পারস্পরিক ভালোবাসা না থাকলে প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ

পারস্পরিক ভালোবাসা না থাকলে প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না


আলোকিত বার্তা :দুনিয়ার এ জীবনে কতজনের সঙ্গে কতভাবে পরিচয় হয়! সে পরিচয় কখনো ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। সৃষ্টি হয় হৃদ্যতা, আন্তরিকতা। ঘনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতার পেছনে কখনো কাজ করে আত্মীয়তার বাঁধন, কখনো প্রতিবেশী। সেখানে নতুন করে পরিচয়ের কিছু থাকে না। তবুও আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সকলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সমান থাকে না। এ ঘনিষ্ঠতার দাবিতেই আমরা একে-অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই। সহজ কথায় একে বলা যায় সৌজন্য সাক্ষাৎ। এ সাক্ষাৎ আগের ঘনিষ্ঠতায় যোগ করে নতুন মাত্রা। বৃদ্ধি পায় আন্তরিকতা।মুসলিম সমাজে এ আন্তরিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। তা কেবলই এ দুনিয়ার জীবনে নয়, বরং দুনিয়ার গ-ি ছাড়িয়ে পরকালের অনন্ত অসীম জীবনেও পারস্পরিক হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা বয়ে আনবে অনিঃশেষ সফলতা। নবীজী (সা.)-এর বাণী, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি না হবে, ততক্ষণ তোমরা মুমিন হতে পারবে না! (সহিহ মুসলিম-৫৪)

যতœ নিতে হয় সবকিছুরই। অযতেœ অবহেলায় লোহায় যেমন মরিচা পড়ে, ক্ষয় হতে হতে একপর্যায়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, পারস্পরিক সম্পর্কও এমনই। এখানেও যতœ নিতে হয়। পরিচর্যা করতে হয়। গোড়ায় নিয়মিত পানি ঢালতে হয়। তবেই টিকে থাকবে এ সম্পর্ক, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা। শুধু টিকেই থাকবে না, বরং সঠিক পরিচর্যায় একটি ছোট চারাগাছ যেভাবে বিশালাকার বৃক্ষে পরিণত হয়, পারস্পরিক এ হৃদ্যতাও এভাবেই বেড়ে উঠবেÑ চারাগাছ থেকে বৃক্ষের আকারে। এ যতœ ও পরিচর্যারই একটি উপায়Ñ সৌজন্য সাক্ষাৎ।উপরোক্ত হাদিসে আমরা দেখতে পাইÑ নবীজী (সা.) বলেছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা না থাকলে মুমিন হওয়া যাবে না। এ কথা ঠিকÑ যদি কেউ মুমিনদের সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক না রাখে, তবে এ জন্যে তাকে কাফের বলে দেয়া যাবে না। কিন্তু এও অনস্বীকার্যÑ পারস্পরিক এ ঘনিষ্ঠতা মুমিনের কাছে ঈমানের দাবি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বলেছেনÑ ‘ভাই ভাই’। এ ভ্রাতৃত্বের পেছনে রয়েছে ঈমান। ঈমানী এ ভ্রাতৃত্ব শক্তিতে ছাড়িয়ে যায় রক্তের সম্পর্ককেও।

হলো, যে ভ্রাতৃত্বের এত শক্তি, এত মর্যাদা, ঈমানের দাবিদার হওয়ার পরও কেউ যদি এ ভ্রাতৃত্বের কদর না করে, মুমিন ভাইদের প্রতি পোষণ না করে ভালোবাসা, তার দাবি তবে সত্য হয় কী করে? ঈমান তার পরিপূর্ণ নয়। সম্পর্কের দাবি রক্ষা করে পারস্পরিক সাক্ষাৎ তাই কেবলই আন্তরিকতার প্রকাশ নয়, নয় শুধু সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যমও; এ সাক্ষাৎ আমাদের ঈমানের দাবি পূরণ করার পথে এক বড় সহায়ক।

হাদিসে স্পষ্টই বর্ণিত হয়েছে এ সাক্ষাতের ফযীলতের কথা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক লোক তার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে বেরিয়েছিল। সে ভাই থাকত আরেক এলাকায়। আল্লাহ তখন তার যাত্রাপথে একজন ফেরেশতা দাঁড় করিয়ে রাখলেন। লোকটি যখন ফেরেশতার কাছে এলো, ফেরেশতা তাকে বলল, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে জানাল, আমি এ এলাকায় আমার এক ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি। ফেরেশতা প্রশ্ন করল, তার কাছে তোমার কোনো পাওনা আছে, যা তুমি আনতে যাচ্ছ? সে বলল, না, তেমন কিছু নয়, তবে আমি তাকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য ভালোবাসি। ফেরেশতা তখন বলল, শোনো, আমি তোমার কাছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এ বার্তা নিয়ে এসেছিÑ তুমি যেমন তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে তোমার ভাইকে ভালোবাস, তিনিও তেমনি তোমাকে ভালোবাসেন। (সহিহ মুসলিম-২৫৬৭)

পুরস্কারটি কত বিশালÑ ভাবা যায়! মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালোবাসা! তিনি আহকামুল হাকিমীন, তিনি মালিকুল মুলক। এমন সত্তা যদি কাউকে ভালোবাসে, তো তার আর কী-ইবা লাগে! দুনিয়া-আখেরাতের কোনো সংকটই তার পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারবে না। আল্লাহ যে তাকে ভালোবাসেন! তিনি যাকে ভালোবাসেন, তাকে তো তিনি সব রকম সংকট থেকে উদ্ধার করবেনই। তার জীবনকে তিনি নানামুখী নিআমতে করে তুলবেন সমৃদ্ধ। তবে কথা একটাই। এ মহান প্রাপ্তির জন্যে একটাই শর্তÑ ভালোবাসাটি হতে হবে নিরেট আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দুনিয়ার কোনো প্রাপ্তি এখানে উদ্দেশ্য হতে পারবে না। তবেই মিলবে এ পুরস্কার।

পুরস্কার হিসেবে যে আল্লাহর ভালোবাসা পাবে, সে যে ভালো থাকবে, জান্নাতে যাবেÑ তা সহজেই অনুমেয়। এরপরও প্রিয় নবীজী (সা.) আমাদের জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোগী দেখতে যায়, কিংবা আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে এমন কোনো ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন আহ্বানকারী তাকে ডেকে ডেকে বলে, তুমি সুন্দর হও, তোমার যাত্রা সুন্দর হোক আর জান্নাতে তোমার জন্যে নির্ধারিত হয়ে যাক একটি বাড়ি! (জামে তিরমিযী-২০০৮)

Top