পোস্টিং হচ্ছে ৫ মাস পরও বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারে
আলোকিত বার্তা:বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার প্রায় পাঁচ মাস আগে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। এরপর সমপদে পদায়ন ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এতদিনেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিটি।ফলে ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হলেও ওই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পোস্টিং হচ্ছে আগের পদের বিপরীতেই। এতে সদ্যবিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৩ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডার এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকোনমিক) ক্যাডার একীভূতকরণ আদেশ, ২০১৮’ জারি করে। এরপর এ আদেশের গেজেট প্রকাশ করা হয়।আদেশে বলা হয়,প্রশাসন ও ইকোনমিক ক্যাডারের সব পদ ও জনবল প্রশাসন ক্যাডারের পদ ও জনবল হবে। সরকারি কর্মকমিশনের সমন্বিত মেধা তালিকা অনুসারে পুলে যোগ দেয়া ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নিজ নিজ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্ধারিত হবে।একীভূত করার লক্ষ্যে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমপদে পদায়ন, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ এবং একীভূত করার সব প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে। এই আদেশ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা বা এই আদেশে উল্লেখিত হয়নি এমন কোনো বিষয়ে আদেশের প্রয়োজন হলে সরকার ব্যাখ্যা বা প্রয়োজনে আদেশ দিতে পারবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের এই আদেশের ফলে ইকোনমিক ক্যাডারের ৪৬৪ জন কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে কর্মকর্তা সংখ্যা দাঁড়াল ৫ হাজার ৩০৯ জন। আদেশ জারির প্রশাসন ও সদ্যবিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমপদে পদায়ন ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) প্রধান করে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে সরকার।এর কয়েকদিনের মধ্যেই কমিটি প্রধান বিএসটিআইর মহাপরিচালক পদে বদলি হন। এরপর সেখানে নতুন কর্মকর্তা পদায়ন করা হলেও কমিটির কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন বুধবার আলোকিত বার্তাকে বলেন, কমিটি দু’দফা বৈঠক করেছে। কমিটি পিএসসিকে মেধাতালিকা তৈরি করে পাঠাতে বললে তারা একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনের কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকায় তা পর্যালোচনাসহ পিএসসিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের (বর্তমানে দুদক কমিশনার) সভাপতিত্বে একীভূতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।
সেখানে দুই ক্যাডারের প্রতিনিধিরা জানান, একীভূত হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই।বৈঠকে একীভূতকরণের লক্ষ্যে একটি সারসংক্ষেপ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৩০ মে সচিব কমিটিতে ওই সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নতুন ক্যাডার গঠন না করে ক্যাডারের সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ক্যাডারের কাজের ধরন একই, সেসব ক্যাডারকে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়।বর্তমানে ইকোনমিক ক্যাডারে ৪৬৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন, যার মধ্যে ২৩১ জন সহকারী প্রধান ও সিনিয়র সহকারী প্রধান। যাদের সহজেই সহকারী সচিব, সহকারী কমিশনার এবং সিনিয়র সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদে পদায়ন করা সম্ভব। এছাড়া ৮৪ জন উপপ্রধান এবং যুগ্মপ্রধান ও বিভাগীয় প্রধান পদে মোট ৫১ জন কর্মরত রয়েছেন।এসএসবির সুপারিশের মাধ্যমে উপপ্রধানকে উপসচিব, যুগ্মপ্রধানকে যুগ্মসচিব, বিভাগীয় প্রধানকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন করা যেতে পারে। এদিকে এতদিনেও জ্যেষ্ঠতার তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় সদ্যবিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে যুগান্তরের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও হতাশার কথা বলেছেন।সুব্রত শিকদার নামের একজন কর্মকর্তা নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ১৩ নভেম্বর ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও একীভূতকরণের কোনো একটি বিষয় বাস্তবায়ন হয়নি। দুই ক্যাডারের কতিপয় স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তার জন্য দায়ী। তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অথবা তাদের নিজেদের পদোন্নতির বিষয়টি চরিতার্থ করায় মগ্ন। অন্যদিকে যে ক্যাডারটি এখন আর নেই, সে ক্যাডারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।