৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী,মন খুলে কথা বলার মতো’ শিক্ষক পান না - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী,মন খুলে কথা বলার মতো’ শিক্ষক পান না


মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:মানসিক এ অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে বিষণ্ন হয়ে পড়েন অনেকে।মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন পড়ে সঠিক দিক-নির্দেশনার,যা সবচেয়ে ভালো দিতে পারেন একজন শিক্ষক।অথচ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মন খুলে কথা বলার মতো শিক্ষক পান না শিক্ষার্থীরা।শিক্ষাজীবনেই কর্মজীবন কেমন হবে,তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা।একই সঙ্গে সামাজিক,অর্থনৈতিক, মানসিকসহ বিভিন্ন জটিলতায় পড়েন তারা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংকট তুলনামূলক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি।বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী- সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মন খুলে কথা বলার মতো শিক্ষক পান না।পাবলিক তথা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১ দশমিক ২ শতাংশ।

সংস্থার কর্মকর্তা ও গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে জরিপ করেছেন। তাতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে ভার্চুয়ালি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শীর্ষক জরিপের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।জরিপের তথ্যানুযায়ী- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ শিক্ষকদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বাকি ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা খুব সহজে নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সামনে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন।

অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আর ৪১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ফ্যাকাল্টির শিক্ষকদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।আঁচল ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে নজর দেওয়া দরকার বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত তুলে ধরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫২ জনেরও বেশি একবার হলেও আত্মহত্যার চিন্তা করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।জরিপের তথ্যানুযায়ী অংশগ্রহণকারী মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার উপকরণও জোগাড় করে ফেলেছিলেন এমন শিক্ষার্থী ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এলেও কোনো চেষ্টা করেননি ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর কখনোই আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসেনি এমন শিক্ষার্থী ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ।জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাদের মাথায় অন্তত একবার হলেও আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। তাদের আত্মহত্যার ভাবনার পেছনে বেশ কিছু কারণও উঠে এসেছে। এরমধ্যে প্রধান কারণ হলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা।শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জরিপে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের হতাশার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয়েছে। মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বিভিন্ন কারণে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার কারণে হতাশায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন মোট শিক্ষার্থীর ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিয়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, হল বা আবাসিক পরিবেশ নিয়ে ৯ শতাংশ, সহপাঠী বা শিক্ষকের বুলিংয়ের কারণে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উপরের সব কারণের জন্য ১ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাকি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য কারণে হতাশায় ভুগছেন।ফাউন্ডেশনটির এবারের জরিপে মোট ১ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। বয়সের সীমা অনুযায়ী ১৭-২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন ৫৮০ জন, যা শতাংশের হিসাবে ৩৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২৩-২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অংশ নেন ৯১৯ জন, যা শতাংশের হিসাবে ৫৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২৭-৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অংশ নেন ৭১ জন, যা ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫৬ জন পুরুষ, ৮১৩ জন নারী এবং একজন তৃতীয় লিঙ্গের। তাদের মধ্যে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ২৫১ জন, দ্বিতীয় বর্ষের ২৫৪ জন, তৃতীয় বর্ষের ৩৬৯ জন, চতুর্থ বর্ষের ৩৪০ জন এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন ৩৪১ জন। এছাড়া সদ্য পড়ালেখা শেষ করা ১৫ জন।সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউমেনিটিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক, কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্প এডিডি ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।

Top