নাগরিক সুবিধার চেয়ে ভোগান্তিই বেড়েছে
মনির হোসেন:পরিষদের সঙ্গে ইমারত নির্মাণ বিধিমালাও পাল্টেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এ। তবে এতে নাগরিক সুবিধার চেয়ে ভোগান্তিই বেড়েছে।কারণ বারবার বিধি পাল্টানোর কারণে নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনার (প্ল্যান) নকশা অনুমোদন আটকে থাকছে মাসের পর মাস।ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাসের পর মাস গেলেও বাড়ির নকশা পাস না হওয়ায় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছেন না তারা। এর ফলে নির্মাণসামগ্রীর ঊর্ধ্বগতির বাজারে আর্থিক লোকসান হচ্ছে।অন্যদিকে নকশা আটকে থাকায় নগর ভবন কর্তৃপক্ষও রাজস্ব হারাচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।ভবনের নকশা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, গত প্রায় এক বছর ধরে সিটি করপোরেশন থেকে নানা অজুহাতে নকশা পাস করাতে পারছেন না বাড়ির মালিকরা।তারা বলছেন, সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়রের চেয়ারে বসার পর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ চালু করেন। তবে এর আগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ অনুসারে কাজ করেন প্রকৌশলী ও বাড়ির মালিকরা।
এদিকে ২০০৮ বিধিমালার কারণে ১৯৯৬ সালের বিধিমালা অনুসরণকারীরা বিপাকে পড়ে যান। এমনকি ২০০৮ বিধিমালা কার্যকর নিয়ে নাগরিকদের মাঝেও একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে নকশা জমা দেওয়ার হার কমে যায়।এরপর সাদিকের চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত মেয়রের চেয়ারে বসার পর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ বাদ দিয়ে ১৯৯৬ এর বিধিমালা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। আর এভাবে বারবার বিধি পাল্টানোয় বিপাকে পড়ছেন বাড়ির মালিকেরা।ভুক্তভোগী শাওন নামে এক বাড়ির মালিকের ছেলে বলেন, ২০০৮ এর বিধিমালা মেনে বাড়ির নকশার কাজ করে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে সর্বশেষ মেয়রের সময় ১৯৯৬ বিধিমালা কার্যকর করা হয়। এতে নকশা আটকে যায়। এখনো সেই নকশা আটকে আছে।তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত বাবা কিংবা আমি নগর ভবনে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। রাগ হয়ে সংশ্লিষ্ট শাখার কাউকে কিছু বলতেও পারি না, তাহলে ভুল ধরে ধরে শেষ করে দেবে। অথবা নকশা পেয়ে যখন কাজ শুরু করব, তখনও নানাভাবে হয়রানি করবে। তার চেয়ে ভালো খোঁজ নিতে থাকি।ভুক্তভোগী তানিয়া নামে এক নারী বলেন,পাঁচ-ছয় মাস ধরে নকশা অনুমোদনের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। শুধু নিয়মের কথা বলে যাচ্ছেন দায়িত্বরতরা। কবে নাগাদ প্লানের অনুমোদন কপি পাবো তাও বলতে পারছি না।
এমন যারা আছেন, তাদের নকশা অনুমোদন না হলেও সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিনিয়ত ভিড় থাকছে বাড়ির মালিক ও তাদের প্রতিনিধিদের। তারা বলছেন, নিয়মানুযায়ী নকশা জমা দিলেও কবে নাগাদ পাবেন, তাও কেউ বলছেন না।আর সংশ্লিষ্ট শাখার স্টাফরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী দাখিল করা নকশাগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়। এক্ষেত্রে একটি বোর্ডও রয়েছে। তবে ১৯৯৬-এর স্থাপনা বিধিমালা বাস্তবায়ন ও অনুমোদনে দুটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হাওলাদার বলেন, একটি বাড়ির জন্য পানির লাইন ও হোল্ডিংয়ের প্রয়োজন। আর এ দুটি খাত থেকেই আমাদের রাজস্ব আসে। ফলে নকশা পাসের সঙ্গে যেহেতু এ দুটি বিষয় সম্পৃক্ত, তাই গত কয়েকমাস ধরে এর প্রভাব রাজস্ব খাতেও পড়ছে।আর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী জানান, যাচাই-বাছাই শেষে যেসব নকশা নিয়মের মধ্যে পাওয়া যাবে, সেগুলো পাস করে দেওয়া হবে। আর এ কাজ অতি দ্রুতই করা হবে।সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক থেকে ছয়তলা ভবনের নকশার জন্য আবেদন জমা আছে ৬৮০টি। আর সাততলা থেকে এর বেশি উচ্চতার ভবনের নকশার অনুমোদনের আবেদন জমা পড়েছে ৩৭টি।তবে ভবন নির্মাণের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আটকে থাকা নকশার সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি।