বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ঢাকার নেতৃত্ব দিতে ভারত যাচ্ছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদঃ

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ঢাকার নেতৃত্ব দিতে ভারত যাচ্ছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী


মু এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া :এক যুগেরও বেশি সময় পর বৈঠকে বসছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি)। দীর্ঘ এক যুগ পর অভিন্ন নদী পানি বন্টন প্রশ্নে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ কমিশন। ভারতের নয়া দিল্লিতে জেআরসির বৈঠকে প্রথম দিন হবে সচিব পর্যায়ের আলোচনা।আগামী ২৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এতে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি এবং দিল্লির পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন জল শক্তি উন্নয়ন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। এরপরই আসবে যৌথ ঘোষণা পত্র।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি জানান , সিলেটের রহিমপুর খাল খননের মাধ্যমে কুশিয়ারা থেকে পানি ভাগাভাগিতে দিল্লির সম্মতি মিলেছে। একই সাথে ফেনী নদী থেকে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে পানি বন্টনে আপত্তি নেই ঢাকার।আনুষ্ঠানিক ঘোষনা আসবে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তে। আর এ নিয়ে চুক্তি সই হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে।এছাড়া ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তি শেষ হতে বাকী আর ৪ বছর , তা নবায়নের আগে চুলচেড়া বিশ্লেষণ হবে জিআরসি বৈঠকে। দু’দেশই এতে কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন চায় বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।আর অভিন্ন ৬(ছয়) নদীর পানি বন্টনের আগে উজানে ভারত কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কিনা-এ প্রশ্নের সাড়া মেলেনি দিল্লির।তবে তিস্তা চুক্তি দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে বলে জিআরসি বৈঠকেও চাপ বহাল রাখবে ঢাকা। এছাড়া অভিন্ন ৫৪ নদীর ব্যবস্থাপনায় তথ্য আদান প্রদান সহ ভারতকে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। জেআরসি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নয়াদিল্লি সফরের কথা রয়েছে। ওই বৈঠককে সামনে রেখে জেআরসিতে কুশিয়ারা নদীর বিষয়ে সমাধানে পৌঁছাতে চায় ঢাকা। প্রধানমন্ত্রীর সফরে আনুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশ কুশিয়ারা নদীর পানি রহিমপুর খাল দিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহার শুরু করার পর ভারতকে প্রতিদিন ফেনী নদীর ১.৮২ কিউসেক পানি দেবে। ২০১৯ সালে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী , ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সরবরাহ করা হবে , যাতে সেখানে পানীয় জলের প্রয়োজন মেটানো যায়। গঙ্গা নদীর ওপর অবকাঠামো নির্মাণ এবং বছর চারেক পরে শেষ হতে যাওয়া গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তির মেয়াদ সময়ভিত্তিক না করার বিষয়েও আলোচনা করবে ঢাকা। অন্যদিকে ছয়টি অভিন্ন নদী নিয়ে আলোচনা হবে। আর নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে গুরত্ব দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে।ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমতে থাকার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা চুক্তি হয়।কূটনৈতিক সূত্র বলছে , তিস্তা ও গঙ্গা কিংবা ছয়টি অভিন্ন নদীর বাইরে সাম্প্রতিক বর্ষায় দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা প্রসঙ্গও থাকবে আলোচনার টেবিলে। গত জুন-জুলাই মাসে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও তার সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে ব্যাপক বন্যার ঘটনা আমলে নিয়ে এ ধরনের দুর্যোগ প্রতিরোধে যৌথভাবে কাজ করতে চাইবে যৌথ নদী কমিশন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন , দীর্ঘ সময় বিরতির পর জেআরসি হচ্ছে। প্রায় ১২ বছর পর হতে যাওয়া বৈঠকটি নয়াদিল্লিতে হবে। আগামী ২৩ আগস্ট পানিসচিব পর্যায়ে এবং একদিনের বিরতি দিয়ে ২৫ আগস্ট মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে কুশিয়ারা , তিস্তা সহ ছয়টি অভিন্ন নদী আসবে। মোটা দাগে দুই দেশের পানি সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো আলোচনায় আসবে। আশা করা যায় হয়তো অগ্রগতি আসবে , আবার কোনো ইস্যুতে অগ্রগতি নাও আসতে পারে।যৌথ নদী কমিশনের তথ্য বলছে , নয়াদিল্লিতে জেআরসি বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি এবং নয়াদিল্লির পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত।

Top
%d bloggers like this: