কথা বলেন আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী রিকশাচালক সুমন মিয়া।রংপুরের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ‘চার বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। অন্যান্য বছর শীতের শুরুতেই অনেকে রাতে কম্বল বিতরণ করতো। কিন্তু এবার কারও দেখা নেই। এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে এক টুকরো গরম কাপড় পাইনি। নিজের সামর্থ্য না থাকায় কিনতেও পারছি না। দিনে যা ইনকাম করি সপ্তাহ শেষে সংসারের খরচ মেটাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।গত কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতে সুমনের মতো খেটে খাওয়া মানুষের জনজীবন এমন বিপর্যস্ত। কাজের তাগিদে ঘর থেকে যারা বের হন, তাদের এমন শীতের কবলে পড়তে হচ্ছে। আর নগরের ভাসমান মানুষের দুর্ভোগ তো আরও কয়েকগুণ বেশি।হাইকোর্টের সামনের ফুটপাতে কয়েকশ ভাসমান মানুষ জীবনযাপন করেন। তাদের প্রায় সবাই ভিক্ষুক। দিনের বেলা ভিক্ষা করে এবং সন্ধ্যার পর সেখানেই সারিবদ্ধভাবে বিছানা পেতে রাত যাপন করেন।দেশের চার জেলায় বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।এছাড়া উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশেই বইছে কনকনে ঠান্ডা। শীতের দাপটে স্থবির হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জনজীবন। বৃষ্টির মতো পড়া কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে কম। বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটেখাওয়া দরিদ্র মানুষরা। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই বের হতে হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেক জায়গায় সাহায্য হিসাবে শীতবস্ত্র এখনো পৌঁছেনি। সেখানকার শীতার্ত মানুষরা শীতবস্ত্রের জন্য প্রশাসন ও বেসরকারি পর্যায়ে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান, ট্রেন ও নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া জেলাগুলো হলো-কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের চেয়ে কমেছে। কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নিকলীতেই, ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে শীত বাড়লেও আজ থেকে শীতের তীব্রতা কমতে শুরু করবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক শুক্রবার বলেন, শীতের তীব্রতা শনিবার থেকে কমে আসবে। তবে ঘন কুয়াশা খুব তাড়াতাড়ি কমবে না।আগামী তিন দিন কুয়াশা এমন থাকতে পারে। শনিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে শীত কমতে শুরু করে আবার মঙ্গলবার থেকে মেঘ দেখা দিতে পারে। তাতে কোথাও কোথাও শীতের অনুভূতি আবার বাড়তে পারে বলে জানান ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাতে শীত আবার বাড়বে।

ঘন কুয়াশার কারণে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া বিমানে ওঠানামায় বিলম্ব হচ্ছে। প্রভাব পড়েছে দূরপাল্লার প্রেন চলাচলেও। কুয়াশার কারণে শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে কলকাতায় অবতরণ করেছে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট। এছাড়া বিভিন্ন কারণে ঢাকাগামী ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। ১০৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের গতি কমিয়ে চালানো হচ্ছে। হাওড়-বিল ও পাহাড়ি এলাকা ঘিরে যাওয়া রেলপথে ১০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রাডার সিস্টেমস পর্যালোচনায় দেখা যায়, দাম্মাম থেকে আগত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৫০ ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের সম্ভাব্য সময় ছিল ৫টা ৩৬টি মিনিটে। তবে ঘন কুয়াশার কারণে নামতে না পেরে কলকাতায় অবতরণ করে ফ্লাইটটি। এছাড়া রাত ২টার পর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরগামী কুয়ালালালপুর, গুয়াংজু, দুবাই, শারজাহ, সিঙ্গাপুর ও দোহা থেকে আগত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ৮টি ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক মো. সফিকুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের সঙ্গে রেলপথ কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। তাই দূরপাল্লার প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন-যাত্রী সুরক্ষায় নির্দিষ্ট এলাকায় ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রেন ১০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হচ্ছে। আমাদের ট্রেনচালক ও গার্ডদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে-কুয়াশার মধ্যে যাত্রী সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ট্রেন চালাতে।

শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীতে ঘন কুয়াশা পড়া শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকেও কুয়াশা কাটেনি। দেশের অন্যত্রও একই অবস্থা। শুক্রবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ, রেল এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কম থাকায় নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটেছে। শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সৈয়দপুরগামী তিনটি উড়োজাহাজ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেনি। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার বলেন, ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কম থাকায় গত মঙ্গলবার থেকে সকালের দিকে ফ্লাইট ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। তবে কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে না। সারা দেশে শীতের চিত্র নিয়ে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রাজশাহী : উত্তরের হিমেল হাওয়ায় রাজশাহীতে একদিনের ব্যবধানে কমেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে শুক্রবার আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশায় দুপুর গড়িয়ে গেলেও দেখা মেলেনি সূর্যের। ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড়।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম জানান, চলতি জানুয়ারি মাসে রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি অবস্থান করছে তাপমাত্রা। শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক খলিলুর রহমান জানান, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে শিশু ও বয়স্ক মানুষের বের না হওয়াই ভালো। কারণ তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে গত ৩ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে হিমশিম খাচ্ছেন উত্তরের এই জনপদের মানুষ। ঠান্ডায় কাজে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। শুক্রবার সকাল ৬টায় কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শীতের এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে। অনেক এলাকায় এখনো সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ের শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।

পঞ্চগড় : পৌষের বিদায় ঘণ্টা বাজলেও দাপট দেখাচ্ছে শীত। গত ৫ দিন ধরে মেঘের আড়ালে সূর্য। শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতে বিপাকে পড়েছেন পাথর ও চা শ্রমিক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বের হতে দেখা গেছে তাদের। বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। খেত-খামারে কাজ করতে পারছেন না।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড় শীতপ্রবণ জেলা। শীত মোকাবিলায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২৬ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে এবং তা শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে আরও শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

দিনাজপুর : হাড়কাঁপানো কনকনে শীতে কাঁপছে এই অঞ্চলের মানুষ। শুক্রবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ মেঘলা থাকায় বৃহস্পতিবার দিনভর দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। শুক্রবারও ছিল একই অবস্থা। তবে বেলা ৩টার দিকে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মেলে। বিকালের পর শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে যায়। সন্ধ্যার পর জনশূন্য হয়ে পড়ে শহর। আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিস্থিতিতে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ।

পাবনা : পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী পাবনায় শীত মৌসুমে বেশি শীত এবং গরমকালে বেশি গরম অনুভূত হয়। মৌসুমের শুরুতেই পাবনা অঞ্চলে শীতের তীব্রতা পরিলক্ষিত হয়। শীতার্ত মানুষের মধ্যে গরম কাপড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চলসহ জেলার ৯ উপজেলায় কমপক্ষে ৫ লাখ দরিদ্র মানুষ প্রতিবছর শীতে কষ্ট পান। সরকারিভাবে ৯ উপজেলার শীতার্তদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে জনপ্রতিনিধিরা জানান। গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতার গ্রাফ ক্রমাগত নিচের দিকে। শুক্রবার জেলায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে জানান ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা নাজমুল হক রঞ্জন।

রাণীনগর (নওগাঁ) : বেড়েছে শীতের দাপট। কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল বাতাস। শুক্রবার ছিল রোদহীন। গত ৩ দিন ধরেই মেঘ-কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকছে সূর্য। এ কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। গত ৩ দিন ধরেই এই এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি কম্বল পাঠানো হয়েছে।

লালপুর (নাটোর) : লালপুরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। দিনভর কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে যুক্ত হয় হিমেল বাতাস। ফলে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। শৈত্যপ্রবাহ আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

শেরপুর : সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের পাহাড়ি এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ একটু বেশি। শুক্রবার কুয়াশা একটু কম থাকলেও ছিল কনকনে শীত। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

চাঁদপুর : শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র মানুষ। আয় কমে গেছে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যানচালকদের। ঠান্ডায় বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বেড়েছে। একাধিক মোটা কাপড় গায়ে জড়িয়েও শীত নিবারণ করা যাচ্ছে না।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : শুক্রবার ভোর থেকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শৈত্যপ্রবাহে আগৈলঝাড়ার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনমজুর, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে একটু উত্তাপ পাওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমল ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা আগের দিন ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতে কাবু হয়ে হয়ে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গাবাসী। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে।

কিশোরগঞ্জ : দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জে। শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জের হাওড় উপজেলা নিকলীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুক্রবারের তুলনায় আজ শনিবার শীত সামান্য বাড়বে। এ মাসজুড়েই শীতের দাপট থাকবে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তাদের একজন জামালপুরের মাজেদা খাতুন (৫৫)। তার স্বামী-সন্তানের কেউ তার সঙ্গে থাকেন না বলে দাবি করেন তিনি।আলাপকালে মাজেদা বলেন, ‘দিনে ভিক্ষা করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। তবে শুক্রবারে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ টাকা দিয়েই খাবার কিনে খাই। আর রাতে ফুটপাতেই ঘুমাই। তবে রাতে শীতে খুব কষ্ট হয়। ভালো একটা কম্বল কিনলেও রাখার জায়গা নেই। তাই পুরোনো কাঁথা গায়ে দিয়েই ঘুমাই। এভাবেই এ এলাকার ভাসমান মানুষ রাত যাপন করে।’

রমনা কালীমন্দির ফটকের সামনে ফুটপাতে গাছের পাতা, কাগজ, কাঠে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছিলেন চা দোকানি নাজমুল। এসময় আশপাশের আরও কয়েকজন তার সঙ্গে যোগ দেন। নাজমুল বলেন, ‘চায়ের দোকানের সারাক্ষণ পানি ব্যবহার করতে হয়। এতে শীতে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন চায়ের কেটলিতে হাত রেখে তাপ নেই। আবার শরীর গরম রাখতে গাছের পাতা, কাগজে আগুন ধরাই।দেশে কয়েক দিন যাবৎ দেশে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল দিনাজপুরে। সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সূর্যের দেখাও মেলেনি। সূর্যের দেখা না মেলায় শীত আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

Top
%d bloggers like this: