দুই মেরু এক হয়েও, সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
৭ দিনের মধ্যে ধ্বংস করতে নির্দেশ নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ নাজমুল হাসানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯৮ তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের লড়াইয়ের গল্প গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই.......অঙ্গীকার হওয়া উচিত পায়রা বন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলের কানেকটিভিটি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট নেওয়ার সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে চাকরি দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন বরিশাল বিমানবন্দর এরিয়া ভাঙ্গন রোধে কাজ করছে সরকার বিআরটিসির অগ্রযাত্রায় সাহসিক পদক্ষেপ,সাফল্যের মহাসড়কে অদম্য যাত্রা

দুই মেরু এক হয়েও, সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের কিছু মানুষ, যারা একেবারে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। আর কিছু আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই তথাকথিত বুদ্ধিবীজীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাইছেন। অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান, সবই এখন এক হয়ে গেছে। এই দুই মেরু এক হয়েও, সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কি আমাদের? মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,আজকে নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে,ভোটের অধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে,তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধভাবে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের ক্ষমতা দখলকারী, তাদের পকেট থেকে বের হওয়া যে রাজনৈতিক দল, তাদের কাছ থেকে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়। ভোটের অধিকারের কথা শুনতে হয়। যারা হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে মানুষের ভোট চুরি শুরু করেছিল, এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রত্যেকটা নির্বাচনই আমরা দেখেছি, কিভাবে জনগণের ভোট নিয়ে খেলা হয়েছে। বেশি দূর যাওয়া লাগবে না, ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরের নির্বাচন, সেই নির্বাচনে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল। পার্সেন্টেজে ভোট আমাদের বেশি ছিল, আমরা সিট পাইনি, কারণ আমি রাজি হইনি আমাদের দেশের গ্যাস অন্য দেশের কাছে বেচতে। তিনি বলেন, আজকে গ্যাসের জন্য হাহাকার, সেদিন যদি আমরা রাজি হতাম আর গ্যাস বিক্রি শুরু করতাম, তাহলে কি অবস্থা হতো? আমাদের কোনো ইন্ডাস্ট্রি চলত?

একটা দল যার কোনো মাথামুণ্ডু নাই : শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া কিন্তু সেই মুচলেকা দিয়েছিলেন। তিনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবেন। আমি শুধু এটুকু বলেছিলাম-‘আল্লাহতায়ালা জন বুঝে ধন দেন।’ খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রি করবে, গ্যাস পাবেই না। তাদের সময় কিন্তু কূপ খনন করে গ্যাসই পায়নি। আর ওদিকে তাদের দৃষ্টিও ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল-ক্ষমতায় যাবে লুটপাট করবে, পয়সা বানাবে, হাওয়া ভবন করে হাওয়া খাবে।

তিনি আরও বলেন, এখনো একটা দল যার কোনো মাথামুণ্ডু নাই। যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেও সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং দেশান্তরী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুবাধে সারাক্ষণ অনলাইনে শুধু নির্দেশ দেয়। সেই সিদ্ধান্তেরও ঠিক-ঠিকানা নাই। আজকে এরে বহিষ্কার করে, কালকে আবার তারে দলে ভেড়ায়। কালকে আবার ওরে বহিষ্কার করে, তাকে দলে ভেড়ায়।

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার তারা কে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অধীনে নির্বাচন করবে না। আমাদের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার তারা কে? যাদের জন্মই হয়েছে ভোট চুরির মধ্য দিয়ে, তারা আবার প্রশ্ন উঠায় কিভাবে? জনগণ বলুক। দেশের মানুষ তো ভোট দিয়েছে। তারা তো শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরে খুশি। এলাকায় এলাকায় কিছু সমস্যা হয় স্থানীয়ভাবে কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে যদি দেখি, ২০২৪ সালে যে নির্বাচনটা হয়ে গেল, এমন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কবে হয়েছে বাংলাদেশে? প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনেই লাশ পড়েছে। ভোট ব্যাক্স ছিনতাই হয়েছে। কিন্তু এবার তা হয়নি। আমরা জনগণের ভোট নিশ্চিত করেছি। ভোটের অধিকার মানুষের হাতে দিয়েছি।

মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা নিয়েই আমাদের পথচলা : শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা সেটা করতে পেরেছি, এটাই আমাদের সাফল্য। আমরা এক ধাপ উত্তরণও ঘটিয়েছি। তারপরও তাদের পছন্দ হয় না। আমরা এটুকুই বলব, জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই হচ্ছে আমাদের একমাত্র শক্তি। আরও কোনো শক্তি নেই। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা নিয়েই আমাদের পথচলা।

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের ফলেই দেশে জরুরি অবস্থা আসে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের ফলেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয় এবং ইমার্জেন্সি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম দিকে ভালো কথা বললেও পরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। তখন দেশের মানুষ বসে থাকেনি। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, নেতাকর্মী কাজ করেছে। আমাকের গ্রেফতার করার পর আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠন মিলে মাত্র ১৫ দিনে ২৫ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। অথচ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে আমার বিরুদ্ধে অন্তত এক ডজন মামলা দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ৫-৬টা মামলা দেয়। আমার প্রত্যেকটা মামলার কিন্তু তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি।

তথাকথিত বুদ্ধিবীজী অনবরত দেশের বিরুদ্ধে গিবত গাইছে : শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। এক বছর (উদ্বোধনের) এখনো হয়নি। এরই মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা টোল উঠেছে। বাংলাদেশ যে পারে, আমরা যে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন- ‘কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না।’ বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। এটা আমরা বিশ্ব দরবারে প্রমাণ করেছি।

উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূল মানুষকে লক্ষ্য রেখেই : শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এক ধাপ উপরে তুলব। আমরা দিন বদলের সনদ ঘোষণা দেই। আজকে দিন বদল ঘটেছে। সব সময় আমরা লক্ষ্য রেখেছি আমাদের তৃণমূল মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে। আজকে কেউ বলতে পারছে না গ্রামে দারিদ্র্য আছে, এখন বলে শহরে দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের হার শহরে বেড়ে গেছে, গ্রামে না। অথচ গ্রামের মানুষ এক সময় এক বেলা ভাত পেত না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। চিকিৎসা পেত না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। আমাদের উন্নয়নের সবকিছু তৃণমূল মানুষকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি।

বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকার রিপোর্ট লেখে কিন্তু নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরাইলে গণহত্যার বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করছে। এখানে আন্দোলনের সময় একজন মহিলা প্রফেসর, সে বলছে আমি ইউনিভার্সিটির প্রেফেসর। পুলিশ তাকে যেভাবে ধরে, হাত ধরে পিঠ মোড়া দিয়ে মাটিতে ফেলে, হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে গ্রেফতার করেছে। তারা ছাত্র-শিক্ষক, তাদের লাঠি ছিল না, আগুনও ছিল না, তারা পুলিশের প্রতি মারমুখীও ছিল না। তারপরও আমেরিকার পুলিশ যে আচরণ করেছে। এরপর সে দেশের মানবাধিকার কতটুকু আছে, সেটাই প্রশ্ন? কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেটা প্রশ্ন? অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে, সেটাই প্রশ্ন। বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকার রিপোর্ট লেখে কিন্তু নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না। তিনি আরও বলেন, তারা যে আচারণ করে, আমাদের পুলিশ তো তা করেনি। ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উলটো তারা বিএনপির হাতে মার খেয়েছে। তাদের যেভাবে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে, আজ যদি আমেরিকার একটা পুলিশকে গায়ে একটা দলের লোক হাত দিত তারা কি করত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাঙালি, পরপর কতজন মারা গেছে, সেখানে দুজন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি তার প্রতিবাদ জানাই। তারা সেখানে জীবন-জীবিকার জন্য গেছে। তাদের এভাবে হত্যা করতে হবে? ছোট বাচ্চারাও তাদের থেকে রক্ষা পায় না। একজন ব্যক্তি, যে হাঁটতে-চলতে পারে না, সে প্রেসিডেন্টকে কি বলেছে, সেজন্য তাকে ঘরে ঢুকে মেরে এসেছে। মায়ের সামনে বাচ্চা ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। কি জবাব দেবে? যারা মানবাধিকারের গীত গায় এবং বাংলাদেশের মানবধিকার খুঁজে বেড়ায় তারা কি জবাব দেবে। আমি সেই জবাব চাই। যারা আমাদের স্যাংশন দেয়, আমাদের উপরে খবরদারি করে, তাদের কাছে আমরা জবাব চাই। কেন বাঙালি মারা যাবে। তীব্র দাবদাপের মধ্যে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, প্রচণ্ড গরম। আমি দেশবাসীকে বলব একটু সাবধানে থাকতে হবে।
জীবন-জীবিকা তো চলবে, থেমে থাকবে না। তারপরও সবাইকে বেশি পানি খেতে হবে এবং সাবধানে থাকতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের বাহিরেও একই অবস্থা। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ে বৃষ্টি হবে। সবাইকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। সূচনা বক্তব্যের পর শুরু হয় রুদ্ধদ্বার আলোচনা। এ সময় শোক প্রস্তাব পাঠ এবং দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্তের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Top
%d bloggers like this: