খাল দখল-ভরাট এবং পুনরুদ্ধারের নামে খেলা চলছে - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ আগামী তিনদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ ঝড় বৃষ্টি হতে পারে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে আবার ফিরে আসতে না পারে সেজন্য কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা বৈষম্য ও শোষণের শিকল ছিঁড়ে বারবার গণমানুষকে মুক্তি দিয়েছে দেশের তরুণরাই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই দেশের সব সাংবাদিকের জন্য বেতন ৩০ হাজার অথবা ৪০ হাজার-ই হোক এর নিচে নামা যাবে না নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস উল্টে খাদে, আহত ১০ প্রশাসনের শীর্ষ পদে রেকর্ড চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ,১২ সচিব ওএসডি ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী এসপিরা এখনো আছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ব্যাংক লুটের টাকা ৪ দেশে পাচার,নজিরবিহীন জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসছে

খাল দখল-ভরাট এবং পুনরুদ্ধারের নামে খেলা চলছে


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:রাজধানীর অধিকাংশ খাল দখল-ভরাট এবং পুনরুদ্ধারের নামে খেলা চলছে। শুধু সরকারের ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।একই খাল অবৈধ দখলদারের কবল থেকে উদ্ধার, ফের দখল-ভরাট, আবার উদ্ধার অভিযান। এসবই চলছে বছরের পর বছর। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। এ অবস্থায় রোববার রাজধানীর ৬টি খাল পুনরুদ্ধার কাজের উদ্বোধন করেন বর্তমান সরকারের তিন উপদেষ্টা। এর মধ্যে বাউনিয়া, রূপনগর, বেগুনবাড়ি ও কড়াইলের আগে ৩ বার দখলমুক্ত করা হয়েছে। মাণ্ডা ও কালুনগর খাল ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত রাখা হয়। এ দিন খাল খনন উদ্বোধনে সরকারের তিন উপদেষ্টা লালগালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান এক্সকেভেটরে উঠে কাজের সূচনা করেন। উপদেষ্টাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই চলার পথে লালগালিচা দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দেয় ডিএনসিসি।

স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, সীমানা নির্ধারণ না করার কারণেই মূলত খালগুলো স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখা এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। বিগত দুই মেয়র খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করেন। সেখানে কোন রেকর্ড ধরে সীমানা নির্ধারণ করবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। সিএস, আরএস এবং বিএস বা সিটি জরিপ কোনটি অনুসরণ করবে তা নির্ধারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা জানান, সিএস রেকর্ড ধরলে খাল উদ্ধার জটিল কাজ। কেননা আরএস এবং বিএস রেকর্ড অনুসরণ করে বড় বড় স্থাপনা গড়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে রেকর্ডে খাল এক জায়গায় দেখানো এবং বাস্তবে খালের অবস্থান অন্য জায়গায় বহমান। এসব জটিলতা নিরসনে সীমানা নির্ধারণ করার পর খালগুলোর টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে দুই সংস্থা সিদ্ধান্তের জন্য আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে। কেননা বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধারে সিএস রেকর্ড অনুসরণ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। আর আইন মোতাবেক সব ধরনের কার্যক্রম সাধারণত সবশেষ রেকর্ড ধরে করা হয়ে থাকে। খাল উদ্ধারের ক্ষেত্রে একেক জায়গায় একেক রেকর্ড অনুসরণ করতে হচ্ছে; এ বিষয়ে কেউ আদালতে গেলে সিটি করপোরেশনের পক্ষে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হবে না।

৬ খাল পুনরুদ্ধার : বর্ষার আগে ঢাকার ১৯ খাল পুনরুদ্ধারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাউনিয়া, রূপনগর, বেগুনবাড়ি, মাণ্ডা, কালুনগর খাল এবং কড়াইল লেকসহ ২৩ কিলোমিটার জলাশয়ের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর খালগুলো ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) খালগুলোর তদারকির কাজ শুরু করে। তবে এর আগেও কিছু খালে ডিএনসিসি পানি প্রবাহ রাখতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও ডিএসসিসি কোনো খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি।আরও জানা গেছে, মেয়র আনিসুল হক তার সময়ে বাউনিয়া, রূপনগর, বেগুনবাড়ি, কড়াইল খালে নিজস্বভাবে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ১ বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। এরপর মেয়র আতিকুল ইসলামের সময়ে এ খালগুলোতে ২ বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির মাণ্ডা ও কালুনগর খালে মেয়র সাঈদ খোকনের সময়ে কোনো উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। তবে মেয়র তাপস খালের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দফা উচ্ছেদ অভিযানে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে। এরপর যখনই দুই খালের কোথাও দখল হয়েছে খবর পাওয়ামাত্রই তা অপসারণ করা হয়েছে। এর বাইরেও কয়েকটি খাল দখলমুক্ত করার পর খনন হয়েছে। পাশাপাশি ৩টি খালের আধুনিকায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে; যা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল রোববার সকালে মিরপুর-১৩ এলাকায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ৬টি খালের সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কীভাবে বর্ষার আগে খালগুলোতে প্রবাহ ফেরাতে পারি সেই বিষয়ে আমরা ৩-৪টি মন্ত্রণালয় কাজ করছি। প্রথমে খনন করব, এরপর ধাপে ধাপে বাকি কাজ এগোব।তিনি বলেন, আমরা চাই খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র। এই খালে মশা ছাড়া কিছুই নেই। আমরা স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি করে দেব। তারাই খাল দখল, দূষণ রোধে কাজ করবে। খালের পাড়ে সবুজ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব, একই সঙ্গে খালে মাছ যাতে বাঁচে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি এই বর্ষার আগে ১৯টি খালের পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পারব। আমরা এই ১৯টি খাল নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করার পরিকল্পনা করছি।গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, গত সাড়ে ১৬ বছরে লুটপাট ও দুর্নীতির ফলে খালগুলো দখল ও দূষণের শিকার হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজউক টোটাইল বিল দখলমুক্ত করেছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে উন্নত করা যায়, সে বিষয়েও কাজ চলছে। প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাউনিয়া, রূপনগর, বেগুনবাড়ি, মাণ্ডা, কালুনগর খাল এবং কড়াইল লেকসহ ২১ কিলোমিটার জলাশয়ের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, খালের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের, যার সমাধান মুহূর্তেই করা সম্ভব নয়। আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি তার মধ্যে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ তৈরি অন্যতম। আমরা ১৯টি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ চ্যানেল তৈরি করে পার্কের মতো করা। যাতে খাল দূরে সরে না যায়, কাছে আসতে বাধ্য হয়।তিনি জানান, অন্য যে কোনো সরকার থাকলে এই কাজে চিঠি চালাচালি করতে সময় যেত। আমরা তাই কোনো প্রকল্পে না গিয়ে কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা কাজটি শুরু করে দিয়ে যাই। প্রয়োজন হলে পরবর্তী সরকার এসে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম ও প্রকল্প হাতে নেবে।

লালগালিচায় খাল খননের উদ্বোধন : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টা লালগালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান এক্সকেভেটরে উঠে কাজের সূচনা করেন। রোববার মিরপুর-১৩ নম্বরে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬টি খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এভাবেই উদ্বোধন করেন।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।আগের মেয়ররাও এমন হাঁকডাক দিয়ে খাল উদ্ধারে নামতেন, এখনো আপনারা লালগালিচায় খালে নেমে উদ্বোধন করছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ান হাসান বলেন, আমি ওটা (লালগালিচা বিছানো) খেয়াল করিনি, হয়তো আপনি সেটা খেয়াল করেছেন।তিনি বলেন, আগে খাল উদ্ধার করা হয়নি, কিন্তু এখন আবার এই কার্যক্রম হাতে নিয়ে লাভ কী? এমনটা মনে হলে আমরা করবটা কী? আমাদের ৮ মাস কিংবা ১৪ মাসে পুরোটা করা সম্ভব হবে না, কিন্তু শুরুটা তো করে দিতে পারি।

Top