আমাদের উচিত সময়মতো তা পরিশোধ করে ফেলা
আলোকিত বার্তা: আমরা আমাদের প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে ঋণ করে থাকি। আমরা যারা ঋণ নিয়ে থাকি, আমাদের উচিত সময়মতো তা পরিশোধ করে ফেলা। কেননা, সময়মতো পরিশোধ না করলে ঋণদাতা থেকে কখনো কষ্টদায়ক আচরণ প্রকাশিত হতে পারে। এক্ষেত্রে সবর করা ও পাল্টা জবাব না দেওয়া কর্তব্য। ওজর থাকলে তাকে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলা উচিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোকের কাছ থেকে একটি উটনী ঋণ নিয়েছিলেন। সে তা চাইতে এসে কঠোর ব্যবহার করল। তখন উপস্থিত সাহাবীগণ তার সাথে অনুরূপ ব্যবহার করতে চাইলেন।নবী (সা.) তাঁদের বাধা দিয়ে বললেন, ‘তাকে বলতে দাও। পাওনাদারের কিছু বলার আছে।’ এরপর তাদের তাকে একটি উটনী কিনে দিতে বললেন। তাঁরা খুঁজে এসে বললেন, আমরা (এর সমকক্ষ উটনী পাইনি) এর চেয়ে উৎকৃষ্টই শুধু পেয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই কিনে দাও। ( জেনে রেখ) তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে পরিশোধে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। (সহীহ বুখারী : ২৩৯০)।
পাওনাদারের কিছু বলার আছেÑ একথার অর্থ হলো, সময়ের আগে বা পরে তার পরিশোধ তলবের হক আছে। তবে যথাযথ আদব অবশ্যই রক্ষা করবে। কিন্তু লোকটি (সম্ভবত বেদুঈন ছিল) তা রক্ষা করেনি। এবং কার সঙ্গে? সায়্যেদুল বাশার, সায়্যেদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীনের সঙ্গে (এবং খুব সম্ভব সে সময়ের আগেই পরিশোধ তলব করেছিল)। তা সত্ত্বেও পাওনাদারের এই আচরণ তিনি সহ্য করেছেন। শুধু তাই নয়, তার যে পরিশোধ তলবের অধিকার আছে সেটাও উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। উপরন্তু তার ঋণ উত্তমরূপে পরিশোধ করেছেন।
ঋণ দেওয়ার জন্য দাতার শোকর আদায় করা, তার জন্য দুআ করা। এতে সে খুশি হবে এবং ঋণদানে উৎসাহ বোধ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আবী রাবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ থেকে ত্রিশ বা চল্লিশ হাজার (দিরহাম) ঋণ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তিনি তা পরিশোধ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন। ঋণের বিনিময় তো হলো পরিশোধ ও কৃতজ্ঞতা। (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৪১০)।
ঋণ বান্দার হক, যা পরিশোধ করতে হয় অথবা দাতা কর্তৃক মাফ পেতে হয়। এছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই। আল্লাহ তাআলা তা মাফ করেন না। এজন্য তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করে নেওয়া উত্তম, মৃত্যুর আগে-আগে তো অবশ্যই। কিন্তু (আল্লাহ না করুন) তার আগেই যদি কারো মৃত্যুক্ষণ এসে যায়, তবে কাউকে অসিয়ত করে যাওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, ঋণ ছাড়া শহীদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ মুসলিম : ১৮৮৬)।
নবী (সা.)-এর কাছে মায়্যিত উপস্থিত করা হলে জিজ্ঞাসা করতেন ঋণ আছে কি না, থাকলে পরিশোধের মতো কিছু রেখে গিয়েছে কি না। রেখে না গেলে তিনি নামায পড়তেন না। সালামা ইবনুল আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিশে ছিলাম। তখন একজন মায়্যিত উপস্থিত করা হলো। লোকেরা তাঁকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার ওপর কি কোনো ঋণ আছে? লোকেরা বলল, জি না।
আবার জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, জি না। তখন তিনি নামায পড়ালেন। তারপর আরেকজন মায়্যিত উপস্থিত করা হলো। লোকেরা তাঁকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার ওপর কি কোনো ঋণ আছে? বলা হলো, জি হ্যাঁ। জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? লোকেরা বলল, তিন দিনার রেখে গেছে। তখন তিনি নামায পড়ালেন।
এরপর আরেকজন মায়্যিত আনা হলো। লোকেরা তাঁকে নামায পড়ানোর অনুরোধ করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, জি না। জিজ্ঞাসা করলেন, তার ওপর কি কোনো ঋণ আছে? বলা হলো, তিন দিনার আছে। তিনি বললেন, তোমাদের সাথীর নামায তোমরাই পড়। এ কথা শুনে আবু কাতাদা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি নামায পড়িয়ে দিন, তার ঋণ আমার জিম্মায়। তখন তিনি নামায পড়ালেন। (সহীহ বুখারী : ২২৮৯)।