কার্যকর হচ্ছে মনিটরিং সেল,ঋণের সুদ ৯ শতাংশ
আলোকিত বার্তা:ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট বা ৯ শতাংশ কার্যকর করতে যৌথভাবে মনিটরিং সেল গঠন করবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সেল থেকে সুদের হার কমিয়ে আনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে।সিঙ্গেল ডিজিট (৯%) সুদ হার সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে কিনা সে বিষয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করবে সেলটি। যেসব ব্যাংক উল্লিখিত সুদের হার বাস্তবায়ন করবে তাদেরই দেয়া হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) তহবিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
প্রসঙ্গত,এখন থেকে ব্যাংকগুলো সুদের হার ৯ শতাংশ কার্যকর না করলে সরকারি তহবিলের অর্থ আমানত হিসেবে রাখতে পারবে না। এ নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আলোকিত বার্তাকে বলেন,এডিপির অর্থ রাখার আগে প্রকল্প পরিচালক তিনটি ব্যাংক পছন্দ করতে পারেন। এসব ব্যাংকের নাম দিয়ে অর্থ বিভাগের মতামত নেয়া হয়। অর্থ বিভাগ এই অনুমতি দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ ৯ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ কার্যকর করেছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। এরপর অর্থ রাখার অনুমতি দেয়া হবে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মঙ্গলবার আলোকিত বার্তাকে বলেন,ঋণের সুদের হার কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমলে ব্যাংকগুলোতে সুদের হার এমনিতেই কমে যাবে। এর বাইরে অন্য সব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর হবে না। এর আগেও ঋণের সুদ ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ করা হয়। কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি।
সূত্র মতে,সম্প্রতি এ ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সুদের হার নির্ধারণ প্রসঙ্গে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেছেন,বাংলাদেশের ব্যাংকিংয়ের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় ১ আগস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে সাবেক অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভভর্নর সিনিয়র সচিব (সাবেক অর্থ), বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় সংশ্লিষ্ট সবাই একমত পোষণ এবং অঙ্গীকার করেন সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক ৯ আগস্টের মধ্যে আমানতের সুদের হার ৬ এবং ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। এরপর সরকারি ব্যাংকগুলো কিছুটা সুদ কমিয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ প্রতিশ্রুতি সুস্পষ্ট লংঘন করে।
সেখানে আরও বলা হয়,অধিক মুনাফার আশায় ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের অসম ও অশুভ প্রতিযোগিতার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। ঋণের সুদ ক্ষেত্র বিশেষ ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আদায় করছে ব্যাংকগুলো। এই উচ্চ সুদ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সরাসরি ব্যাহত করছে।সূত্র আরও জানায়,অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, এতে বর্তমান যেসব ব্যাংক অঙ্গীকার মোতাবেক ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করবে তারা এক ধরনের প্রণোদনা পাবে। অপরদিকে আর্থিক খাতে এ সংক্রান্ত একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান,গত সেপ্টেম্বরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ ও আমানতের সুদ হার কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ৯ মাস পর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেসরকারি খাতের ৩৯টি ব্যাংক তা কার্যকর করেনি। যদিও এর মধ্যে সিঙ্গেল ডিজিটে শিল্প ঋণ দেয়ার দাবি করেছে ৭টি ব্যাংক। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তারা কেউ সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ পাচ্ছেন না।এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ করতে ব্যর্থ তারা সরকারের এডিপির তহবিল পাবে না। এমন নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলো নড়েচড়ে বসছে।অর্থ বিভাগের মতে, এ নির্দেশনা সঠিক বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং করতে হবে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯-এ নিয়ে আনেনি সেখানে সরকারের এ তহবিল রাখার অনুমতি দেবে না অর্থ বিভাগ। উল্লেখ্য, এডিপির অর্থ ব্যাংকে রাখার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়।