দেশের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : দেশের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা ভর্তি পরীক্ষার সময় ঘোষণা করেছে। এ পদ্ধতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময়ের কারণে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। এসব কারণে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাইলে অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে তিন গুচ্ছের (সাধারণ, প্রকৌশল ও কৃষি) ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত শিক্ষাবর্ষে সাধারণ ২৪টি পাবলিক, প্রকৌশলী ৩টি ও কৃষির গুচ্ছের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। গুচ্ছ পদ্ধতির মূল লক্ষ্য ছিল-শিক্ষার্থীদের আর্থিক কষ্ট লাঘব, ভোগান্তি দূর, সময় সাশ্রয় ও হয়রানি বন্ধ করা। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হলেও, এর সুবিধার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম বা দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত চলমান। শুধু তাই নয়, গত শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া এখনো শেষই হয়নি। এখনো চলছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ বলেন, গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে, এতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা তাদের নিজস্ব অধিকার। তবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বিষয় বিবেচনা করে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব।প্রথম গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে। এবার এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথমবর্ষের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি হচ্ছে, নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা। এছাড়া শিক্ষক ও কর্মকর্তা কেউই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নয়। সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবার আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে একটা ধারা আছে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা। বিগত সময়ে স্বৈরাচারী কায়দায় আমাদের ওপর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চাপিয়ে দেওয়া হয়। এবার একাডেমিক কাউন্সিলে সবার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।এদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ থেকে সরে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)। ১১ জানুয়ারি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এককভাবে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ভর্তিসংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। এর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ কুয়েট, রুয়েট ও চুয়েট একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রকৌশল গুচ্ছে থাকবে না বলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ আহমাদ চৌধুরী বলেন, কুয়েট বেরিয়ে যাওয়ায় প্রকৌশল গুচ্ছ আর থাকছে না। ফলে একক ভর্তি পরীক্ষা হলে শুধু রাজশাহীতেই ভর্তি পরীক্ষা নেবে রুয়েট। এদিকে প্রকৌশলী গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। ২৬ নভেম্বরের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
গত শিক্ষাবর্ষের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ১২৭তম একাডেমিক কাউন্সিলের ৯০ শতাংশ শিক্ষক গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু তখন সম্ভব হয়নি। এবার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের একই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে এক সূত্রে জানা গেছে।গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের দাবি করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান।
এদিকে কৃষি গুচ্ছের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে, আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে তিন গুচ্ছের ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বিষয়টি নিয়ে দোটানা তৈরি হয়েছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যেও।