ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের ক্ষমতার কাছে অসহায় তারা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এমন উদ্যোগ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান না দেখালে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হবে

ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে আজ। এর ফলে রপ্তানি আয় বাবদ যে অঙ্কের রুপি আসবে, একই অঙ্কের আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে পারবে ব্যাংক।বর্তমানে ভারত থেকে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় আসে। অর্থাৎ দুই বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হতে পারে রুপিতে।যদিও ভারত থেকে আমদানিতে ব্যয় হয় ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ভারতে রপ্তানি বাড়াতে পারলে সে হিসাব পালটে যাবে।এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়িকভাবে বাংলাদেশের খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রপ্তানির চেয়ে আমদানি অনেক বেশি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এতে বিশেষ কোনো উপকার হবে বলে মনে হয় না। কারণ মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার রুপিতে লেনদেন করা যাবে। এর বাইরে আমদানির দায় পরিশোধ করতে হবে সেই ডলারেই। তাহলে এত সামান্য লেনদেনে কী আর লাভ কী আর ক্ষতি। ভারতীয় মুদ্রা রুপি রিজার্ভ কারেন্সিও নয়। সে কারণে রুপি রিজার্ভে যোগ হবে না। এর আগে রাশিয়ায় রুপি লেনদেন চালু হয়েছিল। এখন আর তাদের মধ্যে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কারণ রুপি তো পৃথিবীর অন্য কোথাও চলে না।

ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের মতো বাণিজ্য হয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে আগের মতোই ডলারই হবে প্রধান মুদ্রা। এর সঙ্গে রুপিতেও লেনদেনের একটি ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ইস্টার্ন ও ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে রুপিতে লেনদেন করতে পারবেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। সোনালী ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ভারত অংশে এ সম্পর্কিত বিষয়ের দায়িত্বে থাকবে দেশটির আইসিআইসি ব্যাংক এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। রুপিতে লেনদেনের চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে অন্য ব্যাংককেও অনুমতি দেবে বাংলাদেশ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ আয়োজনে আজ ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর, বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি, ভারতীয় হাইকমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এছাড়া ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে-এমন ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট আমদানির বড় অংশ হয় চীন ও ভারত থেকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত মোট আমদানির ১৯ শতাংশের বেশি এসেছে ভারত থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে আমদানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার বা আমদানির ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত চীন থেকে এসেছে মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে আমদানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, একটি মুদ্রার আধিপত্য থেকে আরেকটি মুদ্রার আধিপত্যে ঢুকছি। সরল হিসাব-এখানে আধিপত্যকারীরাই লাভবান হবে, বাংলাদেশ নয়। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে ভ্রমণে যাবেন তাদের কষ্ট কিছুটা কমে আসবে, এখানে ব্যবসায়ীরা খুব বেশি লাভবান হবেন না। ব্যাংকাররা জানান, ডলারের ঋণ এখন অনেক ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। তাই ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বিদেশি ঋণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আবার কিছু ব্যাংকের ক্রেডিট লাইন কমাসহ বিভিন্ন কারণে কেউ কেউ চাইলেও আগের মতো আর ঋণ পাচ্ছেন না। এসব কারণে গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার কমে ২৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত বছরের জুনের তুলনায় যা ৩৭৭ কোটি ডলার কম। এতে বাণিজ্য ঘাটতি এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি অনেক কমলেও বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সংকটের উন্নতি হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে এখন ২৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে।সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত যে কোনো ব্যাংক শাখা থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) স্বীকৃত পাঁচটি মুদ্রা এবং কানাডিয়ান ডলারে এলসি খুলতে পারে। এজন্য আলাদা করে কোনো ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আইএমএফ স্বীকৃত পাঁচটি মুদ্রা হলো-ইউএস ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন ও চায়নিজ রেনমিনবি। ২০১৬ সাল থেকে চীনের মুদ্রা আইএমএফ স্বীকৃত হলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে এলসি খোলার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০১৮ সাল থেকে ইউয়ানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি রয়েছে। তবে ডলারের বাইরে ইউয়ানসহ অন্য মুদ্রায় লেনদেনে এখনো তেমন আগ্রহ তৈরি হয়নি।আঞ্চলিক বাণিজ্যে ডলারের প্রভাব কমাতে বেশ আগে থেকে চেষ্টা করে আসছে বড় দেশগুলো। বিশেষ করে ভারত, চীন ও রাশিয়া নিজেদের মুদ্রা লেনদেনের জন্য অনেকদিন ধরে আলোচনা করছে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। এরপর নতুন করে নিজ দেশের মুদ্রার প্রচলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। যদিও ডলারের বাইরে অন্য মুদ্রায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেক সাবধানি অবস্থানে রয়েছে।

Top
%d bloggers like this: