কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞ ! আসুন জেনে নেই আইন কি বলে - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞ ! আসুন জেনে নেই আইন কি বলে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞ !আসুন জেনে নেই আইন কি বলে।কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে পরবর্তী সময়ে অনেক আইনি ঝামেলার মধ্যেও পড়তে হয়। অনেক সময় প্রেমিক-প্রেমিকা আদালতপাড়ায় আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে বলে তারা কোর্ট ম্যারেজ করতে চায়।অনেক আইনজীবীও কোর্ট ম্যারেজ বিষয়টি ব্যাখ্যা না দিয়ে বিয়ের একটি হলফনামা সম্পন্ন করে দেয়। কিন্তু কোর্ট ম্যারেজ বলতে আসলে কী বোঝায়?আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিধান নেই। এটি একটি লোকমুখে প্রচলিত শব্দ।প্রচলিত অর্থে কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণত হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই বোঝানো হয়ে থাকে।এ হলফনামাটি ২০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।এটি বিয়ের ঘোষণামাত্র। অর্থাৎ এ হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে, এ মর্মে ঘোষণা দেয় মাত্র।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক আইন অনুযায়ী প্রথমে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। তারপর তারা ইচ্ছা করলে এ হলফনামা করে রাখতে পারে। পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ে না করে শুধু এ হলফনামা সম্পন্ন করা উচিত নয়। অনেক সময় বিয়ের হলফনামায় বিয়ের জন্য আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য শর্তগুলো না মেনেই হলফ করা হয়, বিশেষত সাক্ষীদের উপস্থিতি ছাড়াই। এতে বিয়ের হলফনামাটি পরিপূর্ণ হবে না।

বিয়ের নিবন্ধন জরুরি:মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। ছেলে ও মেয়েকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী, প্রতিটি বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। কার সঙ্গে কার,কত তারিখে, কোথায়, কত দেনমোহর ধার্য, কী কী শর্তে বিয়ে সম্পন্ন হলো, সাক্ষী ও উকিলের নাম প্রভৃতির একটা হিসাব সরকারি নথিতে লিখে রাখাই হলো নিবন্ধন। বর্তমান আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব মূলত বরের। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।অন্যথায় কাজি ও পাত্রের দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজার বিধান রাখা হয়েছে। যে ক্ষেত্রে কাজি বিয়ে পড়িয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে কাজি তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে নিবন্ধন করবেন। নিকাহনামা বা কাবিননামা ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিয়ে নিবন্ধন করা থাকলে তালাকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা সহজ হয়। স্ত্রীর দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্য কাবিননামার প্রয়োজন হয়। সন্তানের বৈধ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কাবিননামার প্রয়োজন হয়। কাবিননামা ছাড়া শুধু বিয়ের হলফনামা সম্পন্ন করা হলে বৈবাহিক অধিকার আদায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। বর্তমানে হিন্দু বিয়েতে নিবন্ধনের বিষয়টি ঐচ্ছিক করা হয়েছে।

কোর্ট ম্যারেজ করে ফেললে:যদিও কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিয়ে নেই, তবু প্রচলিত অর্থে কোর্ট ম্যারেজের নামে কেউ শুধু বিয়ের হলফনামা করে থাকলে এবং বিয়েটি নিবন্ধন করা না থাকলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কাজির সঙ্গে সরাসরি আলাপ করে বিয়ে নিবন্ধন করে নেওয়া উচিত এবং হলফনামার সঙ্গে সব তথ্য ও তারিখ মিল রেখে বিয়ের নিবন্ধন করে নিতে হবে। হিন্দুরাও বিয়ে নিবন্ধন করে নিতে পারেন।

কোর্ট ম্যারিজ। শব্দ দুটি শুনলেই মনে হয়- কোর্টে গিয়ে বিয়ে করার মতো কোনো ব্যাপার বুঝি! আদতে এর কোনো আইনগত ভিত্তিই নেই। এটি লোকমুখে প্রচলিত একটি ধারণা মাত্র। প্রচলিত অর্থে কোর্ট ম্যারিজ বলতে প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক-যুবতি বা নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই বোঝানো হয়ে থাকে।২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের (সরকারি রেজিস্ট্রার্ড উকিল) কার্যালয়ে গিয়ে এ হলফনামা সম্পন্ন করতে হয়। এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রি ও আকদ সম্পন্ন করেই কেবল এ ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। এরূপ না করা হলে ওই হলফনামার কোনো আইনগত ভিত্তি থাকবে না। কোনো এক সময় যদি একপক্ষ অন্যপক্ষকে ত্যাগ করে তাহলে আইনগত প্রতিকার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফুল হাসান খান বলেন,কোর্ট ম্যারিজ বলতে আইনে কোনো বিধান নেই। তবে যখন কেউ কাবিন রেজিস্ট্রি ও আকদ সম্পন্ন করে নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে এ মর্মে হলফনামায় সই করে যে- তিনি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে তার পছন্দের ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে বসবাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তখন এটা বিয়েপরবর্তী নানা সমস্যার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।দুইজনের ভালোবাসার সম্পর্ককে পরিণয়ে রূপ দিতে গিয়ে যখন অনিশ্চয়তার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন অনেকেই মনে করেন কোর্ট ম্যারিজ করবেন। কোর্ট ম্যারিজ নয় বরং নিরূপায় হলে আপনি দুইজন সাক্ষী নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে আকদ ও কাবিন রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হবে।মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন-১৯৭৪-এর ধারা ৩-এ বলা হয়েছে- অন্য যে কোনো আইন, প্রথা বা রীতিতে যে কোনো কিছু থাকা সত্ত্বেও মুসলিম আইন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিবাহ এ আইনের বিধানাবলী অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করতে হবে।

লেখক,সাংবাদিক,মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া।

Top
%d bloggers like this: