শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে
আলোকিত বার্তা:পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ভোটগ্রহণ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রবিবার ভোটগ্রহণ শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।ইসি সচিব জানান, অনিয়মের কারণে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে ১২টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত কেন্দ্রগুলো হলো মুন্সীগঞ্জের ৩টি, ঢাকার ধামরাইয়ের একটি, কুমিল্লার চান্দিনায় ৪টি, কুমিল্লার মেঘনায় দুটি ও কুমিল্লার হোমনার দুটি। বাকি কেন্দ্রগুলোতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।তিনি বলেন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ৭ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের আইনের আওতায় সাজা দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচনে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৪৯টি উপজেলাতে প্রায় ১২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করেছিলাম। ঢাকা ও স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে তিন শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আমরা নিয়োগ করেছিলাম।তার পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, এমন কি গ্রাম পুলিশও আমরা নিয়োগ করেছিলাম।ইসি সচিব বলেন,আমাদের প্রস্তুতি ভালো হওয়ার কারণে চার ধাপের নির্বাচনে আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, একটি লোকও নিহত হয় নাই। হয়তো কিছু আহত হয়েছে। এবং নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা অনেকগুলো উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এমন কি আমরা পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করেছি। কয়েকজনকে আমরা সাময়িক বরখাস্তও করেছি।হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন,এর মধ্যে আমাদের যেসব কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, সেসব কেন্দ্র তদন্ত করে ইসি ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবে। আর যেসব উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে, সেসব উপজেলা নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে এর তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আগামী ১৮ জুন ৩০ থেকে ৪০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে।
চার ধাপের ভোটগ্রহণে ভোটের হার নিয়ে ইসি কতো খানি সন্তুষ্ট-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আহত, নিহত যাতে না হয়, সেটার ওপরে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। আপনারা আমাদের শতকরা হারের কথা বলেছেন, শতকরা হার বাড়াতে গেলে অনিয়মের মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। এ জন্য ভোটাররা যে পরিমাণ আসুন না কেন, আমরা ওটার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা যদি ভোটার হার বাড়াতে চাই, তাহলে আবার সেই স্থানীয় প্রশাসন বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অনিয়মের দিকে ঝুঁকে পড়বে।হেলালুদ্দীন আহমদ আরো বলেন, অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মানুষের যাতে প্রাণহানি না হয়, আহত না হয়, সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রকৃতভাবে কতো লোক ভোটকেন্দ্রে আসে, সেটাই চেয়েছি।জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাহলে ৮০শতাংশ ভোট কীভাবে পড়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের তুলনা করলে চলবে না। জাতীয় নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু উপজেলায় নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহণ করেনি। আমরা চেয়েছি যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা যাতে অংশগ্রহণ করে।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির ব্রাস্ট ফায়ারের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তো নির্বাচনকালীন সংহিসতা নয়। আপনারা কি এটাকে তাই বলবেন? আপনারা জানেন, সেখানে পাহাড়িদের বিভিন্ন গ্রুপ কাছ করে। সেখানে ভোটকেন্দ্র দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আঞ্চলিক দলের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য এমন হতে পারে। এটাকে আমরা নির্বাচনী সহিংসতা বলতে নারাজ।তিনি আরো বলেন, কড়াকড়ি সব সময় ছিল। সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে। তখন সেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এখনো তাই নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমর্থকরা কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে আসেনি। আমাদের অনুমান ৪০ থেকে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে, তা একটা দল যে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের।ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফলাফল আসতে দেরি হয়। তৃতীয় ধাপে ইভিএমের ফলাফল রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (আরএমএস) আনতে চেয়েছিলাম। ইন্টারনেট ডাউন থাকার কারণে আমরা পারিনি। চতুর্থ ধাপে আমরা সেটা বাদ দিয়েছি। ম্যানুয়ালি ফলাফল আনা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়েছিল।
হেলালুদ্দীন আহমদ আরো বলেন, প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ৪৬৫টি উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ৪০টির মতো উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। যেসব উপজেলার ভোট আদালত ও ইসি নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোতে তদন্ত সাপেক্ষে ভোটের দিন ঠিক করা হবে।পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে সম্পন্ন করছে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কোনো নিহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন হেলালুদ্দীন আহমদ।অথচ দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ফলাফল নিয়ে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের বাস্ট ফায়ারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সাত জন নিহত হন। আর আহত হন ১৫ জনের মতো।