গ্যাসের মূল্য ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে,বেড়েছে বিদ্যুতের মূল্যও - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বিআরটিসির অগ্রযাত্রায় সাহসিক পদক্ষেপ,সাফল্যের মহাসড়কে অদম্য যাত্রা জুজুৎসুর নিউটনের যৌন নিপীড়নের ভয়ংকর তথ্য লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বিদ্যুৎ খাতকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে তুমুল লড়াই চলছে যুক্ত হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের ২৫৭টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভের অঙ্ক ২৩ বিলিয়নের বেশি এনআইডির মতো গোপনীয় তথ্য বিক্রি স্পর্শকাতর তথ্য বিক্রি করেন র‌্যাব-এটিইউর দুই কর্মকর্তা সরকারের ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর ৪৪৮ কোটি টাকা অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসর বসবে বরিশাল স্টেডিয়ামে

গ্যাসের মূল্য ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে,বেড়েছে বিদ্যুতের মূল্যও


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : গ্যাসের মূল্য ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুতের মূল্যও। পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় ও অন্যান্য সেবার নামে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এর মধ্যে নতুন করে ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে হলে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। কিন্তু একমাত্র অবৈধ মাদক ব্যবসা ছাড়া কোনোভাবেই ৪০ শতাংশ মুনাফা সম্ভব নয়।মঙ্গলবার ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) প্রাক-বাজেট (২০২৪-২৫) আলোচনায় ব্যবসায়ীরা এসব বিষয় তুলে ধরে পরিত্রাণ চায়। ওই বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসন এই দুভাগে বিভক্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সংস্কার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনডো দ্রুত চালুর তাগিদ দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন আশ্বাস দেওয়া হলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এখন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে বলতে হবে কবে নাগাদ এ সুবিধা চালু হবে। ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এটি বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সুদ বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ কমবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে বিরাট সমস্যা দেখা দেবে। তিনি আরও বলেন, যেভাবে সুদের হার বাড়ছে সেটি যেন ১৮ কিংবা ১৯ শতাংশে না পৌঁছে। তিনি ওই বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, ঢাকা ও চট্টগ্রামে কর আদায় ইউনিট স্থাপন, অগ্রিম আয়কর প্রথা বাতিল, ইনফরমাল খাতকে ফরমাল খাতে এনে কর আদায় বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সেখানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ১২টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অন্যসব খাতের মধ্যে রয়েছে রাজস্ব খাত সংস্কারের মাধ্যমে আদায় বাড়ানো, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন। এছাড়া মুদ্রা বিনিয়ম হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রাখা, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ ও নিুআয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিও রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখা এবং ফাস্ট ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পদের জোগান দেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু মোকাবিলা থেকে রক্ষায় অর্থের সংস্থান ও রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধানের কাজটি করা হবে।

আলোচনায় সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, জিডিপির তুলনায় বাজেট পরিধি আরও বড় হওয়া দরকার। কিন্তু মূল বাধা হচ্ছে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি না পাওয়া। সিস্টেমের অভাবে যোগ্য করদাতার কাছে পৌঁছতে পারছে না এনবিআর। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সমন্বয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এ দুটি নীতি ভিন্ন। এ ধরনের ভিন্ন পলিসি আত্মহত্যার শামিল। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। সামনে ফসল উৎপাদন হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসল সরকারকে সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু সেটিও পারছে না সরকার। তিনি বলেন, শুধু সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তিনি, বিদেশে পড়ে থাকা রপ্তানি আয় ফেরত আনা, পণ্যের মজুত বাড়ানো, মুদ্রা পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।

ওই আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউব অব বাংলাদেশের (পিআইআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকের মধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যাচ্ছে না, এটি বড় ব্যর্থতা। যে কারণে বাজেটের পরিধি বড় হচ্ছে না, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে তিনটি চ্যালেঞ্জ অর্থনীতিতে রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় আনা, মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনা এবং সরকারি ঋণের চাপ কমানো।

ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, সরকার ট্রেজারি বিল থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ করছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ইতোমধ্যে দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর এক লাখ কোটি টাকা প্রিন্ট করে অর্থনীতিকে সামাল দেওয়ার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট বিরাজমান আছে। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি না কমার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর অন্য দেশগুলো সুদের হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশে নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ৬/৯ এর মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় ভিন্ন পলিসি গ্রহণ করায় আজ এ অবস্থা। যদিও সম্প্রতি সুদের হারে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। তবে সুদের হার বৃদ্ধি সেটাও কাম্য নয়। আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মে ও জুনে টাকা খরচের চাপ বাড়বে। এতে সুদের হার আরও বৃদ্ধি পাবে।

ওই আলোচনায় ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে এইচএস কোড জটিলতা নিরসণ, বিনিয়োগ আকর্ষণে উদ্যোগ নেওয়া, দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক খাত সংস্কারের কমিশন গঠন, ডলার সরবরাহ বাড়ানো, বৈদেশিক ঋণ কমিয়ে অভ্যন্তীরণ উৎস সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া, খেলাপি ঋণ কমানোর সুপারিশ করেন।অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন আইসিএমএবির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান কাউন্সিল সদস্য আরিফ খান।

Top
%d bloggers like this: