উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি


মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন : আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান সফলভাবে কার্যকর করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। নেওয়া হচ্ছে নানান কৌশল।ভোট প্রতিহত নয়, ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে শান্তিপূর্ণ পন্থায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে দলটি। সারা দেশে ইতোমধ্যে ৫ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে সাংগঠনিক টিম জেলা-উপজেলায় করছে কর্মিসভা।দলটির লক্ষ্য-যতটা সম্ভব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমানো। এরই অংশ হিসাবে সাংগঠনিক জেলার মাধ্যমে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের আত্মীয়স্বজন যাতে কেন্দ্রে না যান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন ৮ মে থেকে শুরু হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে দলটি। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৮০ জন নেতা এবং দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেওয়া ৬১ নেতাকে বহিষ্কারও করেছে।এমনকি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা ভোটে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃতদের কোনোভাবে সহায়তা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দিয়ে সরকার আরেকটা ‘ফাঁদ’ পেতেছে। উদ্দেশ্য-বিএনপিকে নির্বাচনে নেবে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে এবং থাকবে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না, বাংলাদেশে সেই নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে যায়নি। উপজেলা নির্বাচনেও যাবে না।’

দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে ৫ লাখ লিফলেট সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া জেলাগুলোকে বলা হয়েছে অনুরূপভাবে তারা লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করবে। এতে সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। জনগণ বিশ্বাস করে না এই অবৈধ সরকার ও তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। যে কারণে বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে। এবারও জনগণ বিএনপি আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপজেলার ভোট বর্জন করবে।দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, উপজেলার ভোট প্রতিহত করার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোট বর্জনে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক টিমে থাকা নেতারা জেলায়-উপজেলায় কর্মিসভা করছেন। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না যান, সে বিষয়ে গণসংযোগ আরও বাড়াতে।নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের অধীনে ১৪ ও ১৮ সালে এবং সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, যা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। নিজেরা ‘ডামি’ ভোট করেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও একইভাবে হচ্ছে। তাই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন হবে আগের মতোই প্রহসনমূলক।

কারণ, একই সরকার ও তাদের ‘আজ্ঞাবহ’ নির্বাচন কমিশন আছে এবং একই প্রশাসন আছে। যারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এবং গত ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সুবিধামতো ফর্মুলায় জাতীয় নির্বাচন করেছে। তাই তারা জনগণের কাছে বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। সে কারণেই বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকে এবারও উপজেলা নির্বাচন বর্জন করবে জনগণ। জনগণকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোট বর্জনের আহ্বান জানাতে তৃণমূলে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে কোনো প্রতিরোধ না করার জন্য বলা হয়েছে।এছাড়া কর্মিসভার মাধ্যমে আরও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সাবেক সংসদ-সদস্যসহ যারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নেতাদের ভোটের দিন নিজ এলাকায় থাকার জন্য। নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তারা এলাকায় থাকলে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করতে আরও উৎসাহ পাবেন।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জেলায় কর্মিসভা করছি। সভা শেষে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণও করছি। এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ৭ জানুয়ারির একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। আশা করছি, এবারও বিএনপির ডাকে জনগণ সাড়া দেবে। তারা ভোট বর্জন করবে।

লিফলেটে যা আছে : দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ নাম দিয়ে ‘দখলদার আওয়ামী সরকারের আসন্ন প্রতারণামূলক ডামি উপজেলা এবং সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করুন’ শিরোনামে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে কখনোই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরই আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে। দখলদার শাসকগোষ্ঠী প্রতিটি নির্বাচনের আগে নতুন নতুন কুটকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে জনগণকে প্রতারিত করে।এমতাবস্থায় বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তাঁর সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতঃপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এ ভাঁওতাবাজি ও ডামি নির্বাচন বর্জন করার জন্য বিএনপি দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।লিফলেটে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা অবরুদ্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ানো, গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির তীব্র সংকটে ভোগান্তির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি আইন, প্রশাসন, আদালত এখন জনগণকে দমন করার সরকারী হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করা হয়েছে।

এছাড়া জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতাকর্মীরা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির ১ দফার চলমান আন্দোলন অগ্রগামী করতে পিছপা হয়নি বলেও দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়।লিফলেটে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এখনো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় যৌক্তিক কারণে আসন্ন উপজেলাসহ স্থানীয় সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে নির্দয়ভাবে হরণ করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলে এ অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনি প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করতে জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বন জানাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এ লড়াই ন্যায়সংগত বলেই এর বিজয় অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য।

Top
%d bloggers like this: