পদায়ন আটকে আছে সাড়ে ৩ মাস - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদায়ন আটকে আছে সাড়ে ৩ মাস


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : রেগুলার বা স্বাভাবিক পদোন্নতি পাওয়া ১২ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ও ২৭ পুলিশ সুপারের (এসপি) পদায়ন আটকে আছে সাড়ে ৩ মাস। পদ শূন্য হওয়া সাপেক্ষে এসব কর্মকর্তাকে রেগুলার পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা এখনও স্বপদেই দায়িত্ব পালন করছেন। পদায়নের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এখনো পৌঁছেনি।এছাড়া পদ না থাকলেও সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে ২৯০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তারাও জানেন না কবে হবে পদায়ন। সুপার নিউমারারি পদোন্নতি পাওয়াদের পদায়নের ক্ষেত্রে নতুন পদ সৃষ্টি অথবা অবসরের কারণে পদ খালি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।এমন বাস্তবতার মধ্যেই পুলিশ সপ্তাহ সামনে রেখে ১৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) পদে ১৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ১০ জনই সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে পুলিশে এক ধরনের পদোন্নতি জট সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এমন বাস্তবতায় আসন্ন পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পুলিশের উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন পদ বৃদ্ধির দাবি জোরালো ভাবে তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ইউনিটের শীর্ষ পদ গত দেড় থেকে পাঁচ মাস ধরে শূন্য। অতিরিক্ত আইজিপির এ পদগুলোর ভারপ্রাপ্ত হিসাবে চলতি দায়িত্ব চালিয়ে নিচ্ছেন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। তারা শুধু রুটিন কাজ করতে পারছেন। এসব ইউনিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যুগান্তরকে বলেন, অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না।এছাড়া ১১টি ডিআইজি ও ১৫টি অতিরিক্ত ডিআইজি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে পদ শূন্য থাকা পুলিশের ওইসব ইউনিটে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। শূন্য পদগুলোতে পদায়নের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অ্যাডমিন) মো. আমিনুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি কেটে দেন। দায়িত্বশীল অন্য কর্মকর্তারাও এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র দাবি করেছে, রেগুলার পদোন্নতি পাওয়াদের পদায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। সুপার নিউমারারি পদোন্নতি পাওয়াদের বিষয়ে কোনো আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ এর উপ-সচিব বলেন,পদায়নের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখান থেকে আমাদের কাছে আসে। আমি এখনো কোনো প্রস্তাব পাইনি। এ বিষয়ে আমার জানাও নেই।এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘চাকরিতে পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বেতনটা তার অধিকার। এর জন্য তিনি আদালতেও যেতে পারবেন। তবে অন্যান্য জিনিস যেমন-ট্রান্সফার, পোস্টিং, ছুটিসহ যা আছে এগুলো ‘ইটস এ মেটার অব প্রিভিলিজ’। কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে এগুলো ঠিক করবে। তবে পদোন্নতি পাওয়ার পর যত কম সময় স্বপদে রাখা যায় ততই ভালো।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক দিনে ৪ প্রজ্ঞাপনে পুলিশের ৩২৯ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়। এরমধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৫২ এবং এসপি পদে ১৭৭ জন পদোন্নতি পান। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে (গ্রেড-৪) পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে সুপার নিউমারারি ১৪০ জন এবং ১২ জন রেগুলার বা স্বাভাবিক পদোন্নতি পান। আর এসপি পদে (গ্রেড-৫) পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে সুপার নিউমারারি এসপি ১৫০ জন এবং ২৭ জন রেগুলার পদোন্নতি পান।জানা যায়, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে রেগুলার বা স্বাভাবিক পদোন্নতি পাওয়া ১২ কর্মকর্তার মধ্যে চারজন এখনো জেলায় এসপির দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী ও যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।এছাড়া অন্য আট কর্মকর্তা ডিএমপি, সিএমপি ও নৌ পুলিশ খুলনায় আগের পদেই দায়িত্ব পালন করছেন। সুপার নিউমারারি পদোন্নতি পাওয়া ১৪০ অতিরিক্ত ডিআইজির মধ্যে ২০ জন জেলায় এসপির দায়িত্বে আছেন। আর রেগুলার পদোন্নতি পাওয়া ২৭ এসপি আগের অতিরিক্ত এসপি পদেই বহাল রয়েছেন।

পুলিশের চার ইউনিটের শীর্ষ পদ শূন্য : আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাভাবিক অবসরে যান এপিবিএনের অতিরিক্ত আইজিপি ড. হাসান-উল-হয়দার। এরপর থেকে এসপিবিএনের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গোলাম কিবরিয়াকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ডিআইজি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি মূলত এসপিবিএনের দায়িত্বে আছি। এখানে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে রয়েছি। রুটিন দায়িত্ব পালন করি, যেটা না হলেই না সেটা করি। ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) হাবিবুর রহমান ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই ট্যুরিস্ট পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আবু কালাম সিদ্দিক ভারপ্রাপ্ত হিসাবে অতিরিক্ত আইজিপির চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আমাদের সব কার্যক্রম চলমান আছে। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অবসরে যান বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. দিদার আহম্মেদ।এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন রেলওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আলম। ৪ জানুয়ারি স্বাভাবিক অবসরে যান রিভার পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম। এরপর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন নৌ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মিজানুর রহমান।

Top
%d bloggers like this: