রাসূল (সা.)-কে স্মরণ ও তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ খুবই বড় রকমের একটা পুণ্যকর্ম - Alokitobarta
আজ : সোমবার, ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ১০ জেলায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে নিয়ন্ত্রণ ঠিকাদারের হাতে,সোয়া ১২ কোটি ভোটারের তথ্যভান্ডার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নীতি সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিরোধহীন হারে শুরু বাংলাদেশের সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শিশুদের সুন্দর বিকাশ নিশ্চিত করতে সবার প্রতি আহ্বান মানবিক ও সুন্দর বিশ্ব গড়তে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের বিকল্প নেই অতিরিক্ত ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৩০ কর্মকর্তাকে বদলি দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণও লাফিয়ে বাড়ছে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান গ্রেফতার

রাসূল (সা.)-কে স্মরণ ও তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ খুবই বড় রকমের একটা পুণ্যকর্ম


আলোকিত বার্তা:রাসূল (সা.)-কে স্মরণ ও তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ খুবই বড় রকমের একটা পুণ্যকর্ম। উল্লেখ করা বাহুল্য যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী মুসলমানের একটি স্পষ্ট চরিত্রবৈশিষ্ট্য, যা বহু শতাব্দী ধরে এই উম্মাহর মধ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে সক্রিয়।রাসূল (সা.)-এর প্রতি উম্মাহর পক্ষ থেকে মুহাব্বাতে এখনও কোনো পরিবর্তন আসেনি সত্য, কিন্তু ভালোবাসার প্রকৃতি বদলে গেছে। প্রথম সময়ের ভালোবাসা ও ভক্তির মধ্যে আমরা যা অবলোকন করি, সেই ভালোবাসা এখন ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করেছে। সাহাবীরা রা. ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, স্বতন্ত্র ধরনের মানুষ। তাঁরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর প্রত্যক্ষ সাহচর্য লাভ করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন রাসূল (সা.)-এর নিকট থেকে সরাসরি শিক্ষাপ্রাপ্ত। তাঁর সঙ্গে বহু জিহাদে অংশগ্রহণকারী। রাসূল (সা.)-এর সংগ্রামী মিশনে তাঁরাই ছিলেন সমর্পিত অগ্রসৈনিক, যারা হাসিমুখে জীবন কুরবানি করে দিয়েছেন এবং এমন কৃতিত্বের তাঁরা অধিকারী, যা তাঁদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত ও অনুগামী ও অনুসারী হিসেবে অক্ষয় পরিচিতি দান করেছে।সাইয়্যিদুনা মুসআব ইবনে উমাইর রা. ছিলেন এই সাহাবীদেরই অন্যতম। তিনি যখন মক্কার একজন যুবক-মুশরিক, তখন তিনি ছিলেন পোশাক-পরিচ্ছদে সর্বাপেক্ষা সুসজ্জিত এবং সর্বাধিক সৌন্দর্যসচেতন। তিনি যখন বহু মূল্যবান রেশমিবস্ত্র পরিহিত অবস্থায় উৎকৃষ্ট সুগন্ধি মেখে রাস্তা দিয়ে চলতেন পেছনে ছড়িয়ে পড়ত এক মুগ্ধকর সুবাস ও সৌরভ। তারপর এক নতুন ঘটনা। তিনি রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং রাসূল (সা.)-এর পয়গাম তাঁর হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করল।

তাঁর জীবন আমূল বদলে গেল। তাঁর স্নেহময়ী মুশরিক জননী তাঁকে ঘৃণা করতে শুরু করল। আর শুধু ঘৃণাই নয়, তাঁর ওপর শুরু হয়ে গেল চরম শাস্তি ও নির্যাতন। তিনি হয়ে গেলেন ধনাঢ্য থেকে ছিন্ন-মলিন বস্ত্র পরিহিত এক হতদরিদ্র ব্যক্তি। একদিন রাসূল (সা.) তাঁকে দেখলেন। দেখলেন, পুরাতন চামড়ার তালি দেওয়া শত ছিন্ন-বস্ত্র তাঁর পরিধানে এবং দেখলেন, কী কঠিন দুঃসহ জীবনই তাঁকে বরণ করে নিতে হয়েছে। তিনি রাসূল (সা.) বললেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি মক্কাতে এই যুবককে দেখেছি, তখন তার চাইতে সুদর্শন ও সৌন্দর্যবিলাসী ও উত্তম পরিচ্ছদশোভিত আর কেউ ছিল না। আর আজ শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-কে ভালোবাসতে গিয়ে সে তার জীবনের সকল আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যকে কুরবানি করে দিয়েছে।এই মুসআব রা. ছিলেন মদিনার আনসারদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম শিক্ষক এবং বদরযুদ্ধে মুহাজিরদের পক্ষ থেকে পতাকাবাহী। ওহুদ যুদ্ধে তিনি যখন শাহাদাত বরণ করেন তাঁর কাফনের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়ও ছিল না। কাপড়ের অভাবে ঘাস দিয়ে তাঁর শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে দেওয়া হলো। কোনো কোনো বর্ণনামতে রাসূল (সা.) তাঁর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ঈমানদারদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, যারা আল্লাহর কাছে তাদের কৃত অঙ্গীকার পরিপূর্ণরূপে পালন করেছে।’ (সূরা আল আহযাব : ২৩)।

এই ওয়াদা পালনকারীদের আরেকজন ছিলেন আনসারদের নেতা সাইয়্যিদুনা সা’দ ইবনে মুয়াজ রা.। আনসার যারা ছিলেন তাঁরা রাসূল (সা.) ও মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদের জন্য আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অচিরেই অন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হলো তাঁদের। তাঁরা কি বিপুল রণসম্ভারে সজ্জিত মক্কার বিরাট সৈন্যদলের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত? বদরযুদ্ধের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত সভায় সা’দ বিন মুয়াজ রা.-এর বলিষ্ঠ ঘোষণা এ রকমÑ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.), আমরা আপনার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছি, আপনার নবুওয়তের সত্যতা ও আপনার আনুগত্যের শপথ নিয়েছি।যে আল্লাহ তাআলা আপনাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, সেই আল্লাহর শপথ, আপনি যদি সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেন, আমরা তা-ই করব। আমাদের মধ্যে এমন একজনও নেই, যে পেছনে থাকবে।… হতে পারে আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্য দিয়ে আপনাকে এমন কিছু দেখাবেন, যা আপনার চোখে আনন্দ ও শীতলতা বয়ে আনবে।’

এমনি অপর একজন সাহাবী হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা.। তিনি একদিন তাঁর ভৃত্যকে একটি ঘোড়া কিনে আনার জন্য পাঠালেন। ভৃত্যটি তিন শত দিরহামে একটি ঘোড়া ক্রয়করত: অশ্ব বিক্রেতাকে মূল্য পরিশোধের জন্য গৃহে নিয়ে আসল। সাইয়্যিদুনা জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. ঘোড়াটিকে দেখার পর বুঝলেন বিক্রেতা ঘোড়াটির মূল্য কম চেয়েছে। তিনি জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি ঘোড়াটিকে চারশ’ দিরহামে বিক্রয় করবে?’ বিক্রেতা সম্মত হলো।

জারীর রা. বললেন, ‘পাঁচশ’ হলে কেমন হয়?’ মূল্যবৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া তিনি অব্যাহত রাখলেন এবং শেষ পর্যন্ত আট শত দিরহাম মূল্যে হযরত জারীর রা. ঘোড়াটি কিনে নিলেন। পরে তাঁর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, ‘ঘোড়াটির প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে বিক্রেতার সঠিক ধারণা নেই। আমি তাকে সঠিক মূল্য দিয়েছি মাত্র। কারণ আমি রাসূল (সা.)-এর কাছে অঙ্গীকার করেছি, আমি সর্বদা সকল মুসলমান ভাইয়ের কাছে অকপট ও শুভাকাক্সক্ষী থাকব।

Top