তথ্য অধিকার ছাড়া সব অধিকার মূল্যহীন
মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন: তথ্য অধিকার ছাড়া সব অধিকার মূল্যহীন’ মন্তব্য করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটা সংস্কার প্রয়োজন, অচিরেই সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কাজ করব।রোববার সকালে আগারগাঁওয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরো কার্যালয়ে তথ্য অধিকার ফোরাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার : এনজিওগুলোর সহায়ক ভূমিকা’ শীর্ষক এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক সাইদুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১ মো. আবু সাইদ, এনজিও ব্যুরোর পরিচালক আনোয়ার হোসেন, মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান প্রমুখ।
আসিফ নজরুল বলেন, তথ্য অধিকার নিয়ে আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। কারণ, এ অধিকারটা অন্যান্য অধিকারের মতো নয়। তথ্য অধিকার ছাড়া কিন্তু সব অধিকার মূল্যহীন। প্রতিটি অধিকারের সঙ্গেই এ অধিকার সংযুক্ত। তিনি বলেন, যারা তথ্য অধিকারের কথা বলেন, তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাও বলতে হবে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে।আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবাদটা সবসময়ই বজায় রাখতে হবে। এমনকি আমাদেরও যদি কোনো ভুল হয়, তারও প্রতিবাদ জানাতে হবে।সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক শাহীন আনাম। তিনি তথ্য অধিকার ফোরামের কার্যপরিধি পর্যালোচনা করে দেশব্যাপী এর সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রসার এবং সেজন্য সব অংশীজনের অংশগ্রহণে জাতীয় একটি সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ৯ দফা সুপারশি করেন। সভায় সঞ্চালনা করেন আইসোশ্যালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনন্য রায়হান।সভায় বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য অধিকার আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিকদের ক্ষমতায়িত করা, নাগরিকদের তথ্য দিয়ে তাদের সক্রিয় করা। তাই এ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করতে সরকারি দপ্তরগুলোকে বাধ্য করতে হবে। তথ্য অধিকার আইন সংস্কার করা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা যায় কি না, এটা গভীরভাবে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা দরকার। কারণ, রাজনৈতিক দল যদি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ না হয় এবং জবাবদিহির আওতায় না আসে, তাহলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করেও কোনো লাভ নেই।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশন শব্দটি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মি করা হয়েছে। দলীয় প্রভাবে প্রভাবান্বিত ব্যক্তিদের অবসরের পর একধরনের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার হয়ে গেছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি বলেন, যাদের সারা জীবনের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যেই ছিল তথ্য ধরে রাখা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য গোপন রাখা, তাদেরই মানবাধিকার কমিশন বা তথ্য কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তথ্য অধিকার কমিশন সংস্কারের দাবি জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ অবস্থা একটা দেশে চলতে পারে না। তথ্য কমিশন সংস্কার করতে হবে। এজন্য সরকার কর্তৃক এককভাবে যেন তথ্য কমিশন নিয়োগ না দেওয়া হয়। সরকার কিছু নাম প্রস্তাব করতে পারে এবং সেই নামের ওপর ভিত্তি করে অংশীজনদের মতামত নিয়ে তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে।