ছোট আমলের বিনিময়েও আল্লাহ তাআলা অনেক বড় সওয়াব দান করেন - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ

ছোট আমলের বিনিময়েও আল্লাহ তাআলা অনেক বড় সওয়াব দান করেন


আলোকিত বার্তা :পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :যে অণু পরিমাণও নেক আমল করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে অণু পরিমাণও মন্দ কাজ করবে সেও তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল : ৭-৮)। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেমন দামী, তেমনই জীবনের ছোট-বড় প্রতিটি আমলই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। একটি গোনাহ যেমন অনেক বড় বিপদের কারণ হতে পারে, তেমনি একটি বাহ্যত ছোট নেকীও জান্নাত লাভের কারণ হতে পারে। বান্দার অন্তর যদি সমর্পিত হয় আর আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে সে সচেষ্ট থাকে, তাহলে ছোট আমলের বিনিময়েও আল্লাহ তাআলা অনেক বড় সওয়াব দান করেন। পক্ষান্তরে অন্তর যদি হয় উদাসীন তাহলে ছোট গোনাহও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করেন না। কোনো কাজ যত ক্ষুদ্রই হোক, আল্লাহর জন্য করা হলে তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। আল্লাহ অবশ্যই বান্দাকে তার বিনিময় দান করেন। আর আল্লাহ তাআলা এমন ‘দাতা’ যে, ক্ষুদ্র বান্দা তাঁর জন্য কিছু করবে, আর তিনি বান্দাকে কিছু দেবেন না; কোনো বিনিময় দেবেন না- আল্লাহর দরবারে এমনটি কখনোই হতে পারে না। তাই আয়াতে কারীমায় ইরশাদ হয়েছে : যে অণু পরিমাণও নেক আমল করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে অণু পরিমাণও মন্দ কাজ করবে সেও তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল : ৭-৮)।

আল্লাহর জন্য অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বান্দা ‘কিছু করা’-এ কথাটির পরিধি কত যে বিস্তৃত হতে পারে তা যেমন আমাদের ধারণায় নেই, ঠিক তেমনি সামান্য বিষয়ের বিনিময়েও আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাকে যে কত বিপুল প্রতিদান দেওয়া হয় সে সম্পর্কেও আমাদের ধারণা নেই। সেইসাথে এটাও সত্য যে, যতটুকু ধারণায় আছে, তার অনুশীলন নেই।

আল্লাহ তাআলা ‘শাকির’ তথা বান্দার আমলের মূল্যায়ন করেন। কী পরিমাণ ছোট ও ক্ষুদ্র বিষয়ের প্রতিদানও আল্লাহ তাআলা দান করেন, তার একটি নমুনা হিসেবে আমরা নিম্নোক্ত হাদীসটি লক্ষ্য করতে পারি : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন : ঘোড়ার মালিক তিন প্রকার; একজনের জন্য ঘোড়া সওয়াবের কারণ। আরেকজনের জন্য বৈধ আবরণ। আর কারও জন্য হয় গোনাহের কারণ।

ঘোড়া তার জন্য সওয়াবের কারণ, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তার জন্য নিয়োজিত রেখেছে। এমনকি ঘোড়ার মালিক সেই ঘোড়াকে কোনো উদ্যান বা চারণভূমিতে বেঁধে এসেছে। এই ঘোড়া সেখানে যা কিছু খায় তার জন্য ঘোড়ার মালিক নেকী লাভ করে। ঘোড়াটি যদি দড়ি ছিঁড়ে এক দুই টিলা অতিক্রম করে (কোথাও) বর্জ্য ত্যাগ করে, তাহলে এই বর্জ্যও ঘোড়ার মালিকের নেকীর কারণ হয়। ঘোড়াটি যদি কোনো নদী অতিক্রম করার সময় পানি পান করে- যদিও বা মালিকের পানি পান করানোর ইচ্ছা ছিল না- তবুও ঘোড়ার মালিক নেকী লাভ করে।

আর যদি কোনো ব্যক্তি সচ্ছলতা, বৈধতা ও নির্মুখাপেক্ষিতা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঘোড়ার মালিক হয় এবং ঘোড়ার গর্দান ও পিঠ (অর্থাৎ ঘোড়া সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়ে) আল্লাহর হক আদায় করতে না ভোলে, তার জন্য ঘোড়া বৈধ উপকরণ। পক্ষান্তরে ঘোড়ার মালিকের উদ্দেশ্য যদি হয় গর্ব ও লৌকিকতা এবং অপর মুসলমান থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, তাহলে এই ঘোড়া হবে গোনাহের কারণ। অতঃপর নবীজী (সা.) এর কাছে কেউ জানতে চাইল গাধা সম্পর্কে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো বিধান আমার প্রতি অবতীর্ণ হয়নি। তবে আমার কাছে রয়েছে এমন একটি আয়াত, যা এব্যাপারে অত্যন্ত ব্যাপক ও অনন্য। তা এই : যে অণু পরিমাণও নেক আমল করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে অণু পরিমাণও মন্দ কাজ করবে সেও তা দেখতে পাবে।[সূরা যিলযাল : ৭-৮] (সহীহ বুখারী : ৩৬৪৬)।

এই হাদীসের ভাষ্য গভীরভাবে লক্ষ্য করলে উপলব্ধি করা যায়, যে কাজ আল্লাহর জন্য করা হয় আল্লাহ তাআলা তাকে কতখানি ব্যাপ্তি দান করেন এবং তার খুঁটিনাটি বিষয়েরও নেকী ও বিনিময় দান করেন। এই হাদীসে ঘোড়ার মালিককে তার ঘোড়ার খাদ্য, পানি এমনকি বর্জ্য- সবকিছুর জন্য আলাদাভাবে নেকী দান করা হয়েছে। হাদীসের শেষ অংশ থেকে একথাও অনুভূত হয় যে, এমন ব্যাপকভাবে নেকী প্রদান শুধু ঘোড়ার সাথেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোনো পশু পালন; বরং যে কোনো কাজ, তা যদি সত্যিকারভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়, অন্তরে যদি থাকে সঠিক বোধ ও উপলব্ধি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সব কাজে মুমিনের জীবন হবে উদ্দেশ্যমুখী। আর এই চিন্তা-পদ্ধতি প্রয়োগ করে, জীবনের দৈনন্দিন কাজগুলোতেও সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করতে পারবে। ফলে তার জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলোও নেক আমলে পরিণত হবে।

Top