বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তায় রাসূলুল্লাহ (সা.) - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বিপুর বিপুল লুটপাট,পাহারায় উপদেষ্টার স্বামী ! ২৩ লাখ মৃত ভোটার,নতুন ভোটার ৬৩ লাখ সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছাত্র-জনতার গণহত্যায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পুরস্কৃত হচ্ছেন বিতর্কিতরা, বিবেচনায় নেই স্বৈরাচারবিরোধী অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীরা চুরি, ডাকাতি, অপহরণ,অবৈধ দখলদারির সহ বিভিন্ন মামলা থাকা সত্ত্বেও দেশকে অস্থিতিশীল করার মাষ্টার মাইন... কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি দেশে শক্তিশালী উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সবাই কার্যকর অবদান রাখবেন বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ ১০-এ নেই রাজধানী ঢাকা নির্বাচন ঘিরে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তায় রাসূলুল্লাহ (সা.)


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:রাসূলুল্লাহ (সা.) যৌবনকাল থেকেই ছিলেন একজন শান্তিপ্রিয়, ন্যায়নিষ্ঠ ও হকতরফদার মানুষ। সীরাতে ইবনে হিশামে আছে, মক্কায় শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এবং নিপীড়িত মানুষের সাহায্যার্থে ‘হিলফুল ফুযূল’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়, যে সংগঠনে রাসূলুল্লাহও (সা.) শরীক ছিলেন। অথচ সে সময়ে তাঁর বয়স ছিলো মাত্র পনের থেকে ষোল বছর।একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন : (আমি আবদুল্লাহ বিন যা‘দানের ঘরে যেখানে ‘হিলফুল ফুযূল’ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল) এমন একটি চুক্তিতে শরীক ছিলাম, যার মূল্য আমার কাছে লাল উটনীর চেয়েও বেশি। এই ইসলামের যামানায়ও যদি সেই চুক্তি ও অঙ্গীকার পূরণের জন্য ডাকা হয় তাহলেও আমি লাব্বাইক বলব। (মুসনাদে আহমদ : ১৬৫৫)।রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বয়স যখন তেত্রিশ তখন কুরাইশরা কা‘বা ঘরের পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করে। তখন হজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে গোত্রগুলোর মাঝে ভীষণ দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং যুদ্ধের উপক্রম হয়। প্রত্যেক গোত্রই এই সৌভাগ্যকে শুধু নিজেদের হক বলে মনে করতে থাকে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জ্ঞান ও বিচক্ষণতাই তাদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টিতে যে কোন মানুষের জান ছিল অত্যন্ত মূল্যবান, যার কারণে তিনি অন্যায় হত্যাকে কবীরা গোনাহ বলে ঘোষণা করেছেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন : লোক সকল! তোমাদের পরস্পরের জান-মাল তোমাদের উপর এমন সম্মানিত যেমন আজকের দিন, এই মাসে ও এই শহরে।

এখন নারী স্বাধীনতা ও নারীঅধিকারের দাবি নিয়ে শোনা যায় অসংখ্য শ্লোগান তবুও নারী আজ পদেপদে লাঞ্ছিত অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন প্রেরিত হলেন তখন পৃথিবীতে এরকম অবস্থাই বিরাজ করছিল। সে সময় নিজ ইচ্ছায় কোনো নারীর বেঁচে থাকারও অধিকার ছিল না। এমন পরিস্থিতিতেই নবীয়ে রহমত (সা.) নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের শিক্ষা-দীক্ষা প্রদানের গুরুত্ব ও ফজীলত বর্ণনা করেছেন।রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনজন মেয়ে-সন্তানকে লালন-পালন করে, উত্তম শিক্ষা ও তারবিয়াত প্রদান করে এবং (বিবাহের উপযুক্ত হলে) বিবাহ দিয়ে দেয়; সর্বোপরি তাদের সাথে উত্তম আচরণ করে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। তিনি আরো ইরশাদ করেন : যার কোনো বোন বা মেয়ে হয় (এবং সে তাকে জিন্দা কবর না দেয় গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ পরীক্ষা করে গর্ভ নষ্ট করে দেয়াও উক্ত কাজের শামিল, তাকে অনর্থক মনে না করে এবং ছেলে-সন্তানকে অগ্রাধিকার না দেয়) তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। (জামে তিরমিযী : ১৯১২)।

তৎকালীন সময়ে আরবে ন্যায় ও ইনসাফের হিসাব করা হতো শুধু নিজ বংশ, গোত্র, বর্ণ ও আত্মীয়তার মধ্যে এবং এখনো সারাবিশ্বে তাই চলছে। রাষ্ট্র, ধর্ম ও দলের ভিত্তিতে বিচারের ফয়সালা হচ্ছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এই সকল ব্যবধানকে মিটিয়ে দিয়ে ন্যায় ও ইনসাফের এমন নীতি প্রবর্তন করেছেন, যার মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষ ইনসাফ লাভ করেছে এবং ইনসাফের প্রশ্নে কারো বংশ-মর্যাদা, ধনী-দরিদ্র, দল, গোত্র ও রাষ্ট্র বাধা হতে পারেনি।

একবার মাখযূম গোত্রের ফাতেমা নামে এক মহিলা চুরির অপরাধে ধরা পড়ল। তখন নববী-আদালত থেকে তার হাত কেটে দেয়ার ফায়সালা জারি হলো। বিষয়টিকে কেউ কেউ সমর্থন করতে না পেরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খুবই প্রিয় একজন সাহাবী হযরত উসামা বিন যায়েদ (রাযি.) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে সুপারিশ করল যে, এমন সম্মানিত একজন মহিলাকে এতো বড় একটি অপমানজনক শাস্তি না দেয়া হোক। রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত উসামা (রাযি.)-এর উপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, তুমি কি আল্লাহ তায়ালার একটি বিধান বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকতে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, লোকসকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ভ্রষ্টতার কারণ এটাই ছিল যে, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি কেউ চুরি করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হতো। আর ‘হদ’ আরোপ করা হতো দুর্বল কেউ চুরি করলে। আল্লাহর কছম! আমার কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে আমি তারও হাত কেটে দেব। (সহীহ বুখারী : ৬৮৮৭)।

Top