শেখ হাসিনাকে দুটি বার্তা দিতে চায় ভারত - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এমন উদ্যোগ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান না দেখালে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হবে

শেখ হাসিনাকে দুটি বার্তা দিতে চায় ভারত


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী মাসে দিল্লি সফরে গেলে তাকে ভারত দুটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে চীনপন্থি ও ইসলামপন্থি নেতাদের বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে হবে।সোমবার আনন্দবাজার গ্রুপের দ্য টেলিগ্রাফ ‘অ্যাট ওয়ান ইউথ ইউএস, ইনডিয়া রেডিস পোল মেসেজ ফর বাংলাদেশ পিএম শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।টেলিগ্রাফ বলছে, ভারতের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার প্রতি এই জোড়া বার্তা বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্যের ইঙ্গিত বহন করে।

ওই সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের (ভারত ও মার্কিন) নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠক ভারত ও এই অঞ্চলের অন্য কয়েকটি দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য থাকলে এবার দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জি-২০ সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে এলে তখন তাকে এই দুটি বার্তা দেওয়া হবে।যদিও শেখ হাসিনা দাবি করে আসছেন যে, তার অধীনে হওয়া নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ নয়াদিল্লি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন তোলেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৯৬ শতাংশের বেশি আসনে জয়ী হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাধারণভাবে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, নির্বাচনের ফলাফল যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পক্ষে থাকবে, ততক্ষণ ভারত এর সুষ্ঠুতা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লি সব সময় প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে।

ঢাকার এক স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স এক্সপার্ট বলেন, শেখ হাসিনা এখনো ভারতের কাছে সমান প্রিয় এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কৌশলগত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নয়াদিল্লির এসব উদ্বেগের সমাধান না হলে ভারত এবারও শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাবে এমনটা নাও হতে পারে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের অনেকগুলো ইচ্ছাই পূরণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের দমন এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য চলাচলের অনুমতি দেওয়া। তবে নয়াদিল্লির জন্য এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো-চীনের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠতা। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের প্রশ্নে এই একটি ফ্যাক্টরই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে এক করেছে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আলোচনা নিয়ে সূত্রগুলো আরও যা জানিয়েছে তা হলো :

১. উভয় দেশই বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোতে (সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে) চীনপন্থি এবং ইসলামপন্থিদের ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে এই অবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে দুই দেশ। দিল্লি সফরের সময়ে শেখ হাসিনার কাছে এ নিয়ে উদ্বেগ জানাতে সম্মত হয়েছে ভারত।

২. উভয় পক্ষই দ্ব্যর্থহীনভাবে একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। হাসিনার সফরে ভারত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

৩. ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয়েছে যে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানে এর কোনো বিধান নেই।

৪. উভয় পক্ষে সম্পূর্ণ ঐকমত্য রয়েছে যে, শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্নীতি এবং ব্যাংক খেলাপিদের দমন করার জন্য দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। এর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাও মোকাবিলা করতে হবে।

৫. ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের বুঝিয়েছেন যে, বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার যে এজেন্ডা যুক্তরাষ্ট্র হাতে নিয়েছে তা দেশের ক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াত জোটকে নিয়ে আসবে। এতে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে এবং ভারতের নিরাপত্তা হুমকি বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে জামায়াতে ইসলামীকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করে তা নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা আপত্তি জানিয়েছেন। উলটো জামায়াতকে একটি কট্টর মৌলবাদী সংগঠন হিসাবে তুলে ধরেছে ভারত।

৬. নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন যে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে জো বাইডেন প্রশাসন ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ করা উচিত।

অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থানে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। তবে সূত্রগুলো বলছে, শুধু সে কারণেই এবারের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। ঢাকা থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবে। ফলে রাজনীতিতে অনাগ্রহী তরুণ প্রজন্ম দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে উৎসাহিত হবে। আবার ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য দিয়ে নয়, জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করলে তা আওয়ামী লীগকেও আরও শক্তিশালী করবে। পরিশেষে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।তবে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, একজন বলিষ্ঠ নেতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা শেখ হাসিনা এই পরামর্শগুলো শুনবেন বা মানবেন কিনা।

Top
%d bloggers like this: