নবীপ্রেমের কিছু নমুনা সাহাবীগণের



মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :নবী কারীম (সা.) কে ভালবাসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম রিযওয়ানুল্লাহি তাআলা আলাইহিম আজমাঈন। তাঁরা সত্যিকারের নবীপ্রেমের বেনজীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। হযরত আবু সুফিয়ান (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগেই এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন : আমি কাউকে এতটা ভালবাসতে দেখিনি, মুহাম্মদ (সা.) কে তাঁর সঙ্গীরা যতটা ভালবাসে। (সীরাতে ইবনে হিশাম ২/১৭২; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৬৫)।হযরত আনাস (রা.) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দেখেছি, তাঁর চুল মুবারক মুণ্ডন করা হচ্ছে আর তাঁর সাহাবীরা তাঁকে ঘিরে আছে। তাঁরা চাইছিলেন তাঁর একটি চুলও যেন মাটিতে না পড়ে। বরং কারো না কারো হাতেই পড়ে। (সহীহ মুসলিম : ২৩২৫)।হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) মৃত্যুশয্যায় আয়েশা সিদ্দীকা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন : নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা (রা.) জানালেন, সোমবার। তিনি বললেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বললেন, হায় যদি আমার মওত রাতের আগেই হতো! (সহীহ বুখারী : ১৩৮৭)। ভালবাসার দৃষ্টান্ত দেখুন। আমার মৃত্যুও যেন হয় সে দিনে, যে দিনে প্রেমাস্পদের মৃত্যু হয়েছিল।হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) মৃত্যুশয্যায় বলেছেন : এই পৃথিবীতে আমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই-এর চেয়ে অধিক প্রিয় ও মহান আর কেউ নেই। আমার হৃদয়ে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার এ অবস্থা ছিল যে, আমি তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতাম না। আমাকে যদি তাঁর দেহাবয়বের বর্ণনা দিতে বলা হয়, আমি পারব না। কারণ, আমি দুচোখ ভরে তাঁকে দেখতে পারিনি। (সহীহ মুসলিম : ১৯২)।
হযরত জাবের (রা.) বলেন, উহুদ যুদ্ধের সময় রাতে আমার আব্বা আমাকে ডেকে বললেন : আমার প্রবল ধারণা, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গীদের মধ্যে আগেভাগেই শহীদ হবো। আর আমি তোমাকেই সবচেয়ে প্রিয় হিসেবে রেখে যাচ্ছি, তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া (কারণ, তিনিই আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়)। (সহীহ বুখারী : ১৩৫১)।এই উহুদ যুদ্ধেরই ভয়াবহ মুহূর্তে আরেক সাহাবী হযরত আবু তালহা (রা.) নিজে ঢাল হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন। একপর্যায়ে যখন নবীজী উঁকি দিয়ে দেখতে উদ্যত হলেন তখন আবু তালহা (রা.) বলে উঠলেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার মা-বাবা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি উঁকি দেবেন না; পাছে আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগে। আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত। (সহীহ বুখারী : ৩৮১১)।আরেক নারী সাহাবীর ঘটনা তো আরও বিস্ময়কর। উহুদ যুদ্ধেরই ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বনূ দীনারের এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যার স্বামী ও ভাই উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। লোকেরা যখন তাকে সমবেদনা জানাতে গেল তখন তিনি জানতে চাইলেন, নবীজী কেমন আছেন?। তারা বলল, ভালো আছেন আলহামদু লিল্লাহ। (তাতেও তাঁর মন শান্ত হল না। বললেনÑ) তবুও আমি নিজে দেখতে চাই; আমাকে দেখাও। অতঃপর যখন তাকে দেখানো হল তিনি বললেন : (আল্লাহর রাসূল, আপনি নিরাপদ আছেন!) আপনার (নিরাপত্তার) পরে সমস্ত বিপদ তুচ্ছ। (দালাইলুন নুবুওয়াহ, বায়হাকী : ৩/৩০২)।এরকম আরও বহু দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সাহাবায়ে কিরাম রিযওয়ানুল্লাহি তাআলা আলাইহিম আজমাঈন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীরাও নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবার হৃদয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দেন। তাঁর সুন্নাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করার তাওফীক দান করুনÑ আমীন।