ভাঙনের মুখে ২০ দল,ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ

ভাঙনের মুখে ২০ দল,ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত


আলোকিত বার্তা:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নানা ইস্যুতে বিরোধী শিবিরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের শপথের পর টালমাটাল বিরোধী জোটের রাজনীতি।এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি। আরও কয়েকটি দল জোট ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও বিরাজ করছে অনৈক্য। ঐক্যফ্রন্ট থেকে তিনটি দল বেরিয়ে যেতে পারে। আবার ফ্রন্ট থেকেও ঘোষণা আসতে পারে বিএনপি ছাড়ার। গণফোরাম ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে একটি অংশ। সংস্কারের নামে জামায়াতে ইসলাম ভেঙে যাচ্ছে। বিএনপির তৃণমূল এবং কেন্দ্রের নেতাদের মধ্যেও আছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।

সার্বিক পরিস্থিতিতে জোট টিকিয়ে রাখাই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিএনপি ও গণফোরামের নির্বাচিতরা শপথ নেয়ায় বাকি শরিকরা ক্ষুব্ধ।এ ইস্যুতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আগামীকাল জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে। জোট ছাড়ার ঘোষণা হলে এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন জেএসডি নেতারা। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়কও শপথ ইস্যুতে ফ্রন্টের ওপর অসন্তুষ্ট। এসব কারণে চমক হিসেবে বিএনপি ছাড়াই পথচলার ঘোষণা দিতে পারেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল। সব মিলে বিরোধী শিবিরের রাজনীতি টালমাটাল।সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভেতরে মতবিরোধ দেখা দেয়। সে মতবিরোধ এখনও আছে এবং এ কারণে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া যাচ্ছে না। এরপরও ফ্রন্টকে প্রাধান্য দেয়ায় ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়,যা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে অন্য শরিকদের ওপর।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মঙ্গলবার আলোকিত বার্তাকে বলেন, বিএনপিতে শুধু অস্থিরতা চলছে না নিষ্ক্রিয়তাও বিরাজ করছে। শপথসহ নানা ইস্যুতে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এটা আগে থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।তিনি বলেন, শরিকরা নিজেদের অবহেলিত মনে করছিল। বিএনপি তাদের প্রতি উদাসীন এমন ধারণাও সৃষ্টি হতে থাকে। পার্থ চলে যাওয়ায় দলটি বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। এই ধাক্কাকে কাজে লাগাতে হবে। নিজেরা নিজেদের সামাল দেয়ার উদ্যোগ নেবেন। যদি সামাল দিতে না পারেন তবে বিরোধী রাজনীতিতে সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যতে তাদের কোনো পথই থাকবে না।দেশে শক্তিশালী বিরোধী শিবির না থাকলে সব ক্ষেত্রে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হয় না। পাশাপাশি বিরোধী শিবির দীর্ঘদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন করছে তাও সফলতার মুখ দেখবে না।সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিএনপির সঙ্গে যে জোট হল এটার মধ্যে কোনো নীতি-আদর্শ আছে? অধ্যাপক বদরুদোজ্জা চৌধুরী রাতারাতি চলে গেলেন অন্যদিকে।

এসব কাজ হচ্ছে নীতি-আদর্শবিবর্জিত, শৃঙ্খলাবিবর্জিত এবং সুস্পষ্ট কর্মসূচিবিবর্জিত। একটা দলের মূল উদ্দেশ্য থাকে শৃঙ্খলা, নীতি-নৈতিকতা, কতগুলো আদর্শ, কতগুলো কর্মসূচি। এখনকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এগুলো কিছুই নেই। এগুলো রাজনৈতিক দল নয়, এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। এসবের কারণে আমরা মহাবিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি।ঐক্যফ্রন্টে অনৈক্য : গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০ দলকে গুরুত্বহীন করে ফ্রন্টকেই অগ্রাধিকার দেয় প্রধান শরিক বিএনপি।কিন্তু নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে এ জোটটি। যে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নিয়ে ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। দীর্ঘদিন ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয় না। এভাবে চলতে থাকলে ফ্রন্ট জনগণের কোনো কাজে আসতে পারবে না বলে মনে করছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রন্টের শরিকরা যে যার মতো করে বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

সূত্র জানায়, শপথ ঘিরে ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যেও চলছে অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় চূড়ান্তে বৃহস্পতিবার জরুরি বর্ধিত সভার আহ্বান করেছে ফ্রন্টের শরিক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।সভার পর তিনি জরুরি সংবাদ সম্মেলনও করবেন। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তুলে ধরবেন বঙ্গবীর। অনেকেই ধারণা করছেন তিনি ফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার আলোকিত বার্তাকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আমাদের দলের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তুলে ধরবেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান আলোকিত বার্তা:কে বলেন, দলগুলো এখনও বুঝতে পারছে না তাদের অবস্থানটা কি হবে। বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে।

সিনিয়র নেতারা সব নীরব হয়ে গেছেন। এরপর আবার বিএনপির সংসদে যাওয়া পুরো রাজনীতিকে ওলটপালট করে দিয়েছে। আমার যেটা ধারণা- প্রথমত ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাবে, থাকবে না। যারা বেরিয়ে যাবে তারা আলাদা একটা ফ্রন্ট তৈরি করবে, বিএনপিকে বাইরে রেখে। সেক্ষেত্রে বিএনপির অলটারনেটিভ হচ্ছে এখন ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে থাকা। এটা ছাড়া বিএনপির কোনো উপায় নেই।তিনি বলেন, ভুল রাজনীতির কারণে বিএনপি এখন রাজনৈতিক মাঠে একা হয়ে পড়েছে। ফলে বিএনপির যে একটা বড় দল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ছিল সেটা ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই আমরা দেখতে পাব খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়েছেন এবং তিনি বিদেশে যাচ্ছেন।

তারেক বলেন, যারা জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন তারা তো বিএনপির ওপর ভরসা করত। বিএনপিকে হাতে রেখে যা পাওয়া যায়, হালুয়া-রুটি তাতেই তাদের লাভ। এখন তারা দেখছেন বিএনপি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে সংসদে গিয়েছে, তাদের পাওয়ার তো কিছু থাকছে না।লেবার পার্টি বলেন, বিজেপি বলেন, এরা সবাই এখন চেষ্টা করবেন আরেকজনকে সামনে রেখে কাউন্টার বিএনপির মতো একটা দল গঠন করতে। সেক্ষেত্রে আমার ধারণা এলডিপি, বিজেপি একটা ব্যানারে আসবে। হতে পারে আরও দু-চারটা দল নিয়ে তারা একটা ফ্রন্ট দাঁড় করাবে।

২০ দলে অস্থিরতা : ২০ দলীয় জোটে অস্থিরতা চলছে। জোটের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপির শপথের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শরিকরা। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। ইতিমধ্যে আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বিজেপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ছাড়ার বিষয়ে বিএনপিকে ২৩ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছে আরেক শরিক দল লেবার পার্টি।লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আলোকিত বার্তাকে বলেন,বিএনপিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দিতে হবে। জোটের আরও কয়েকজন শরিক নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারাও এ বিষয়ে একমত।বেঁধে দেয়া সময়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত না নিলেও ২৪ মে সংবাদ সম্মেলন করে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। লেবার পার্টিও কি ২০ দল ছাড়ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা জোট থেকে বেরিয়ে যেতে চাই না। আমরা বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসতে চাচ্ছি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন পুরনো জোট ২০ দলের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির। ৪ মাসে জোটের কোনো তৎপরতা নেই। এমনকি এ সময়ের মধ্যে বৈঠক হয়েছে মাত্র দুটি। সব মিলিয়ে জোটকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ জোট নেতাদের- যা বিভিন্ন সভা-সেমিনারেও তারা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বিএনপির কাছে এ মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্টের কার্যকারিতাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে।আবার শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে শপথের বিষয়ে বিএনপির একক সিদ্ধান্তকেও মেনে নিতে পারছে না জোট নেতারা। এ অবস্থায় ২০ দল আছে কিনা- এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় সোমবার ঐক্যফ্রন্টকে বেশি প্রাধান্য ও শপথের বিষয়টি অনৈতিক সিদ্ধান্ত দাবি করে জোট থেকে বেরিয়ে গেছেন ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বিজেপি।

শপথ নেয়ার বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানোয় জোটের অন্য শরিকরাও ক্ষুব্ধ। সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ কয়েকটি দল। তবে তাদের জোট ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম আলোকিত বার্তাকে বলেন, যে যুক্তিতে আন্দালিভ রহমান পার্থ জোট ছেড়েছে তা যুক্তিসঙ্গত। কারণ নির্বাচনের পর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল জোটের। হঠাৎ করে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে শপথ নেয়ার। এ বিষয়ে জোট নেতাদের আগে অবহিত করার দরকার ছিল। তাহলে সবাই একই সুরে কথা বলতাম।এমনকি শপথের পরও তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারত বিএনপি, কিন্তু তাও করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে জোট ছাড়ার কোনো চিন্তাভাবনা এলডিপির নেই। আমরা আশা করছি, বিএনপি হাইকমান্ড সার্বিক পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম আলোকিত বার্তা:কে বলেন, আমার কোনো ক্ষোভ নেই। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকের মতো আমরা যারা জোটে আছি তারাও শপথের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানি না।
আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত ২০ দলের নয়, বিএনপির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বিএনপি জোটের প্রধান শরিক। তাই বিএনপির কোটি নেতাকর্মীর অনুভূতির সঙ্গে অতীতে যেমন ছিলাম, এখনও আছ

Top