দেশে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি,মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি,মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার


মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন : দেশের জনসংখ্যা আসলে কত-এ নিয়ে আছে নানারকম বিভ্রান্তি। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ এবং নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন। তুলনামূলক বিশ্লেষণে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১২ শতাংশ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) যে শুমারি প্রকাশ করে তাতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সংস্থাটির কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর ‘ন্যাশনাল রিপোর্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ৫০ লাখ ৫৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। অপরদিকে সবচেয়ে কম রংপুর বিভাগ থেকে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দীপঙ্কর রায়। এর আগে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি। পরে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে যাচাই-বাছাই করে আরও একটি প্রতিবেদন দেয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।

জনশুমারির হিসাবে আরও দেখানো হয়, দেশে হিন্দু কমেছে, বেড়েছে মুসলমান। ২০১১ সালে ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমান ছিল ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছ ৯১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আগে হিন্দু ছিলেন ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশে। আগে বৌদ্ধধর্মের মানুষ ছিলেন শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। এখন হয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। আগে খ্রিষ্টান ধর্মানুসারী ছিলেন শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। এখন কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশে। আগে অন্যান্য ধর্মের মানুষ ছিলেন শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।গত জুলাইয়ে বিবিএস প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। পরে যাচাই-বাছাই করে নতুন যুক্ত হয় আরও অন্তত ৪৭ লাখ মানুষ। বিভিন্ন কারণে তখন ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ গণনায় বাদ পড়েছিল। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে গ্রামে বসবাস করে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৪ জন। শহরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১০৭ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে বাস করেন ১ কোটি ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে বাস করেন ৫৯ লাখ ৯০ হাজার ৭২৩ জন। দক্ষিণ সিটিতে ৪৩ লাখ ৫ হাজার ৬৩ জন। সবচেয়ে কম মানুষ বসবাস করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৪ জন।এতে আরও বলা হয়, দেশে ৭ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সি মানুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা ২০১১ সালের হিসাবে ছিল ৫১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা আগের শুমারিতে ছিল ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে বেড়েছে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার হার।

বিবিএস বলেছে, ১০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে গৃহস্থালির কাজ করেন ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ মানুষ। কৃষিতে ৩৭ দশমিক ৯১, সেবায় ৪৩ দশমিক ৬৮ এবং শিল্পে যুক্ত আছেন ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ মানুষ।এতে উল্লেখ করা হয়, দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্ব ৬৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ মানুষ নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৩৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশের। মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে ৩৯ দশমিক ১১ শতাংশ মানুষের।বিভাগভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৮২০, চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৬১২, ঢাকায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৬, খুলনায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ২১৮, ময়মনসিংহে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২, রাজশাহীতে ২ কোটি ৭ লাখ ৯৪ হাজার ১৯, রংপুরে ১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ৭১ এবং সিলেট বিভাগে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে বস্তিতে বসবাস করেন ১৭ লাখ ৩৬ হাজার ৩০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৩ এবং নারী ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৩ জন। এছাড়া ভাসমান জনসংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১৯৮১ সালে ছিল ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮২৮ জন। ৪১ বছর বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৮ জনে।প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ১ কোটি ২০ লাখ। কিন্তু জনশুমারির হিসাবে সেটি দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৮ জনে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বেশি নাগরিক ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন রয়েছেন বিদেশে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ, ১৪ লাখ ৩১ হাজার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেটের ৫ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ। সবচেয়ে কম বাংলাদেশি বিদেশে অবস্থান করছেন রংপুর বিভাগের। এই বিভাগ থেকে বিদেশে বসবাসকারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার। এরপর আছে ময়মনসিংহ বিভাগ, ১ লাখ ৫৪ হাজার।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন,প্রবাসীর সংখ্যা নিয়ে আমার কোনো জবাব নেই। গত বছরের জুনে যখন শুমারি হয়, এর ছয় মাস আগে যারা প্রবাসে গেছেন, শুধু তাদের তথ্য নেওয়া হয়েছে এই শুমারিতে। এর আগে যারা বিদেশে গেছেন, তাদের তথ্য আসেনি।তিনি আরও বলেন, এখন থেকে ১০ বছর পরপর যাতে শুমারি না হয়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা আমাদের রিয়েলটাইম ডেটা দরকার।বিবিএস বলেছে, দুই বছরে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন ৪ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ। ফেরার তালিকায় প্রথমেই আছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দারা। তাদের সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার। ঢাকা বিভাগে ফিরেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার। খুলনা বিভাগে ফিরেছেন ৩৯ হাজার জন।

Top
%d bloggers like this: