ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ‘কেমন সিটি চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক।
আলোকিত বার্তা:ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ‘কেমন সিটি চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক। বৈঠকে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মেয়রপ্রার্থীরা অংশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি নগর পরিকল্পনাবিদসহ সুশীল সমাজের মানুষ কেমন মেয়র চান, সে বিষয়ে তাদের প্রত্যাশাও তুলে ধরা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ‘কেমন সিটি চাই’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মো. খান প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা একটি অপরিকল্পিত শহর। এখানে সব কিছু সুন্দরভাবে গড়ে তোলা একটি চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের হাল ছাড়লে চলবে না। আমাদের সবাইকে এক সাথে নিজ নিজ জায়গা থেকে এ শহরের জন্য কাজ করতে হবে। সুন্দর নগরী উপহার দিয়ে যেতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়ী থেকে যাব। তারাই আমাদের বলবে, তাদের জন্য এ কেমন শহর আমরা তৈরি করেছি।তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিভিন্ন রকমের সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আগে চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। স্থানীয় সমস্যা আগে সমাধান করে এরপর পুরোটা মিলে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। গুলশানে এক ধরনের নাগরিক সমস্যা, আবার মোহাম্মাদপুর মিরপুর এলাকায় ভিন্ন ধরনের সমস্যা। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে সেই নির্দিষ্ট স্থানের সমস্যা আগে চিহ্নিত করে সমাধান করলে কার্যকারী উদ্যোগ হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে, নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আওয়াল বলেন, আমরা এমন একটা ঢাকা চাই যেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে, জনগণকে প্রাধান্য দিয়ে সকল ধরনের কাজ করতে হবে। যিনি মেয়র হবেন, উনাকে এসব বিষয় মাথায় রেখে ঢাকা নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন জোন বা ওয়ার্ডগুলোর সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান জরুরি।বৈঠকে আলোচনা অংশ নেয়া অন্য মেয়র প্রার্থীরা বলেন, আমাদের সবার প্রত্যাশা একটি আধুনিক ঢাকা শহর দেখতে চাই। তবে প্রথমেই চলে আসে নির্বাচনের কথা। বিগত নির্বাচনের কথাগুলো মনে করলে আমরা এখনও ভালো কিছু আশা করতে পারছি না। তবে আশা ছাড়িনি, আমাদের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আর সেখানে যিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবেন তিনি ঢাকা শহরের যানজট, দূষণ, খাদ্য ভেজালের মত বিষয়গুলোর প্রতি প্রথমেই নজর দিয়ে সমাধান বের করতে হবে।নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মো. খান বলেন, একজন মেয়রের পক্ষে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। যিনি মেয়র হবেন তাকে একাধারে শিশু, শিশুর মায়ের, বৃদ্ধ থেকে রিকশা চালকের নগর কেন্দ্রিক সমস্যার কথায় নজর দিতে হবে। পাশাপাশি তাদের চাহিদা মত সমাধান যিনি দিতে পারবেন তেমন মেয়রকেই জনগণ চান।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় সমস্যাগুলো ভেঙে ছোট ছোট সমাধান করতে হবে। রাতারাতি সব পরিবর্তন হয়ে যাবে না, তবে উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে। এত বড় ঢাকার জন্য চাই ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা। শাখা প্রশাখা থেকে যখন সমস্যা সমাধান হতে থাকবে তখনই সেন্ট্রালি সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, একজন সাধারণ নগরবাসী প্রাত্যহিক জীবনে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন সেই সমস্যা যদি একজন মেয়র সমাধানের উদ্যোগ নেন তবেই জনগণ উপকৃত হবে। এমন মেয়রই কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেন। যানজট, দূষণ, নিরাপত্তাহীনতা নগরবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যা, এটা সমাধানের উদ্যোগ যিনি নেবেন সাধারণ মানুষ সেই মেয়রকেই চাইবে।আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঢাকা শহর পোস্টারে ছেয়ে গেছে, এগুলোতে আপনারা নজর দিচ্ছেন না। সাধারণ নাগরিকদের নানা সমস্যা আপনারা সমাধান করছেন না। এই ধরুন মহাখালী রেল ক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে বাসগুলো যাত্রী তুলছে। এসব সমস্যার সমাধান আপনারা করতে যদি না পারেন তাহলে বড় বড় কথা বলে মেয়র হয়ে লাভ কী? আপনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে, সৎ সাহস থাকলে একজন মেয়র হিসেবে আপনার এসব নাগরিক সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ আপনাকে আগে নিতে হবে। এমন মেয়রই চায় জনগণ, যিনি নাগরিক সমস্যার সমাধান করবেন।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন বলেন, একজন মেয়রকে প্রথমে ব্যবস্থাপনা কৌশল জানতে হবে এবং সামাজিক উদ্ভাবক হতে হবে। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে, যদি মানুষের কল্যাণে না আসে তাহলে চার লেনের রাস্তা করে কী লাভ? কোনো কাজ করতে হলে সেই এলাকার মানুষ বা সম্পৃক্ত সবার সঙ্গে আলোচনা পরামর্শ এবং তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্যোগ নিতে হবে।