অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট আ’লীগ নেতাদের কবজায় - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ
বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি কাজ শেষ করার তাগিদ স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ১২৬ কোটি টাকা লেনদেন,ছোট কর্মকর্তার বড় দুর্নীতি ৭ দিনের মধ্যে ধ্বংস করতে নির্দেশ নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ নাজমুল হাসানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯৮ তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের লড়াইয়ের গল্প গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই.......অঙ্গীকার হওয়া উচিত পায়রা বন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলের কানেকটিভিটি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট আ’লীগ নেতাদের কবজায়


মোহাম্মাদ নাসির উদ্দীন :ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকায় এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড ইউনিট আওয়ামী লীগ সভাপতি আসফাক আজিম। এই হাটের শিডিউল আসফাক আজিম একাই ক্রয় করেন এবং জমা দেন। পুরান ঢাকার ৯ কাউন্সিলর আর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি তিনি। প্রতিবছরের মতো এবারও এই সিন্ডিকেট নির্ধারণ করে দিয়েছে কে পশুর হাটের ইজারা নেবে।শুধু এ হাটই নয়, ডিএসসিসির অধীনে প্রতিটি হাটের ইজারা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ধোলাইখাল ট্রাক স্ট্যান্ডের উন্মুক্ত জায়গায় হাটের ইজারা দেওয়া হলেও এর পরিধি রায়সাহেব বাজার, দয়াগঞ্জ, মুরগিটোলা থেকে লোহারপুল এলাকাও ছড়িয়ে যায়, যা ৯ কাউন্সিলরের এলাকার সীমানার মধ্যে পড়ে। আগে দুটি হাটের ইজারা স্থানীয় কাউন্সিলররা ভাগাভাগি করে নিতেন। এখন এই ৯ কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা একটি হাট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইজারা নেন।

এ বছর ধোলাইখাল হাট ইজারার সঙ্গে আছেন স্থানীয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর ছেলে ইমতিয়াজ মন্নাফী, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজি সারোয়ার হোসেন, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদউল্লাহ মিনু এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। হাটটি ইজারার সরকারি দর ছিল ৩ কোটি ৯১ লাখ, ইজারা হয়েছে ৪ কোটি ৩ লাখ টাকায়।

৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন,গত বছর আমি পশুর হাটের মধ্যে ছিলাম না।কিন্তু এ বছর ৯ কাউন্সিলর আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে হাট নেওয়া হয়েছে। ইজারাদার আমাদের ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সারোয়ার হোসেন আলোর বন্ধু।ডিএসসিসি এলাকায় পশুর হাটের ইজারাপ্রাপ্তদের তালিকায় দেখা গেছে, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর হামিদুল হক। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। এই হাটটি গত সাত বছর ধরে শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল লতিফ ইজারা নেন।কিন্তু এ বছর তিনি হজে যাবেন বলে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সাবেক কাউন্সিলরের নামে হাটের ইজারা নেওয়া হয়েছে। নামমাত্র দরপত্রে অংশ নেন আব্দুল লতিফ। তবে এই হাটটি বরাবরের মতো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘হজে যাওয়ার কারণে এ বছর হাটটি নিজের নামে নেওয়া হয়নি। তবে হাটের সঙ্গে আমরা আছি।’

লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন মোহাম্মদ সালমান সেলিম আশিক। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাজী সেলিমের ছেলে। ঢাকা-৭ আসনের এমপি সোলায়মান সেলিম চারবার এ হাটের ইজারা পেয়েছিলেন। হাটটির সরকারি মূল্য ছিল ৫০ লাখ ২৯ হাজার টাকা। সালমান সেলিম ইজারা মূল্য দিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবু সাঈদ। হাটটির সরকারি মূল্য ২ কোটি ৩৬ লাখ ও ইজারা মূল্য ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ-সংলগ্ন এলাকা ইজারা পাচ্ছেন থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত। হাটটির সরকারি মূল্য ৩ কোটি ৩১ লাখ ও ইজারা মূল্য ৬ কোটি ৬ লাখ টাকা।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসহ আশপাশের খালি জায়গায় হাটের দরপত্র আহ্বানে মাত্র দু’জন অংশ নেন। তবে শিডিউল বিক্রি হয়েছিল তিনটি। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা পেতে যাচ্ছেন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মইন উদ্দিন চিশতী। কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড-সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা পাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম। হাটের সরকারি মূল্য ৬৭ লাখ ৩১ হাজার টাকার বিপরীতে তিনি সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ৬৮ লাখ টাকা।

আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছেন এস এম নেওয়াজ সোহাগ। তিনিও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে যুক্ত। হাটটির সরকারি মূল্য ৪৫ লাখ টাকা আর ইজারা মূল্য ৫৬ লাখ টাকা। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গার জন্য এ বছর তিনটি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা দিয়েছেন শুধু আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান। তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর, সংসদ সদস্য আর আওয়ামী লীগ নেতাদের সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি। হাটটির ইজারা মূল্য ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এ বছর ডিএসসিসি ১১টি কোরবানি পশুর হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়।এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম পর্যায়ের দর আহ্বান হয়েছিল। এতে ৯টি হাটের ইজারার উন্মুক্ত দরপত্র করা হয়। বাকি দুটি হাটের মধ্যে লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব-সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম-সংলগ্ন বিশ্ব রোডের আশপাশের খালি জায়গায় কেউ কোনো শিডিউল কেনেনি। তবে এ হাটটি বরাবরের মতো ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন-১ ও ২-এর খালি জায়গায় দুটি শিডিউল বিক্রি হলেও কেউ জমা দেয়নি। আগামী ১৩ ও ২৮ মে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্র আহ্বান করা হবে।

কোরাবানি পশুর হাট বরাবরের মতো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে কিনা এমন প্রশ্নে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন,দরপত্র আবেদন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করে দিয়েছি। শিডিউল বিক্রি হয়েছে সংখ্যায় বেশি।তবে সবাই দরপত্র জমা দেননি। এটি প্রথম পর্যায়।আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব।প্রয়োজনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়েও দরপত্র নেওয়া হবে।

Top
%d bloggers like this: