পেঁয়াজের দাম নিয়ে ফের কারসাজি চলছে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
দেশের আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরুভূমির তাপ,বৃষ্টির বাতাস সরে গেছে চীনের দিকে আকাশে বুলেট-বারুদের ধোঁয়া,ঘুম থেকে উঠলেই সাইরেনের শব্দ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না,জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের উন্নতি হয়নি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান না দেখালে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হবে শহর, বন্দর, গ্রাম-সব জায়গায় গ্রীষ্মের রুদ্ররোদ গ্যাসের মূল্য ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে,বেড়েছে বিদ্যুতের মূল্যও প্রতিটি ধাপেই ভোটের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এমন আশঙ্কা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীর ‘স্বজন’ নিয়ে জটিলতা আওয়ামী লীগে

পেঁয়াজের দাম নিয়ে ফের কারসাজি চলছে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :পেঁয়াজের দাম নিয়ে ফের কারসাজি চলছে। মাসজুড়ে কেজিতে ৪০ টাকা বাড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিক এই মূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রী আমদানির আশ্বাস দিলেও এখনো বাজার পর্যবেক্ষণ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে অসাধু চক্র এক মাসে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত ৮১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের সংকট নেই। সুযোগ বুঝে অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। মনে হচ্ছে চক্রটিকে ভোক্তার পকেট কাটতে সুযোগ করে দিচ্ছে নীতিনির্ধারকরা। অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি ভোক্তার স্বার্থে এখন পেঁয়াজ আমদানি করে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে-মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।এপ্রিলের শেষ দিকে যখন পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা, তখনও সব স্তরের ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফা ধরে তা বিক্রি করতেন। হঠাৎ করে মে মাসের শুরুর দিকে এর দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি শুর হয়। ওই সময়ে চক্রটি কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এক মাসের চাহিদা ২ লাখ টন। আর এক দিনের চাহিদা ৬ হাজার ৬৬৬ টন বা ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ কেজি। সেক্ষেত্রে এক কেজিতে দিনে ৪০ টাকা বাড়ালে এক দিনে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত যাচ্ছে ২৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এ হিসাবে ৩০ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে ৮১২ কোটি টাকা।কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অসাধুরা যে কোনো অজুহাতে ভোক্তার পকেট কাটে। সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা করে। তারা চিহ্নিত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ কারণে অসাধুরা বারবার একই পন্থায় ভোক্তার পকেট কাটে।তিনি জানান, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। আমরা চাই কৃষক লাভবান হোক। পেঁয়াজের বাড়তি মূল্য কৃষক পাক। কিন্তু এ মুহূর্তে ভোক্তার স্বার্থও দেখতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে দেশে পণ্যটির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।কারণ সামনে কুরবানির ঈদ। আর এই ঈদ ঘিরে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ভোক্তা আরও প্রতারিত হবে। তখন ভোক্তার পকেট থেকে আরও টাকা চলে যাবে অসাধু চক্রের হাতে।অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ২১ মে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।টিসিবির তথ্যানুযায়ী, প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য ১ মাস আগে ৩০ টাকা ছিল, বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় এখনো পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় বাজার পর্যবেক্ষণ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এখনো পরিস্থিতি ভালো আছে। পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া হয়নি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে ৬০০ কারিগরের সন্ধান পেয়েছে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম। যাদের হাত ধরে শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুক বলেন, মূলত ৬০০ জনের সিন্ডিকেট সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এই সিন্ডিকেট বাজারে প্রথমে পণ্যের ডিমান্ড অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে। এরপর কিছু টাকা লাভে সেই অর্ডার আরেক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি দেয়। সেই ব্যবসায়ী আবার কিছু টাকা লাভে আরেক ব্যবসায়ীর কাছে রসিদ বিক্রি দেন। এভাবে ১০-১৫টি হাতবদল হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি আড়তদারদেরও কারসাজি আছে।ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটের ৬০০-এর বেশি মধ্যস্বত্বভোগীর নাম-মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছি। পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার নেপথ্যের এসব কারিগরের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।

Top
%d bloggers like this: