ভাটার টান জোটের রাজনীতিতে
আলোকিত বার্তা:নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে জয়ী হলেও এবার আর সরকারে জায়গা পায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।মন্ত্রিসভায় স্থান না পেয়ে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত এ জোটের শরিকদের রাজপথেও সেভাবে দেখা যায়নি।সরব হয়নি জাতীয় সংসদেও। বিশেষ করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ, সড়ক দুর্ঘটনা মহামারীর রূপ নেয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অনেকটাই নিশ্চুপ তারা।
বেশিরভাগ শরিক দলের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ না পাওয়ায় তাদের ওপর এক ধরনের হতাশা ভর করেছে। সংসদে বা সংসদের বাইরে তারা সরকারের পক্ষে, না বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তাও বুঝে উঠতে পারছেন না।সব মিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারে নেই, রাজপথে নেই, এমনকি দলীয় কর্মকাণ্ডেও সরব নেই ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।
যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে রোববার যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমরা হুকুমের বিরোধী দলে নেই। আমরা সরকারের সঙ্গেই আছি। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজপথেও আছি।রাশেদ খান মেনন বলেন,‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করেছি। তিনি বলেন, জনস্বার্থে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে,থাকবেও। এখানে হতাশার কিছু নেই।শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা মুখে যাই বলুন না কেন,বাস্তব চিত্র ঠিক এর উল্টো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জাতীয় নির্বাচনের পর প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি সময়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের রাজপথে দেখা যায়নি।
ঘরোয়াভাবে অল্প কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদ দু-তিনটি কর্মসূচি পালন করলেও বাকিরা একেবারেই নিষ্ক্রিয়। মূলত গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মধ্যেই আটকে আছে তাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড।গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ জনজীবনের হাজারও সমস্যা নিয়ে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর শরিকদের অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তারা এবারও সরকারের সঙ্গে থাকবেন। মন্ত্রী বা সংসদে বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তারা সরকারে জায়গা পাবেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শরিকদের কাউকেই এবার মন্ত্রী করা হয়নি। দুটি সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান পদ দেয়া হয়েছে দুই দল থেকে। বাকিদের করা হবে না, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই বা করা হবে এমন আশ্বাসও নেই। সরকারের অংশীদার করা না-করার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় আশা ছাড়ছেন না শরিক দলগুলোর নেতারা। তারা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো এক হয়ে ১৪ দল প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায়। শরিকরা মুক্তিযুদ্ধের শক্তির পক্ষের সরকারের বিরোধিতা কীভাবে করবে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। ফলে সংসদে বা মাঠের রাজনীতিতে শরিকদের খুব বেশি সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা আলোকিত বার্তাকে বলেন, আদর্শিক ঐক্যের ওপর ১৪ দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এক হয়েছিলাম। এখন কী করে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করি। ১৪ দলে থেকে বিরোধী দল হতে হবে, এটা স্পষ্ট নয়।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে আলোকিত বার্তাকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে আমরা ১৪ দলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ১৪ দলীয় জোট আছে। আর আমরা নিজ নিজ দলের কর্মসূচি বন্ধ রাখিনি।সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারে স্থান পাওয়ার আশা এখনও ছাড়েনি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। আর এ চিন্তা মাথায় আছে বলেই রাজপথে সরকারের বিরুদ্ধে যায় কিংবা সরকারের নীতিনির্ধারকরা রুষ্ট হন, এমন কোনো কর্মকাণ্ডে তারা আপাতত জড়াতে চান না।বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর বর্তমান ভূমিকাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে রোববার যুগান্তরকে বলেন, মূলত ক্ষমতার আশায় সরকারের লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে সব ধরনের নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়েছে আমাদের দেশের বাম-প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলো। ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষার কথা এরা একেবারেই ভুলে গেছে।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেয় ওয়ার্কার্স পার্টি। নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে তিনটি আসন পায় দলটি। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ দুটি, বাংলাদেশ জাসদ একটি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন একটি এবং জাতীয় পার্টি-জেপি একটি আসন পায় এ নির্বাচনে। তারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধে। ওই নির্বাচনের পর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রী হন।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৫৮টি আসনে জয়লাভ করে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে এবার আর তিনি সরকার গঠন করতে গিয়ে শরিক দলগুলো থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় নেননি। এ নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিক দলগুলোর টানাপোড়েনও দেখা দেয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন জোটের শরিকদের ‘নিজের পায়ে ভর’ করে রাজনীতি করা এবং কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। এতে ক্ষুব্ধ হন শরিক দলগুলোর নেতারা।
বিষয়টি সংসদ পর্যন্ত গড়ায়। ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের জবাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা নিজের পায়ে ভর করেই রাজনীতি করি। সংসদে নিজের অবস্থান নিয়ে বিব্রত বোধ করার কথাও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অধিবেশনের প্রথম দিনেই রাশেদ খান মেনন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে আমরা আনন্দিত। তবে এ আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটু বিব্রতও বটে। আজ ঢোকার মুখেও (সংসদে প্রবেশের সময়) আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, সংসদে আপনাদের অবস্থান কী হবে? মূলত তার এ বক্তব্যে হতাশারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
পরে অবশ্য রাশেদ খান মেননকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুলবশর মাইজভাণ্ডারীসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাকি দলগুলোর শীর্ষ নেতার ভাগ্যে এখন পর্যন্ত কিছু জোটেনি। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্বও তৈরি হয়েছে তাদের। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে দলগুলোর নিজেদের দলীয় কর্মকাণ্ডেও।
ঐক্যফ্রন্টসহ নানা ইস্যু,বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ ২০ দলের শরিকরা,জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন পুরনো জোট ২০ দলের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির। গত ৩ মাসে জোটের কোনো তৎপরতা নেই।এমনকি এ সময়ের মধ্যে বৈঠক হয়েছে মাত্র একটি। সব মিলিয়ে জোটকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগ জোট নেতাদের।তাদের মতে, বিএনপির কাছে এ মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্টের কার্যকারিতাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ অবস্থায় ২০ দল আছে কি না- এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।আগামী দিনে বৈঠক ডাকা হলে ঐক্যফ্রন্ট গঠন, গণফোরামের নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্যের শপথসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির কাছে জবাব চাইবেন তারা।
এ ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম আলোকিত বার্তাকে বলেন, অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে- এই ভয়ে বিএনপি ২০ দলের বৈঠক ডাকছে না। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া কেন নির্বাচনে গেলেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে লাভ কি হল, ২০ দলের বাঘা বাঘা নেতাকে কেন মনোনয়ন দেয়া হল না ইত্যাদি বিষয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বিএনপিকে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের কোটি কোটি নেতাকর্মীকে বিভ্রান্ত করেছেন। নেতাকর্মীদের যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ঐক্যফ্রন্ট যে একটি অপ্রয়োজনীয় জোট ছিল, তা এখন প্রমাণিত।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আলোকিত বার্তাকে বলেন, ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই। শরিকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। শিগগিরই বৈঠক ডাকা হবে।
জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর থেকে তিন মাসে অন্তত নয়বার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন আরেক জোট ২০ দলের বৈঠক হয়েছে মাত্র একবার। জোটের শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, জোটের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে বিএনপির যেসব নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাও শরিকদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখছেন না। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কোনো ইস্যু নেই, তাই বৈঠক হচ্ছে না- তারা এমন অজুহাত দিয়েছেন। অথচ প্রায় প্রতি সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হচ্ছে। সেখানে বিএনপি প্রতিনিধিও থাকছেন। আসলে ২০ দলের ঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে বিএনপির সদিচ্ছা আছে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠাটাই এখন স্বাভাবিক।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট- এ দুই জোট নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। একটি অংশ কোনো জোটকেই আপাতত বেশি গুরুত্ব না দেয়ার পক্ষে। তাদের যুক্তি হচ্ছে- এখন দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে যা যা করা দরকার, সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। আরেকটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বাদ দেয়ার পক্ষে। তাদের যুক্তি- ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বা আন্দোলন সব কিছুতেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পুরনো জোট ২০ দলকেই সক্রিয় করা উচিত। তবে সিনিয়র নেতাদের বেশি ভাগই চান, দুই জোটকে সমান প্রাধান্য দিয়েই পথ চলতে। কোনো জোটকেই ভাঙার পক্ষে নন তারা। বিএনপির হাইকমান্ডের অবস্থানও একই। বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান আলোকিত বার্তাকে বলেন, দলের মধ্যে যারা ২০ দলকে রাখার পক্ষে, তাদের মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। এদের মধ্যে জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দেয়ার পক্ষে একটি বড় অংশ রয়েছে।বিশ দলের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে বিএনপির কর্মকাণ্ডে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা চরম ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে সেটি প্রকশ্যরূপ নিয়েছে। বিভিন্ন সভায় এ ব্যাপারে জোটনেতারা বক্তব্যও রাখছেন। দুই জোটকে বিএনপির সমান প্রাধান্য দেয়া উচিত। নইলে শিগগিরই ২০ দলীয় জোট থেকে একাধিক শরিক দল চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
২০ দলের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আলোকিত বার্তাকে বলেন, ২০ দলের বৈঠক অনেক দিন ধরে হচ্ছে না। আমরা নিজেদের দলের সাংগঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের আলোকিত বার্তাকে বলেন, বৈঠক তো প্রয়োজনে হয়। কোনো ইস্যু থাকলে হয়। কোনো ইস্যু এখন নেই, এজন্য হচ্ছে না।
আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আলোকিত বার্তাকে বলেন, প্রধান দল বিএনপি নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেয়ার সময় কোনো ভাষা খুঁজে পান না। মুক্তির কথা বললে যদি আবার সরকার অসন্তুষ্ট হয়। আমার জানা মতে, জিয়াউর রহমানকে ঐক্যফ্রন্টের কোনো সভায় বিএনপির বাইরে কোনো শরিক দল স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মানতে চান না। তারা জিয়া পরিবারকে তাদের কাছে একটা বিরক্তিকর বিষয় মনে করেন। বিএনপির সঙ্গে জোট করবেন, ধানের শীষ মার্কা ব্যবহার করবেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শে সারা দেশে যেসব ভোটার ও সমর্থক তাদের ব্যবহার করবেন। অথচ জিয়াউর রহমান নাম মুখে বলবেন না, এটা জাতির সঙ্গে এবং জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে একটা প্রতারণার শামিল।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে আজ সরকারের রোষানলের মুখে ফেলে যারা শপথ নিয়েছেন, তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির কখনও বন্ধু হতে পারেন না। বিএনপির উচিত, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে অভিযাত্রা, সেখানে তাদের পরীক্ষিত সহযোদ্ধাদের নিয়েই পথচলা।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন,২০ দলে টানাপোড়েন চলছে, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে অল্পসময়ের মধ্যে বৈঠক হবে বলে শুনেছি।
১৯৯৯ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমীর গোলাম আযম ও ইসলামী ঐক্যজোটের তখনকার চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একপর্যায়ে এইচএম এরশাদ এ প্রক্রিয়া থেকে সরে এলে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশকে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠিত হয়।
২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দলের একাংশ এই জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। পরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয় দল, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ ও মাইনোরিটি জনতা পার্টি- এ তিনটি দল যুক্ত হলেও জোটের নাম ‘২০ দলীয় জোট’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিএনপি কোনো রকম মূল্যায়ন করেনি- এমন অভিযোগ তুলে শরিকদের কয়েকটি দলের একাংশ বিভিন্ন সময় জোট ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।